X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর অব্যাহতির কারণ

অসদাচরণ নয়, ধৃষ্টতা!

উদিসা ইসলাম
০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৮:২০আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২২:০৭

গণমাধ্যমের মুখোমুখি মোহাম্মদ আলী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি ইস্যু করেছেন চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু। যদিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি, ঠিক কী কারণে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তবে, জাতীয় স্বার্থে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছেচিঠিতে। এদিকে, প্রসিকিউশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটিকে অসদাচরণ না বলে ধৃষ্টতা বলাই শ্রেয়। সূত্রের দাবি, মূলত এই প্রসিকিউটরের ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের কারণেই তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর এই চিঠির ভিত্তিতেই তদন্ত হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি ময়মনসিংহের জাতীয় পার্টির এমপি হান্নানের বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন মোহাম্মদ আলী। এই মামলার সঙ্গে মোহাম্মদ আলী সম্পৃক্ত না থাকলেও তিনি নানাভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে আসছিলেন। এ মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রসিকিউটর হিসেবে আছেন জিয়াদ আল মালুম, তুরিন আফরোজ, সাইয়্যেদুল হক সুমন, তাপস কান্তি বল ও শেখ মুশফিক কবির।
কেন তদন্তাধীন মামলা নিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ আসছে—জানতে চাইলে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই বলেন, ‘জেলাসি, জেলাসি’।
কী কারণে তাকে সব মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসিকিউটর (প্রসিকিউশন এডমিন) জিয়াদ আল মালুম বলেন, এটা আমি বলতে পারব না। চিঠি ইস্যু করে চিফ প্রসিকিউটর ঢাকার বাইরে চলে গেছেন। এর উত্তর তিনিই দিতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, চিফ প্রসিকিউটর যেকোনও প্রসিকিউটরকেই মামলা দিতে এবং অব্যাহতি দিতে পারেন। এর আগে দুদফা মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে, সেটার কী ব্যবস্থা প্রসিকিউশন অফিস নিয়েছে, জানতে চাইলে এই প্রসিকিউটর বলেন, আমরা অভিযোগগুলো মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। কী ব্যবস্থা নিয়েছে বা আদৌ নিয়েছে কি না তা মন্ত্রণালয়ই বলতে পারবে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে তদন্তানাধীন মামলা নিয়ে ট্রাইব্যুনাল অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করার প্রচেষ্টার অভিযোগ প্রসঙ্গে সূত্র জানায়, আমাদের এখানে সবাই জানেন বিষয়টা। কিন্তু ‘অফিসিয়ালি এড্রেস’ করা হয়নি। তিনি যা করেছেন, তাকে অসদাচরণ না বলে ধৃষ্টতা বলাই শ্রেয়।

মঙ্গলবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ৪৪ মিনিটে অব্যাহতিপত্রটি প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীর হাতে দেওয়া হয়। তবে, এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পত্রটি ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় প্রসিকিউশন। চিফ প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে পাঠানো অব্যাহতি পত্রে বলা আছে, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয়ের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলীকে আলবদর শামসুল হক গং (রেজি নং-৩৭, তাং- ১২/১০/২০১৪), শামসুল হোসেন তরফদার এবং অন্যান্য মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টতা থেকে প্রত্যাহার করা হলো। পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরিচালনাধীন কোনও মামলা পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ আদেশটি জনস্বার্থে দেওয়া হলো।’

মোহাম্মদ আলীকে অব্যাহতির আদেশ

এর আগেও তার বিরুদ্ধে নানাসময় অভিযোগ এসেছে। কখনও অসদাচরণের, কখনও আসামিপক্ষের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ ও কখনও নারী সহকর্মীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ। এরমধ্যে দুদফা লিখিত আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত ভর্ৎসনাও মোহাম্মদ আলীকে করা হয়নি বলে জানান অভিযোগকারী তুরিন আফরোজ।

 এদিকে, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চিঠির বিষয়ে আমি জেনেছি। বিষয়টি আমরা দেখব। এর আগেও বড় ধরনের অভিযোগ এই প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিলে মন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, বিষয়টি কেন ঘটছে বুঝতে পারছি না। আমরা তদন্ত করব।

এমপি হান্নানের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমানের  সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ মামলার সঙ্গে মোহাম্মদ আলীর কোনও সম্পর্ক নেই। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না।

এর আগে গত জুন ২০১৪ সালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের (প্রসিকিউটর) মধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের ঘটনা ঘটে। প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী অন্য প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বরাবর আবেদন করেন। এর আগে ড. তুরিন আফরোজ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মানসিক হয়রানির অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আবেদন জানান। ২০১৪ সালের মার্চে ড. তুরিন ও মোহাম্মদ আলী আরেক দফা পরস্পরের বিরুদ্ধে  অভিযোগ এনেছিলেন।

 ওই সময় ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলীর কাছে লিখিত অভিযোগে তুরিন আফরোজ বলেন, ১১ জুন বুধবার বেলা সোয়া দুটায় ভারপ্রাপ্ত চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ের পক্ষে সহকর্মী মোহাম্মদ আলী একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। যা  চিফ প্রসিকিউটরের অনুমতি ছাড়া করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ আলী আমার সম্পর্কে যেসব অভিযোগ করেছেন, তা সত্য নয়।

তুরিন আফরোজ বলেন, মোহাম্মদ আলী অনবরত আমার সম্মান নষ্টের জন্য অপেশাদারী আচরণ করছেন। আমার ব্যক্তিগত ও প্রফেশনাল লাইফ নিয়ে কুৎসা রটাচ্ছেন। তুরিন বলেন, এর আগেও মোহাম্মদ আলী আমাকে নিয়ে গণমাধ্যমে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমি ৩ মার্চ চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে আবেদন করেছিলাম। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

/এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আধুনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে আজ থেকে শুরু প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রদর্শনী
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আমার কোনও অনুশোচনা নেই: গার্দিওলা
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫