X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছিলেন যে কণ্ঠযোদ্ধারা

উদিসা ইসলাম
২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, ১২:৪৮আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫, ১৫:১৪

‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ বলতেই আমাদের চোখে জর্জ হ্যারিসন ও রবি শঙ্করের একাত্তরকে সম্মানিত করার চিত্র ভেসে ওঠে। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় মানেই স্বাধীন বাংলা বেতার। কণ্ঠযোদ্ধারা মনে করেন, তাদের কাছে এই সম্মানটা অন্যরকম। বাইরের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সংকটটা ধরতে পেরেছিলেন। সে কারণে মানবতাবাদী হিসেবে তাদের যা করণীয়, তারা তার সবই করেছেন। তারা যেটুকু করতে পেরেছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সেটা করতে পারাই উচিত ছিল বলেও মনে করছেন তারা।

ফটো কার্টেসি জন্মযুদ্ধ ম্যডিসন স্কয়ার গার্ডেনের বাইরে বক্স অফিসে ব্যবহৃত পোস্টার জুলাই ১৯৭১

মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্যে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজন করা হয়েছিল কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। যার মাধ্যমেই মূলত বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন সংকটের বার্তা পৌঁছে যায়। এ কনসার্টের মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন বিখ্যাত ভারতীয় সংগীতজ্ঞ পণ্ডিত রবিশঙ্কর। ঠিক মাস দেড়েক পর ইংল্যান্ডের কেনিংটন ওভালে হয়েছিল এমনই আরেকটি রক কনসার্ট। আর সেটার উদ্দেশ্যও ছিল বাংলাদেশের জন্য তহবিল সংগ্রহ।

ওভাল কনসার্ট সেপ্টেম্বর ১৯৭১   ওভাল কনসার্টের পোস্টার

সবাই চেনেন যে কনসার্ট তার বাইরেও কনসার্টের খোঁজ মেলে কেনিংটন ওভালের কনসার্ট। সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের হাতে এর মালিকানা। ১৯৭১ সালের দিকে আর্থিক দুর্দশা চলছিল সারের। ১৮ সেপ্টেম্বর সেখানে এক রক কনসার্ট আয়োজনের জন্য সারের অনুমতি চায় বাফেলো কনসার্ট লিমিটেডের রিকি ফার। ‘গুডবাই সামার’ নাম দিয়ে এই কনসার্টের টিকিট ধরা হয়েছিল দেড় পাউন্ড। বিজ্ঞাপনে স্পষ্ট লেখা ছিল বাংলাদেশের শরণার্থীদের কথা। আগের দিন মাঝরাত পর্যন্ত কাউন্টার খোলা থাকলেও টিকিট বিক্রি হয়েছিল মাত্র ১০ হাজার। কিন্তু কনসার্টের দিন পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ধারণক্ষমতা ৩০ হাজার হলেও ওভালে সেদিন দর্শক হয়েছিল প্রায় ৪০ হাজারের মতো।

স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী
এ সপ্তাহেই জীবনযুদ্ধে হেরে মারা গেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারের কণ্ঠযোদ্ধা রাশেদুল হোসেন। কোন গানগুলো প্রাণে শক্তি যুগিয়েছিল সে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ বা ‘রক্ত দিয়ে নাম লিখেছি বাংলাদেশের নাম’ গানগুলো। এসব গান যেমন রক্ত গরম করে দিত তেমনই বিদেশে আমার দেশের শরণার্থীদের জন্য যে কেউ ভাবছে, সেটাও অন্যরকম বার্তা নিয়ে আসত। এই গানগুলো যুদ্ধের ময়দানে দেশের প্রতি মমত্ব ধরে রাখতে সাহায্য করেছিল। এখনও এসব গান আমাদের যেন যুদ্ধের সেই উত্তাল দিনগুলোয় নিয়ে যায়।


স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুজেয় শ্যাম। সাংস্কৃতিক আন্দোলন একাত্তরকে কীভাবে সংগঠিত করেছিল— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শহীদুল ইসলামের কথা এবং অজিত রায়ের সুরে ‘তুমি ফিরে যাও’ গানটি রেডিওতে শোনার পর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের চিঠি দিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানুষ গান শুনে ভাবতে চেষ্টা করেছে যে- বেঁচে থাকা এবং এই সংগ্রাম কত জরুরি। যারা মাঠে যুদ্ধ করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাও কত জরুরি। তিনি বলেন- এমনকি যুদ্ধ যখন শেষ, তখন সে বিজয়ের প্রথম গানটি লিখে আমার হাতে দেয়। শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি যখন সুর করলাম, তখনই আমার ভেতর যে শিহরণ জেগেছিল, সেটাতে আমি টের পাই স্বাধীন বাংলার বাতাসের গন্ধ। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাঙালি হিসেবে গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, বিদেশে যারা ওই সময় শরণার্থীদের কথা হাজারো মানুষকে জানিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের যে ক্ষমতা, সেটা দেখতে একাত্তরের দিকে বার বার তাকাতে হবে।

স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পী

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠযোদ্ধা সুরকার ও সংগীতশিল্পী সুজেয় শ্যাম। সাংস্কৃতিক আন্দোলন একাত্তরকে কীভাবে সংগঠিত করেছিল— এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শহীদুল ইসলামের কথা এবং অজিত রায়ের সুরে ‘তুমি ফিরে যাও’ গানটি রেডিওতে শোনার পর মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের চিঠি দিয়েছিলেন। ওই যুদ্ধ পরিস্থিতিতে মানুষ গান শুনে ভাবতে চেষ্টা করেছে যে- বেঁচে থাকা এবং এই সংগ্রাম কত জরুরি। যারা মাঠে যুদ্ধ করছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাটাও কত জরুরি। তিনি বলেন- এমনকি যুদ্ধ যখন শেষ, তখন সে বিজয়ের প্রথম গানটি লিখে আমার হাতে দেয়। শহীদুল ইসলামের লেখা ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’ গানটি যখন সুর করলাম, তখনই আমার ভেতর যে শিহরণ জেগেছিল, সেটাতে আমি টের পাই স্বাধীন বাংলার বাতাসের গন্ধ। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাঙালি হিসেবে গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, বিদেশে যারা ওই সময় শরণার্থীদের কথা হাজারো মানুষকে জানিয়ে তাদের জন্য কিছু করতে চেয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের যে ক্ষমতা, সেটা দেখতে একাত্তরের দিকে বার বার তাকাতে হবে।

সুজেয় শ্যাম

সুজেয় শ্যাম বলেন, স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীরা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষকে সামান্য শক্তি হলেও জোগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। আর যেকোনও যুদ্ধের যে রাজনীতি, সেখানে ক্ষমতাশালী দেশ ও তার জণগনকেও বোঝানো দরকার যে কী ভয়ঙ্কর অমানবিকতা ঘটছে। সেই কাজটা বাইরের শিল্পীরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই করেছিলেন।

/এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট