X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশে মাদক ব্যবসায়ী ৩০ লাখ, প্রতিদিন কেনা-বেচা ২০০ কোটি টাকার ’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৮ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:৪৯আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০১৬, ২১:৫৭

মাদকের ছোবলে বিপন্ন কিশোর-তরুণরা দেশে বর্তমানে প্রায় দেড় কোটি মাদকসেবী রয়েছেন। এর মধ্যে ১ কোটি মাদকাসক্ত। তারা প্রতিদিন গড়ে ২০ কোটি টাকার মাদক সেবন করে থাকেন।সেই হিসেবে মাসে প্রায় ৬’শ কোটি টাকা মাদকে ব্যয় হয়। অন্যদিকে দেশে প্রায় ৩০ লাখ মাদক ব্যবসায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে দু’শো কোটি টাকার মাদক কেনা-বেচা করেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি)বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবের স্যামসন সেন্টারে আয়োজিত ‘মাদকের অপব্যবহার রোধে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর এই তথ্য জানায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও প্রমিসেস মেডিকেল লিমিটেড’র যৌথ উদ্যোগে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
বৈঠকে বক্তারা বলেন,ধূমপান থেকেই ধীরে ধীরে মাদকের প্রতি আসক্তি শুরু হয়। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর‌্যন্ত রয়েছে মাদকের বিস্তৃতি। আসক্তি শুরুর পর টাকা জোগাড় করতে কিশোর-তরুণরা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে মাদকসেবীরা দিন দিন হয় উঠছে আরো বেপরোয়া।
তাদের মতে,দেশের সর্বত্র সন্ত্রাসী কার‌্যক্রম,স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উত্যক্ত করা, হত্যা কিংবা সড়ক দুর্ঘটনার আধিক্যে মাদকাসক্তির ভূমিকাই বড়। মাদকসেবীদের চিকিৎসায় সকল পর‌্যায়ে তাদের পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা অধিক প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
মানস’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন,পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী ও স্বজনেরা যদি নেশার নেতিবাচক দিক এবং জীবনের সম্ভাবনাময় বিষয়গুলো তুলে ধরে প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণ ও চিকিৎসা করেন তবেই মাদকের এই জাল থেকে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন,মাদক বর্তমানে দেশের একটি বড় সমস্যা। সমাজের মাইক্রো লেভেল থেকে শুরু করে সর্বস্তরে মাদকের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতে হবে। স্কুল কলেজ ও পরিবার থেকে প্রতিটি শিশুকে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানাতে হবে। তবেই মাদকমুক্ত সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার‌্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলায় মাদকবিরোধী ক্যাম্পেইন করতে হবে। এর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সব সময় সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমান বলেন, হতাশা থেকেই তরুণ সমাজ বেশি মাদকাসক্ত হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পরিবারকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা পেলে তারা চিকিৎসা নিয়ে উৎসাহিত হবে।

তিনি বলেন,মাদকসেবীদের চিকিৎসার জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে আলাদা কোনও ইউনিট নেই। আলাদা ইউনিট করা গেলে তাদের চিকিৎসা আরও সহজ হতো।

প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক বলেন, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। খালি খালি আইন করে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। তবে দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। 

একজন মাদকসেবীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পরিবারের ভালোবাসা দরকার মন্তব্য করে প্রমিসেস মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন,সন্তান মাদকসেবী হলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। ধীরে ধীরে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন,বিশ্বে ইয়াবা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়।আর আমাদের তরুণ সমাজ এটাকে নেশা হিসেবে ব্যবহার করছে।ফেনসিডিল কাশের সিরাপ হিসেবে পরিমাণ অনুযায়ী রোগীকে খাওয়ানো হয়। কিন্তু যুব সমাজ তা খেয়ে নেশা করছে।তিনি বলেন,এগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী ওষুধ, আর মাত্রা বেশি হলেই নেশা। এর থেকে তরুণ সমাজকে বের করে আনতে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো দরকার।   

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার রাকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমদ পলক, বাংলাদেশ রাইফেলস’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.)আ ল ম ফজলুর রহমান, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমদ,মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী,সাইকোলজিস্ট অধ্যাপিকা মেহতাব খানম, ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল,সঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর, অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ। 

/এআরআর/এমএসএম

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
বিদ্যুৎ ও গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
ওমরা পালনে সৌদি গেলেন পাটমন্ত্রী
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
গাজায় আবিষ্কৃত গণকবরের স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা