X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
বাংলা ট্রিবিউনকে সালাম মুর্শেদী

গার্মেন্টস মালিকদের উন্নতি অনেকেরই সহ্য হয় না

শফিকুল ইসলাম
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০১:২৪আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৬:৩৫

সালাম মুর্শেদী পোশাকশিল্প মালিকদের ভালোটা অনেকেই দেখতে পারেন না মন্তব্য বলে করেছেন বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, অনেকেই পোশাকশিল্প মালিকদের উন্নতি সহ্য করতে পারেন না।  সম্প্রতি  রাজধানীর ধানমণ্ডিতে এনভয় টাওয়ারে তার নিজ দফতরে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় সালাম মুর্শেদী ব্যবসার নতুন পরিকল্পনা,  উন্নতি, শ্রমিক মালিক সম্পর্ক বিষয়ে কথা বলেন। কথা বলেন, তার অতীত, বর্তমান ও আগামীদিনের পরিকল্পনা নিয়েও। এক প্রশ্নের জবাবে  তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিদ্যমান শ্রম আইন মেনে আন্তর্জাতিক মানের কাস্টমারদের চাহিদা পূরণ করেই আমরা ব্যবসা করি। কোনও ক্রেতা দয়া দাক্ষিণ্য দেখিয়ে  বাংলাদেশ থেকে পণ্য কেনেন না। তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেরা মানের পণ্য তৈরি করি বলেই তারা পণ্য কিনতে আসেন। অন্য কোনও কারণে নয়।
গার্মেন্টস মালিকরা দামি গাড়িতে চড়েন। দামি হোটেলে খান, দামি স্যুট পরেন। অথচ তারা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি দেন না—এমন মন্তব্যের জবাবে অনেকটা চাপা ক্ষোভ নিয়েই বলেন, অভিযোগগুলো কোনওটাই সত্য নয়। একজন বিদেশি ক্রেতা যখন পণ্য কিনতে বাংলাদেশে আসেন, তখন তাকে বিমানবন্দর থেকে হোটেলে নিয়ে যেতে হয়। হোটেলে রাখতে হয়, খাওয়াতে হয়, কারখানা পরিদর্শন করাতে হয়। এ সব কিছু করতেই টাকা লাগে। দামি হোটেলে না রাখলে, ভালো গাড়িতে না চড়ালে, ভালো হোটেলে না খাওয়ালে তারা কি আমার পণ্য কিনবেন? তাই হয়তো আমরা ভালো গাড়ি কিনি, ভালো হোটেলে যাতায়াত করি। এসব যে নিজের প্রয়োজনে করি, তা কিন্তু নয়। ব্যবসার প্রয়োজনেই আমাদের দামি পোশাক পরতে হয়, দামি গাড়িতে চড়তে হয়, দামি হোটেলে যাতায়াত করতে হয়।

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি না দেওয়া প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, আমরা আমাদের কারখানার শ্রমিকদের কখনও শ্রমিক বলি না। মূল্যায়ন করি ব্যবসায়িক পার্টনার হিসেবে। ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে। একজন নবাগত শ্রমিক যিনি কোনও কাজই জানেন না, অনবিজ্ঞ। জীবিকার প্রয়োজনে গার্মেন্টসে চাকরি করতে এসেছেন, আমরা এমন একজন নবাগত শ্রমিককে প্রথম মাসেই শ্রম আইন অনুসারে ৫ হাজার ৩শ টাকার মূল বেতন, ওভারটাইম ও অন্যান্য সুবিধাসহ প্রায় সাড়ে ৭ হাজার টাকা বেতন দেই। যা ৬ মাস যেতে না যেতেই বৃদ্ধি পায়। পরের কথা না-ই বা বললাম। সালাম মুর্শেদী বলেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, যারা গার্মেন্টস মালিকদের নিয়ে এই সমালোচনা করেন, তাদের বাসায়ও তো লোক আছেন, যারা তাদের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করেন। তাদের  কত টাকা বেতন দেন তারা। কী কী সুবিধা দেন?

ইএবি প্রেসিডেন্ট বলেন,  হয়তো আমাদের প্রথম জেনারেশনে কিছু ভুল থাকতে পারে। তা কিন্তু শোধরাচ্ছে। সংশোধন হচ্ছে। আমাদের সেকেন্ড জেনারেশন কিন্তু খুবই ভালো করবে। এটি আমার বিশ্বাস। বাংলাদেশে আমরা যারা ব্যবসা করছি, তাদের মধ্যে অনেকেরই কিন্তু ব্যবসার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তারপরেও  প্রতিযোগিতা করে ব্যবসায় টিকে আছি। এটি আমাদের অর্জন।  

 

একান্ত আলাপে সালাম মু্র্শেদী ও শফিকুল ইসলাম সালাম মুর্শেদী বলেন, তৈরি পোশাকের জন্য সামনে আরও শুভদিন অপেক্ষা করছে। কারণ চীন তৈরি পোশাকে আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তারা কিন্তু খুব বেশিদিন এ খাতে থাকতে পারবে না। তাদের খরচ বাড়ছে। ইচ্ছা থাকলেও শ্রমিকের মজুরিসহ উৎপাদন খরচ মিটিয়ে তৈরি পোশাকের ব্যবসা এখন আর তাদের জন্য লাভজনক বা শুভ হচ্ছে না। তাদের এখন বাধ্য হয়েই হাইটেক শিল্পের দিকে ঝুঁকতে

 এক প্রশ্নের জবাবে সালাম মুর্শেদী বলেন, কমপ্লায়েন্সের চাপ কিন্তু আসলে কমেনি। তাজরীনে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের ঘটনা তৈরি পোশাক খাতে নতুন টার্ন এনে দিয়েছে। অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্স ও অ্যাকশন প্লান মিলে বাংলাদেশের কমবেশি ৩ হাজার ৭০০ কারখানার প্রায় পুরোটাই তারা পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেই প্রতিবেদন কিন্তু ইতিবাচক।

বিজিএমইএ-এর সাবেক এই সভাপতি বলেন, সরকার আসলে পূর্ণ সহযোগিতা করছে না। সরকার ১ শতাংশ সুদ হারে বৈদেশিক তহবিল থেকে ঋণ পেলেও আমাদের কিন্তু দিচ্ছে ৯ শতাংশ হারে। সব কিছু মিটিয়ে তা ১৪-১৫ শতাংশে উঠছে। আমরা ১ শতাংশ হারে ঋণ পেলে আরও ভালো করতাম।

শিল্প বিকাশে  ইন্ডাস্ট্রি পলিসি সহজবোধ্য করাসহ খাতওয়ারি শিল্প পার্ক  স্থাপনের পরামর্শ দেন সালাম মুর্শেদী। তিনি বলেন, সরকার  অর্থনৈতিক জোন করার পরিকল্পনা নিয়েছে। তবে, কতদিনের মধ্যে কয়টি জোন পরিপূর্ণ হবে, তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে। তবেই শিল্প বিকশিত হবে। রফতানি বাড়বে।

বিদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে সালাম মুর্শেদী বলেন, বাংলাদেশে জমির দাম অসম্ভব রকমের বেশি। জমি কিনতেই বিনিয়োগের টাকার অর্ধেক শেষ।  তারপর রয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাওয়া না পাওয়ার বিষয়। এ কারণেই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অনেকে বিদেশে বিনিয়োগ করতে চান। বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সালাম মুর্শেদী। বলেন, বিদেশে বিনিয়োগের অনুমতি দেওয়া উচিত। এতে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ব্রান্ডিং হবে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা না পাওয়া প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে  সালাম মুর্শেদী  বলেন, আসলেই রাজনৈতিক কারণেই আমরা এ সুবিধাটি পাচ্ছি না। আমাদের পার্শ্ববর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। জিএসপি সুবিধা পাওয়া এখন সময়ের দাবি। বাণিজ্যমন্ত্রী সঠিকই বলেছেন। আমাদের কোনও দুর্বলতা নেই।   

নিজের সাফল্য সম্পর্কে মুর্শেদী বলেন, আমার অর্থ অর্জন সম্মান সব কিছুর মূলে ফুটবল। খুলনার এক ক্রীড়া পরিবারে আমার জন্ম। বাবা অ্যাথলেট ছিলেন। আর পেশায় শিক্ষক, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সুপারিটেনডেন্ট। আমার সৌভাগ্য যে আমি ফুটবলার হয়েছি। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে একমাত্র আমিই ফুটবলার হয়েছি। তবে ফুটবলার না হলে আজ এ জায়গায় পৌঁছতে পারতাম কি না সন্দেহ। সত্যি বলছি, সেই টানাপড়েনের সময়ে দাঁড়িয়ে আজকের এই বৈভব-সম্মানের জীবন কল্পনাও করতে পারিনি। তিনি বলেন, ঢাকায় আসার গল্প শুনলে অনেকে হয়তো হাসবেন, টিনের স্যুটকেস নিয়েই আমি গুলিস্তানে নেমেছিলাম। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, মফস্বলের এক মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানের এর চেয়ে ভালো ব্যাগ ছিল না। এসেছি আজাদ স্পোর্টিংয়ে খেলার প্রস্তাব পেয়ে।

বিজেএমসিতে খেলার সময় তারা আমাকে একটা চাকরি দিয়েছিল। চাকরিটা ছিল প্লাটিনাম জুট মিলের সুপারভাইজার হিসেবে। তাই পরে খুলনা মুসলিম ক্লাবে না খেলে প্লাটিনাম জুট মিলের হয়ে খেলতে হয়েছে আমাকে। ওখানে চাকরির সময় এ রকম একটা ইন্ডাস্ট্রির স্বপ্ন দেখেছিলাম। গরিবের মনে কত রকমের চাপা শখ থাকে, বাস্তব তো অন্য জিনিস। মোহামেডান ক্লাবে খেলার সুবাদে কুতুব ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়, টানা ১০ বছর তিনি ক্লাবের ব্যাডমিন্টন দল চালিয়েছেন। তিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হলেও জনতা ব্যাংকে চাকরির সুবাদে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। ক্লাবে তাকে একদিন জিজ্ঞেস করি, ব্যবসা-বাণিজ্য করা যায় কি না। তিনিও চান ব্যবসায় নামতে। তখন গার্মেন্ট ব্যবসা কেবল শুরু হয়। কুতুব ভাই বড় ঝুঁকি নিয়ে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নেমে গেলেন, আমার জমানো সাত লাখ টাকার মতো তার হাতে তুলে দিলাম। সেই '৮৪ সাল থেকে এনভয় গ্রুপের শুরু, তারপর ৩১ বছর হয়ে গেল। এই গ্রুপ আরও বড় হয়েছে, যোগ হয়েছে অনেক ধরনের ব্যবসা। ২০ হাজার লোক কাজ করে, তাদের পরিবার নির্ভর করে এনভয় গ্রুপের ওপর।  

খেলোয়াড়ি জীবনটা মিস করলেও এখনকার ব্যস্ততাও তার ভালো লাগে।  প্রায় ২০ হাজার কর্মী আছেন তার প্রতিষ্ঠানে। সালাম মুর্শেদীর মতে, কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। কাজ না থাকলে কী হবে, ভাবতে পারি না। কাজই আমার জীবন।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
করারোপ নীতি শিক্ষা সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করবে: সলিমুল্লাহ খান
বাংলা ট্রিবিউনকে ওয়াসিকা আয়শা খান‘নারীরা যে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে চলেছেন, এর নেপথ্যে শেখ হাসিনা’
সর্বশেষ খবর
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
গোপনে ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
টিপু-প্রীতি হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৯ এপ্রিল
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
ক্যাসিনো কাণ্ডের ৫ বছর পর আলো দেখছে ইয়ংমেন্স ও ওয়ান্ডারার্স
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি