X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি-পুলিশ-সাংবাদিকও ইয়াবা ব্যবসায়ী!

আমানুর রহমান রনি
০১ মার্চ ২০১৬, ২১:৫৬আপডেট : ০১ মার্চ ২০১৬, ২৩:০২


ইয়াবা সর্বনাশা মাদক দ্রব্য ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে  সংসদ সদস্য, পুলিশ থেকে শুরু করে সাংবাদিকরাও জড়িয়ে পড়েছেন। এ সব পেশার কোনও কোনও ব্যক্তির কাছে এখন ইয়াবা ব্যবসায়ই মূল পেশা। যাদের সন্দেহের বাইরে রাখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তারাই এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন! বিভিন্ন পেশার মানুষ এভাবে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, অপরাধ বিশেষজ্ঞ  ও সমাজকর্মীরা।
গোয়েন্দা পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সূত্র জানিয়েছে, ইয়াবার সব বড়চালান মিয়ানমার সীমান্ত হয়ে বিভিন্নভাবে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এই ব্যবসার সঙ্গে বিভিন্ন নামিদামি পেশার মানুষ জড়িত। যাদের সন্দেহের বাইরে রাখা হয়, তারাই এই ব্যবসায় জড়িত। সন্দেহের বাইরে রাখার কারণেই সুযোগটা গ্রহণ করেন তারা।
গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসার পথে ৪০ হাজার ইয়াবাসহ বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিক দম্পতিকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। আটক ওই সাংবাদিকের নাম মো. সেলিম। তার স্ত্রীর নাম খালেদা বেগম। তিনি বেসরকারি ওই টেলিভিশন চ্যানেলের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি।  মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর চট্টগ্রাম মেট্রো উপ-অঞ্চলের পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, আমাদের কাছে খবর ছিল, কক্সবাজার থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। তবে, তাদের পরিচয় জানা ছিল না। ফিরিঙ্গিবাজারে মাইক্রোবাস থামিয়ে তল্লাশির সময় আটক দম্পতির সিটের পাশে রাখা কম্বলের ভেতর থেকে ৪০ হাজার ৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

মো. সেলিমকে কক্সবাজার বেসরকারি টেলিভিশন সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ওই সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

এর আগে গত বছরের ২৭ জুলাই কক্সবাজারে ২৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ মো. সাদ্দাম নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে আটক করে পুলিশ। বিভিন্ন সময় উদ্ধারকৃত ইয়াবা ধ্বংস করার কথা বলে বাইরে নিয়ে তিনি তা জমা করতেন। ব্যবসা করতেন। এই ঘটনায় কক্সবাজার সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মিয়ানমান ও বাংলাদেশের কয়েকটি চক্র সংঘবদ্ধ হয়ে ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করে বলে জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুটি বা তার অধিক রাষ্ট্রের অপরাধীরা যেসব অপরাধ করবেন, এ নিয়ে সিটি কাজ করবে। ইয়াবা ব্যবসায় যেহেতু মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয়ে করেন, সেহেতু এটি নিয়ে আমরা কাজ করব। আমরা মিয়ানমারের তিন ব্যক্তির নাম পেয়েছি। যারা মাছের ট্রলারে করে ইয়াবা বাংলাদেশ পাচার করেন। তাদের বিষয়ে আমাদের বর্ডারে তথ্য দেওয়া হবে। আমরাও তা নিয়ে কাজ করব।

মনিরুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার হওয়ার পর বিভিন্ন পরিহবনের চালক ও হেল্পার তা বহন করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপর ঢাকার ডিলারা তা খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে বিলি করে। আমরা খুচরা মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে।  

এদিকে, গত বছর সরকারের উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি ও পুলিশের বিশেষ শাখার একাধিক গোপন প্রতিবেদনে ইয়াবা ব্যবসার জন্য টেকনাফের (কক্সবাজার-৪) সংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতা আবদুর রহমান বদিকে অভিযুক্ত করে। সাংসদের পাঁচ ভাই ও তার স্বজনেরা ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক। তাদের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ইয়াবা।

গত বছর ১ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র সচিবের উপস্থিতিতে ইয়াবাবিরোধী এক সভায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা সংশোধনের দাবি জানান বদি। এরপরই গত ২৪ নভেম্বর তার ভাগিনাসহ ৪ নিকটাত্মীয় কক্সবাজার বিমান বন্দরে ইয়াবাসহ আটক হন।

গত ২ ডিসেম্বর বদির তালতো ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী সৈয়দ হোসেনকে আটক করা হয়। ১৩ ডিসেম্বর আটক করা হয় বদির খালাতো ভাই তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মং মং সেনকে। তবে বদি এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন।

গোয়েন্দারা জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসা করছে মাদক ব্যবসায়ীরা।  ১৫ জানুয়ারি  চট্টগ্রাম ও ঢাকায় র‌্যাব-৭ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার যৌথ দল অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার ও রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন। এ সময় ইয়াবা চোরাচালানচক্রের প্রধান আলী আহম্মদ (৫২), হামিদ উল্লাহ (৩২) ও মহিউদ্দিনকে (৩৫) গ্রেফতার করে র‌্যাব। আলী আহম্মদ ও হামিদ উল্লাহকে চট্টগ্রাম ও মহিউদ্দিনকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, আলী আহম্মদ ‘একুশে প্রপার্টিজ’ নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির আড়ালে মূলত ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করতেন। ইয়াবা ব্যবসায় তাকে সহযোগিতা করতেন সিএ অধ্যয়নরত মহিউদিন এবং তার অফিস সহকারী হামিদ উল্লাহ। প্রধান ইয়াবা সরবরাহকারী বার্মিজ নাগরিক বমংকয়ের কাছ থেকে বার্মিজ নাগরিক আয়াতুল্লাহর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেশে অবস্থানরত আলী আহম্মদ সিন্ডিকেট ইয়াবার চালান চট্টগ্রামে নিয়ে আসতেন।  এই আয়াতুল্লাহ ও আলী সিন্ডিকেটের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পাচারকৃত ইয়াবা চালানের মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে কোস্টগার্ড ৫০ হাজার পিস ইয়াবা আটক ও ডিসেম্বরে বায়েজীদ এলাকা থেকে পুলিশ ১ লক্ষ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। আলী আহম্মেদ জানান, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে তিনি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে এসে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানাধীন গহিরা গ্রাম (সমুদ্র লাগোয়া) এলাকায় ব্যবসা করার চেষ্টা চালায়।

এদিকে, বিভিন্ন পেশার মানুষের এভাবে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ায় আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সমাজকর্মীরা। যুব সমাজের একটি বড় অংশ ইয়াবার ভয়াল ছোবলে আক্রান্ত। এই মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে কোনওভাবেই যুবসমাজকে রক্ষা করা যাবে না বলেও তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সমাজকর্মী ডা. আতিকুল হক মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ইয়াবায় মানসিক ক্ষতি বেশি হয়। এছাড়া, অপরাধে জড়িয়ে পড়ারও আশঙ্কা থাকে। কারণ এগুলোর অনেক দাম। এর অর্থ জোগাতে আসক্তরা অপরাধে জড়াতে পারেন। নিয়মিত আসক্তদের মাঝে সন্দেহপ্রবণতার সৃষ্টি হয়। তারা পাশের ও কাছের মানুষকে সন্দেহ করতে শুরু করেন। ইয়াবা আসক্তির কারণে একজন মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন না। এ রকম চলতে থাকলে আমাদের তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। এর ক্ষতির দিক নিয়ে আমাদের আরও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে বলেও জানান তিনি।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!