X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাতির জায়গায় বাতি জ্বলে, ইশারায় গাড়ি চলে

ওমর ফারুক
২১ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৭:২৮আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০১৫, ২১:১৭

DSC_0039 শনিবার বিকাল সোয়া চারটা। রাজধানীর শেরাটন মোড়ের পূর্বমুখী ট্রাফিক সিনগ্যালে লালবাতি জ্বলছে। কাকরাইল থেকে যাওয়া শতাধিক যানবাহন তখন সিগন্যাল পার হওয়ার অপেক্ষায়। জ্বলে থাকা লালবাতির পাশে সময়ের কাউন্টডাউন চলছে। প্রতি সেকেন্ড হিসেবে কমছে লাল বাতির মেয়াদ। ৬০, ৫৯, ৫৮… এভাবে ক্রমেই শূন্যের দিকে এগুচ্ছে লালবাতি।

কিন্তু এই কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার আগেই ৪০ সেকেন্ড বাকি থাকতে ট্রাফিক সার্জেন্ট আসকরী তার অধীনস্থ দুই কনস্টেবলকে ইশারা দিলেন শাহবাগ ও বাংলামটর প্রান্ত দিয়ে গাড়ির চলাচল থামিয়ে দিতে। আর সামনে দাড়ানো অপর কনস্টেবলকে বললেন লালবাতিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ছেড়ে দিতে।

সার্জেন্টের এই নির্দেশনার পর কাকরাইল থেকে আসা যানবাহন লালবাতি উপেক্ষা করে চলতে শুরু করে। আর বাংলামটর ও শাহবাগ থেকে আসা যানবাহন সবুজবাতি জ্বলা অবস্থায় দাঁড়িয়ে যায়।

কোটি কোটি টাকায় স্থাপিত এই আধুনিক সিগন্যাল বাতিকে অগ্রাহ্য করা শুধু শেরাটন মোড়ে নয়, সেনানিবাস ছাড়া নগরীর সবখানে একই দৃশ্য দেখা যায়। বাতির জায়গায় বাতি জ্বলে, হাতের ইশারায় গাড়ি চলে। শুধু তাই নয়, অনেক মোড়ে চালকরা সুযোগ পেলে নিজেদের ইচ্ছামতো গাড়ি চালায়। এই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ থেকে বাদ পড়ছেন না মন্ত্রী-এমপি ও সাংবাদিকরাও। নগরীতে যানজটের এটাই সবচে বড় কারণ বলে মনে করেন নগর বিশেষজ্ঞরা। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর।

কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? এমন প্রশ্ন করা হলে শেরাটন মোড়ের ট্রাফিক সার্জেন্ট আসকরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মোড় দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ হাজার গাড়ি চলাচল করে। সড়কের ধারণ ক্ষমতার চাইতে এটা অনেক বেশি।

তিনি বলেন, প্রায় সময়ই দেখা যায়, সড়কের একদিকে গাড়ি কম, অন্যদিকে অনেক বেশি। এ ছাড়া অন্যান্য সিগন্যালও ঠিক মতো চলে না। এ অবস্থায় সিগন্যাল মানলে ঝামেলা হয়ে যায়। তাই ঝামেলা এড়াতে সিগন্যালের কাউন্টডাউন শেষ হওয়ার আগেই যে সড়কে বেশি গাড়ি থাকে সেই সড়কের গাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। এভাবেই আমাদের সমন্বয় করতে হচ্ছে।

বিশ্বের উন্নত দেশ ও নগরীতে পরিবহন ব্যবস্থা অটোমেটিক সিগন্যাল নির্ভর হয়েছে বহু বছর আগে। এর অনুকরণে নব্বই দশকে ঢাকা মহানগরীতে অটোমেটিক সিগন্যাল সিস্টেম প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় সরকার তথা ঢাকা সিটি করপোরেশন। সেই থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সিগন্যাল বাতি-পোস্ট স্থাপনের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সিগন্যাল বাতি চালু রাখতে বছরে ব্যয় হচ্ছে কোটি টাকার কাছাকাছি।

সিগন্যাল বাতির রক্ষণাবেক্ষণকারী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ (কেস) প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. শিহাবউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা সিগন্যাল বাতি স্থাপন করে দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে কোন বাতি কতক্ষণ জ্বলবে সেটাও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু সমস্যা আছে, সেগুলো ঠিক করে দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সিগন্যাল কার্যকর করার দায়িত্ব ট্রাফিক পুলিশের।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম-কমিশনার মো. মোসলেহউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটি করপোরেশন একটা প্রজেক্টের আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিগন্যাল বাতির অটোমেশনের কাজ চলছিল। কাজ শেষে তারা এক্সপেরিমেন্ট করে। আমরাও তাদের সহযোগিতা করি। এক্সপেরিমেন্টে ওগুলো কার্যকর হয়নি। এরপর নতুন করে তারা কাজ করছে। পরবর্তী সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট এখনও হয়নি। এই সিস্টেম ডেভেলপ করে যেটা আমাদের জন্য উপযোগী হবে সেটাই উনারা করে দেবেন। এখনও এক্সপেরিমেন্টাল কাজ চলছে। ফাইনাল স্টেজে আসেনি।

প্রকৌশলী মো. শিহাবউল্লাহ জানান, ২০০২-০৩ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পের আওতায় মহানগরীর ৭০টি পয়েন্টে আধুনিক সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। এগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় পড়েছে ৩০টি এবং ঢাকা দক্ষিণে ৪০টি। এ কাজে ব্যয় হয় প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

তিনি বলেন, লোডশেডিং ও বৈদ্যুতিক সমস্যার কারণে এই সিগন্যালগুলো ভালোভাবে কাজ করতে পারেনি। ফলে ২০১৩ সালে আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। ১৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৬২টি পয়েন্টের সিগন্যালে সোলার সিস্টেম, টাইমার, কনভার্টার ইত্যাদি স্থাপন করা হয়। এর পাশাপাশি আরও ৩০টি পয়েন্টে নতুন সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী জুনে এ কাজ শেষ হবে।

জানা গেছে, ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা যাতে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায় সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি ‘সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট’ গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিগন্যাল বাতি সংক্রান্ত একটি কমিটি। এই কন্ট্রোল ইউনিটের প্রধান হলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ)। সদস্য হিসেবে রয়েছেন কেস প্রকল্পের পরিচালকসহ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ডিএমপি, বিআরটিএ এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি।

সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিটে জনবল নিয়োগ ও বাজেট নিয়ে আলোচনা চলছে। কমিটির সদস্য প্রকৌশলী মো. শিহাবউল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিটে বসে পুরো ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো মনিটরিং করা হবে। অত্যাধুনিক মেশিন থাকবে এ ইউনিটে। এজন্য প্রায় তিন’শ কোটি টাকা চাওয়া হবে বিশ্বব্যাংকের কাছে।

কেস প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান জানান, যেসব পয়েন্টে আধুনিক সিগন্যাল কার্যকর আছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: শেরাটন মোড়, বাংলামটর, সোনারগাও হোটেলের সামনে ক্রসিং, জিরো পয়েন্ট, পল্টন মোড়, বিজয়নগর, কাকরাইল মোড় ও মসজিদ মোড়, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেইট, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে, ফার্মগেইট, কাকলী, মহাখালী রেলগেট ও আমতলী, নাবিস্কো, নিউমার্কেট সংলগ্ন নীলক্ষেত মোড়, সাইন্সল্যাব, কলাবাগান, রাসেল স্কয়ার, ধানমন্ডি-২৭, মানিকমিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম প্রান্ত আড়ং প্রভৃতি।

মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের জন্য তেজগাও শিল্প এলাকার সাতরাস্তা, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ রেলক্রসিং ও চৌরাস্তা, শান্তিনগর- এ ছয়টি পয়েন্টে ট্রাফিক সিগনাল বন্ধ রয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার সরেজমিন গিয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে সিগন্যাল বাতি জ্বলতে দেখা যায়নি। এখানে যান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুরোটাই ট্রাফিক পুলিশের হাতের ওপর নির্ভরশীল। জিরো পয়েন্ট মোড়ে কয়েকটি বাতি জ্বললেও টাইম কাউন্টডাউনের ব্যবস্থা নেই।

প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান খান বলেন, আরও ৩০টি পয়েন্টে নতুন সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এগুলোর কাজ শেষ হবে আগামী বছর জুনে।

যেসব স্থানে সিগন্যাল বাতি স্থাপনের কাজ চলছে সেসব পয়েন্টের মধ্যে রয়েছে দৈনিকবাংলা মোড়, আরামবাগ, মতিঝিল সিটি সেন্টারের সামনে জনতা ব্যাংক মোড়, টয়েনবি সার্কুলার রোড (পীরজঙ্গী মাজার সড়কের পশ্চিম প্রান্ত), রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতাল, রমনা থানার সামনে, বেইলি রোড (অফিসার্স ক্লাবের সামনে), উত্তরা জসিমউদ্দিন রোড, হাউজ বিল্ডিং, আবদুল্লাহপুর, বনানী-১১ (চলন্ত সিড়ির কাছে), বনানী মাঠের কোণে (সড়ক-২৭), বনানী কবরস্থান, মিরপুর-১৪ (ডেন্টাল কলেজ মোড়), মিরপুর-৬ নম্বর সেকশনের প্রশিকা মোড়, শিয়ালবাড়ী, গুলশান লিংক রোড (প্রগতি সরণী), মালিবাগের আবুল হোটেল মোড়, চৌধুরীপাড়া কমিউনিটি সেন্টার, ঝিগাতলা মোড়, ধানমন্ডি-২৭ ও ১৫।

/এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
পাঞ্জাবের আশুতোষের ঝড়ও যথেষ্ট হলো না, মুম্বাইয়ের তৃতীয় জয়
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
দুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টিদুই বলের ম্যাচে জিতলো বৃষ্টি!
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন