X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
একান্ত সাক্ষাতকারে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ

জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি না আসায় অতৃপ্ত কমিশন

এমরান হোসাইন শেখ
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৭:৪৪আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৭:৫২

নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশ না নেওয়ায় অতৃপ্তি রয়ে গেছে নির্বাচন কমিশনের। আয়োজক সংস্থা হিসেবে কমিশনের প্রত্যাশা ছিল সবার অংশগ্রহণে একটি উৎসবমুখর পরিবেশে দেশের সবচেয়ে বড় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সবাই নির্বাচনে এলে কমিশন যে তৃপ্তি পেতে পারতো, বিএনপি না আসায় তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
চলতি কমিশনের চার বছরপূর্তি উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে, মেয়াদকালে আইনের মধ্যে থেকে সব দায়িত্ব পালনকে নিজেদের সন্তুষ্টি মনে করেন এই কমিশনার।
গত ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশন শপথগ্রহণ করেন। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করে। অবশ্য একইসঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ কমিশনার শাহনেওয়াজ ১৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেন। দেশের ইতিহাসে প্রথম সার্চ কমিটি গঠনের ‍মাধ্যমে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এই কমিশন নিয়োগ দেন।

বাংলা ট্রিবিউন: মেয়াদের ৪ বছরে নিজেদের সম্পর্কে মূল্যায়ন কী?

শাহনেওয়াজ: আমাদের ৫ বছর মেয়াদের ৪ বছর পূর্তি হয়েছে। এ‌ই সময়ের মধ্যে আমরা ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া যেসব নির্বাচন হয় তার সব ধরনের নির্বাচনই করতে পেরেছি। আইন সংগতভাবে নির্বাচন করার জন্য যা যা করণীয় প্রতিটি নির্বাচনে আমরা সেটা করেছি। এর মধ্যে নির্বাচন করার সফলতাও আছে। এ সময়ে জাতীয় নির্বাচনও করেছি। যদিও সেখানে দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। তবে কিছুটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে যেসব দলের অংশগ্রহণে উৎসবমুখর পরিবেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। সব দলের অংশগ্রহণ থাকলে সেই নির্বাচন যারা পরিচালনা করে তাদের অবশ্যই একটা তৃপ্তি থাকে। আমরা সেই তৃপ্তি থেকে কিছুটা হলেও বঞ্চিত হয়েছি। তবে আমরা আইনের বিপরীতে কোনও কাজ করিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনাদের সময় অনুষ্ঠিত সব নির্বাচন সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়ছে বলে কি মনে করেন?

শাহনেওয়াজ: এককভাবে কমিশন নির্বাচন করতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকারি বেসরকারি অনেক ধরনের মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। বড় বড় নির্বাচন করতে গিয়ে কিছু কিছু অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমরা সবার দিক থেকে সমানভাবে সহযোগিতা পাইনি। নির্বাচন কর্মকাণ্ডে যারা সম্পৃক্ত বা ভোটগ্রহণে যারা সম্পৃক্ত ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সবার থেকে সমান সহযোগিতা পেয়েছি বলে আমাদের মনে হয় না। কারও ক্ষেত্রে কিছুটা কমতি ছিল, কিছুটা গাফিলতিও ছিল। যার জন্য কোনও কোনও নির্বাচনে সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করবো না। তবে সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচনগুলো আইনসংগত হয়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার দৃষ্টিতে বর্তমান কমিশনের সফলতা কী?

শাহনেওয়াজ: আমরা আইন সংগতভাবে সব কাজ করেছি। আইনের বৈপরীত্যে কোনও কাজ আমরা করিনি এটাকেই আমরা সব থেকে বড় সফলতা বলে মনে করি। কোনওরকমের সমালোচনা ছাড়াই একযোগে অনুষ্ঠিত ৫টি বড় সিটি করপোরেশনসহ বেশ কয়েকটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। এই নির্বাচনে কোনওরকম প্রশ্ন বা আপত্তি ওঠেনি।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলাদেশের মতো দেশে কমিশনের পক্ষে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কতটা সম্ভব?

শাহনেওয়াজ: নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ। কমিশন থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে এর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট রয়েছেন তাদের সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। সবার সহযোগিতা পেলে কমিশনের পক্ষে সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাস দীর্ঘ দিনের নয়। এ দেশের ক্ষেত্রে কিছু কিছু সংস্থা অতিমাত্রায় কোনও দল বা ব্যক্তির প্রতি অতিমাত্রায় সহৃদয়তা দেখায়। এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হয় না।

বাংলা ট্রিবিউন: বিএনপি শুরু থেকেই আপনাদের ‍পক্ষপাত দুষ্টু বলে অভিযুক্ত করছে। এ বিষয় আপনাদের বক্তব্য কী?

শাহনেওয়াজ: কমিশন কোনও নির্বাচনে কোনও অবস্থাতেই পক্ষপাতিত্ব দেখায়নি। আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনও কাজ করেনি। যতগুলো নির্বাচন করেছি তার সবগুলোই আন্তরিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানের প্রচেষ্টা করেছি। কমিশন যাদের দিয়ে কাজ করায় তাদের দক্ষতা ও দায়িত্ববোধের অভাবে কিছুটা প্রশ্নের মুখে কমিশনকে পড়তে হয়েছে, যার জন্য কমিশন দায়ী নয়। আর বিগত কমিশনের সময়কালের নির্বাচনগুলো দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন পরাজিত দল সব সময়ই একটা অভিযোগ দাঁড় করিয়েছেন। এর সবগুলোতে যৌক্তিক ভাববার কোনও কারণ নেই। আবার কিছু ক্ষেত্রে এসব অভিযোগের পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে সেটাও অস্বীকার করবো না। যাদের সহযোগিতা নিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয় তাদের কারও কারও অসহযোগিতামূলক আচরণের কারণে দু-একটি জায়গায় অঙ্গহানি ঘটেছে। তবে কমিশনের নিরপেক্ষতার ঘাটতি হয়নি।

আপনারা দেখবেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের নির্বাচন নিয়েও কোনও কোনও সময় প্রশ্ন উঠছে। আপনারা যদি প্রশ্নমুক্ত কোনও নির্বাচন চান এর জন্য কমিশনের পাশাপাশি অন্যদের ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ফলাফল মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। তাহলে সেটা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো এগিয়ে যাচ্ছে এবং দেশের মানুষ সচেতন হচ্ছেন। অদূর ভবিষ্যতে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো উদাহরণ সৃষ্টি করার নির্বাচন করতে পারব বলে আশা করি।

বাংলা ট্রিবিউন: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের প্রত্যাশা কী?

শাহনেওয়াজ: ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে সব থেকে নিম্নস্তরের নির্বাচন। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোটার একে অপরের খুব কাছের লোকই থাকে। এজন্য এ নির্বাচন জনগণই চান যেন কোনও ধরনের সংঘাত-সংঘর্ষ ছাড়া সুষ্ঠুভাবে হোক। কারণ একদিনের নির্বাচনের জন্য তারা দীর্ঘদিনের সম্পর্কে টানাপোড়েন হোক তা চায় না। সামাজিক পারিবারিক সম্পর্ক নষ্ট করতে চায় না। তদুপরি আমরা চিন্তা করছি সদ্য দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বলতে পারি এই স্তরের নির্বাচনটা খুবই সুন্দর হবে। তারপরও আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে নির্দেশ দিয়েছি। ‍আমরা প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণ এ বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করবো। নিম্নস্তরের হলেও এটা দেশব্যাপী নির্বাচন। সেহেতু আমরা এর প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখছি।

বাংলা ট্রিবিউন: পূর্ববর্তী কমিশনগুলোর সঙ্গে তুলনামূলক মূল্যায়ন কী?

শাহনেওয়াজ: আমরা কারও সঙ্গে নিজেদের তুলনা করছি না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। এই দায়িত্ব ৪ বছর সুন্দর ও সুচারুভাবে পালন করেছি বলে মনে করি। ছোট-খাট আইন সংশোধন, বিধিমালা প্রণয়ন, নির্বাচন অনুষ্ঠান তার সবগুলোই আমরা আইনে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে থেকে সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করেছি। সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করেছি বলে মনে করি।

বাংলা ট্রিবিউন: কমিশনকে শক্তিশালী করতে আপনার পরামর্শ কী?

শাহনেওয়াজ: শক্তিশালী কমিশন গঠনের দায়িত্ব কমিশনের একার নয়। নির্বাচন সম্পর্কিত যারা রয়েছেন- সরকার, জনপ্রতিনিধি ও সর্বপরি জনগণ সবারই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যখন সেখানে যেটা দরকার তা দিতে হবে। কমিশনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখে সংশ্লিষ্টরা কাজ করলে কমিশন সুন্দর হবে। তারা দেশ ও জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে পারবে।

/এসএম/এএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা