X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়া সংগ্রহ ও আয় দুটোই কমেছে কওমি মাদ্রাসাগুলোর

আদিত্য রিমন
০৩ আগস্ট ২০২০, ০০:৩৩আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২০, ১৪:৪৮

চামড়া সংগ্রহ ও আয় দুটোই কমেছে কওমি মাদ্রাসাগুলোর অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানির পশুর চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে রাজধানীর কওমি মাদ্রাসাগুলোর। তারা বলছেন, করোনার কারণে দেশে যেমন কোরবানি দাতার সংখ্যা কমেছে, তেমনি বিভিন্ন কারণে কাঁচা চামড়াও কম সংগ্রহ হয়েছে। আবার গত কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কমার ধারাবাহিকতায় এই বছর আরও দাম কমেছে। এমনিতে করোনার কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় মাদ্রাসাগুলোর অনুদানও কমেছে। এর মধ্যে কোরবানির চামড়া সংগ্রহের এই খাত থেকে আয় আরও বেশি কমার ফলে দেশের গরিব শিক্ষার্থীদের কওমি মাদ্রাসাগুলোর অর্থনৈতিক সংকট বাড়বে। 

কওমি মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো চলে সাধারণ মানুষের জাকাত, অনুদান ও কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করে। দেশে নূরানী, হাফেজি মিলিয়ে সারাদেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি। এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮ লাখের মতো। আর শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। মাদ্রাসার অধিকাংশ ছাত্র গরিব পরিবারের সন্তান এবং ৯৯ শতাংশ ছাত্র আবাসিক। গরিব ছাত্রদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয় মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং থেকে। সারা বছর লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের খরচের ৩ থেকে ৫ মাসের অর্থ আসতো চামড়া বিক্রির আয় থেকে। কিন্তু গত কয়েক বছর চামড়ার অব্যাহত দরপতনে কওমি মাদ্রাসাগুলো কিছুটা সংকটে পড়েছিল। আর এই বছর চামড়া সংগ্রহও হয়েছে কম, আবার গত বছরের চেয়ে আরও দাম কমেছে। সব মিলিয়ে দেশের কওমি মাদ্রাসার অর্থ সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সরকার এগিয়ে না আসলে এসব মাদ্রাসার টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।

দারুল উলুম রামপুরা বনশ্রী মাদ্রাসা প্রিন্সিপাল মাওলানা ইয়াহিয়া মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কোরবানির পশুর চামড়ার দাম কমে যাওয়া কওমি মাদ্রাসার জন্য সাংঘাতিক হতাশাজনক। করোনার কারণে মাদ্রাসা কিতাব বিভাগ বন্ধ রয়েছে। তারপরও ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে ৪২০টি গরুর চামড়া সংগ্রহ করেছি। ৫২০ টাকা ধরে বিক্রি করে দিয়েছি। গত বছর এর চাইতে বেশি চামড়া সংগ্রহ করেছি এবং দামও বেশি ছিল।  

একসময় চামড়া বিক্রির অর্থ দিয়ে কওমি মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ৫ মাসের খরচ চলতো বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, যখন চামড়ার মূল্য ২ হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত ছিল, তখন আমাদের ছোট মাদ্রাসায় ৫শ’ চামড়া সংগ্রহ করতে পারলে আড়াই হাজার করে বিক্রি করলে সাড়ে ১২ লাখ টাকা আয় হতো। তা দিয়ে অত্যন্ত ৩ থেকে ৪ মাসের লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ব্যয়টা হয়ে যেতো। আর বড় মাদ্রাসাগুলোর চামড়া আয় দিয়ে ৪ থেকে ৫ মাস লিল্লাহ বোর্ডিং চালানোর ব্যবস্থা হয়ে যেতো। এছাড়া রমজানের জাকাত সংগ্রহ, বিভিন্ন সময় মানুষ দানের আয় দিতে অন্যান্য মাস চলে যেতো। বড় কথা হচ্ছে কোরবানির চামড়ার বড় একটি ভূমিকা ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর চামড়া সংগ্রহ করে মাদ্রাসার খুব একটা লাভ হয় না। কারণ এই কাজে ছাত্র ও শিক্ষকদের যে পরিমাণ শ্রম দিতে হয়, ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়, তার হিসাবটা করলে কাজটা করাটা অযৌক্তিক। কেবল মাত্র জনসম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখার জন্য এখন আমরা চামড়া সংগ্রহ করি। কারণ জনগণ সারা বছর আমাদের পাশে থাকে, কোরবানির চামড়ার দাম কম বলে তাদের পাশে থাকবো না, এটাকে আমরা অন্যায় মনে করি।

গত বছরের তুলনায় এবারে ৩শ’র মতো চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে বলে উল্লেখ করে জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামপুর চকবাজার মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মনঞ্জুরুল ইসলাম আফিন্দি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই বছর সাড়ে ৯শ’র মতো চামড়া সংগ্রহ করেছি। বিভিন্ন কারণে এবার কোরবানি কম হয়েছে, চামড়া সংগ্রহ কম হয়েছে। আমাদের সঙ্গে একটা ট্যানারির চুক্তি আছে, তাদের এইগুলো দিয়েছি। এক সপ্তাহ পরে দেশের মার্কেট যাচাই করে দাম নির্ধারণ হয়।   

তিনি বলেন, গত ৫ বছর আগেও আমরা একটা চামড়া তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত বিক্রি করতাম। আর এখন সেটা ৫শ’ টাকায় বিক্রি করতে কষ্ট হয়। কওমি মাদ্রাসার গরিব ছাত্রদের ব্যয় নির্বাহ করা হয় জাকাত ও কোরবানির চামড়ার আয় থেকে। চামড়ার অব্যাহত দাম কমার ফলে দৃশ্যমান সংকটে পড়বে কওমি মাদ্রাসাগুলো। আল্লাহ নিশ্চয় একটা ব্যবস্থা করবেন।  

বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া বলেন, সঠিক বলতে না পারলেও নূরানী, হাফেজি মিলিয়ে দেশে ১৫ থেকে ২০ হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৮ লাখের মতো হতে পারে। শিক্ষক সংখ্যা ৪ থেকে ৫ লাখ। কওমি মাদ্রাসার ছাত্রই ৯৯ শতাংশ আবাসিক।   

তিনি আরও বলেন, করোনার বিরূপ প্রভাব আমাদের দেশেও ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই পড়েছে। কওমি মাদ্রাসাগুলো আবাসিক প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মুসলমানদের সাহায্য-সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে থাকে। যেহেতু দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য করোনার প্রভাব পড়েছে, সেই অনুযায়ী মাদ্রাসাগুলোর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। অর্থনৈতিক চাপ বাড়ছে। দেশের স্বাভাবিক অবস্থা থাকলে তো এই চাপটা পড়তো না।

দেশে  অন্যান্য বছরের তুলনায় কোরবানি কম হয়েছে বলে উল্লেখ করে মাওলানা জাকারিয়া বলেন, মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্র-শিক্ষক না থাকার কারণে চামড়া যেভাবে সংগ্রহ করার দরকার ছিল, সেভাবে সংগ্রহ করতে পারে নাই। একদিকে চামড়ার সংগ্রহ কম, অন্যদিকে দরপতন। সব মিলিয়ে এর প্রভাব পড়ছে কওমি মাদ্রাসাগুলো ওপর।

কওমি মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করার কোনও মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবে বছর-বছর দাম কমানো হচ্ছে। এখানে ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কারসাজি আছে। সরকারের উচিত তা তদন্ত করে দেখা।  মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই শিল্পকে ধ্বংস করার মাস্টার প্ল্যানের করা হয়েছে গত ৫ বছরে। তাই অব্যাহত চামড়ার দাম কমছে। কই, চামড়ার ব্যাগের দাম তো কমে না, জুতার দাম তো কমে না। তাহলে চামড়ার দাম কেন কমছে বছর-বছর। 

অব্যাহতভাবে চামড়ার দরপতন কওমি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র চামড়া ব্যবসায়ীদের বলে মনে করেন মাওলানা ইয়াহিসা। তিনি বলেন, চামড়াজাত সবকিছুর অগ্নিমূল্য, গরুর অগ্নিমূল্য, যে কসাই দিয়ে গরু বানানো হয় তার দামও আকাশচুম্বী। শুধু মাত্র চামড়া দামের ক্ষেত্রেই আসলে মনে হয়, এটা পানিতে ফেলে দেওয়া বা দাফন করে ফেলা দরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মাওলানা বলেন, মূলত সরকার চামড়া মার্কেটটাকে কিছু লোকের হাতে তুলে দিয়েছে। এ সুযোগটাই ট্যানারি মালিকরা সহজেই সিন্ডিকেট করে পানির দরে চামড়া কেনার সুযোগ নিচ্ছে।

/এমআর/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
নির্মাণাধীন ভবনমালিকদের মেয়র তাপসের হুঁশিয়ারি
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি তেভেজ
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
চিকিৎসা-খাদ্য-কৃষি সরঞ্জামের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে ঢাকায়
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…