X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সাক্ষাৎকার

জীবন জুড়েই গল্প বলতে চান সাদাত হোসাইন

চৌধুরী আকবর হোসেন
০৫ মার্চ ২০১৬, ০৫:২১আপডেট : ০৫ মার্চ ২০১৬, ১০:৩১

সাদাত হোসাইন অমর একুশে বইমেলা শেষ হলেও রেশ কাটেনি। এবারের মেলায় সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল,সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, হরিশংকর জলদাস, আনিসুল হক, মুনতাসীর মামুন,ইমদাদুল হক মিলন প্রমুখ। তবে বিখ্যাত লেখকদের সঙ্গে এ তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন তরুণ  লেখক সাদাত হোসাইন। তার দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস ‘অন্দরমহল’ শুধু মেলাতেই এসেছিল পঞ্চম সংস্করণ। সাদাত হোসাইন নিজেও এতটা আশা করেননি,বরং অবাক হয়েছেন। কল্পনাপ্রবণ সাদাত হোসাইন গল্প বলে যেতে চান। তরুণ এ লেখক নিজের গল্প ও স্বপ্ন নিয়ে কথা বলেছেন বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে।

বাংলা ট্রিবিউন: সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের তালিকায় আপনার বইয়ের নাম থাকায় কেমন লাগছে?

সাদাত হোসাইন: বোঝাতে পারব না এই অনুভূতি,এতোটা আশা করিনি। জাফর ইকবাল স্যার, সিরাজুল ইসলাম স্যার,আনিসুল হকদের বইয়ের সঙ্গে তালিকায় আমার নাম দেখে আমি সত্যি অবাক। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘অন্দরমহল’ ছাড়াও আপনার কয়টি বই প্রকাশ হয়েছে ?

সাদাত হোসাইন: অন্দরমহল-কে আমি আমার দ্বিতীয় বই মনে করি। যদিও এর আগে পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়েছে। আমার প্রথম বই গল্পছবি,এরপর জানালার ওপাশে, আমার আর কোথাও যাওয়ার নেই,যেতে চাইলে যেও,আরশিনগর প্রকাশিত হয়েছে। তবে অন্দরমহলে আর আরশিনগর-ই মূলত আমার ‘আমি’ হয়ে ওঠা বই।

বাংলা ট্রিবিউন: লেখা লেখির শুরুটা কিভাবে ?

সাদাত হোসাইন: আমি ছবি তুলতে পছন্দ করি। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় আমার ছবি ছাপা হতো। সে পত্রিকার ফিচার সম্পাদক আমাকে বললেন ছবির সঙ্গে ছবির গল্প লিখে দিতে। তখন তিনি আমাকে উৎসাহ দিলেন ছবি ও ছবির গল্প নিয়ে বই প্রকাশ করতে। ২০১৩ সালে ছবি ও তার সঙ্গের গল্প নিয়ে প্রকাশিত হয় আমার প্রথম বই গল্পছবি। সেই বইটি আমাকে লেখার জন্য উৎসাহী করে। এরপর ছোট গল্প লেখা শুরু করি। ২০১৪ সালে “জানালার ওপাশে” প্রকাশিত হয়। বইগুলো পাঠক ভালোভাবে গ্রহণ করে।

বাংলা ট্রিবিউন: ‘অন্দরমহল’ এর পৃষ্ঠা সংখ্যা বেশি,প্রকাশক পেতে কষ্ট হয়নি ?

সাদাত হোসাইন: নতুন লেখকদের জন্য প্রকাশক পাওয়া আসলেই কষ্টের। নতুন লেখকদের নিয়ে প্রকাশকরা শঙ্কায় থাকেন। বেশি পৃষ্ঠা আর বেশি দামের বই বের করে ঝুঁকি নিতে চান না তারা। ২০১৫ সালে উপনাস্য “আরশিনগর” প্রকাশিত হয়। বইটি প্রায় ৩০০পৃষ্ঠা আর দাম ছিল ৪০০টাকা। বইটি গত মেলার ১৭ তারিখে এসেছিল আর ১১ দিনেই প্রথম মুদ্রণ শেষ হয়ে যায়। সাধারণত মেলা শেষে হলে নতুন লেখকদের বই খুব বেশি একটা বিক্রি হয় না। কিন্তু আরশিনগর সমীকরণ বদলে দিয়েছে। মেলা শেষ হলেও পুরো ২০১৫ সাল জুড়ে তিনটি সংস্করণ বের হয়। কলকাতার বই মেলায়ও আরশিনগর যে পরিমাণ নেওয়া হয়েছিল তা শেষ হয়ে যায়। পরে প্রকাশক আরও বই নেন সেখানে। তখন প্রকাশক খুব অবাক হন। তবে দেশের বাইরে পাঠক পেতে ফেসবুক সহায়তা করেছে। ফেসবুকের কারণে দেশের বাইরে থেকেও অনেকে অনেকে আগ্রহী হয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে আমার বই সংগ্রহ করেছেন। আরশিনগর আমাকে যেমন সাহসী করছে, তেমনি প্রকাশকও সাহস পেয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় অন্দরমহল আরো বড় আকারে প্রকাশ করতে পেরেছি। অন্দরমহল প্রায় ৪০০ পৃষ্ঠা, দাম ছিল ৫৫০ টাকা,এটি প্রকাশে প্রকাশক যেমন আপত্তি করেননি,তেমনি পাঠকও কৃপণতা করেননি।

বাংলা ট্রিবিউন: আরশিনগর বা অন্দরমহল পাঠক কেন পড়ছেন বলে মনে করছেন ?

সাদাত হোসাইন: অনেকেই বলেন পাঠক নেই,আমি সেটা বিশ্বাস করি না। পাঠক আসলে গল্প চায়। আমি গল্প বলার চেষ্টা করেছি। আরশিনগর স্বাধীনতার ১৩/১৪ বছর পরে গ্রামের একটি মেয়ের গল্প নিয়ে লেখা। আর অন্দরমহল ১৮২০ থেকে ১৮৪০ সালের অনুষঙ্গ ব্যবহার করে লেখা। যদিও সেই সময়কার গল্প না। সেই সময়কার এক হিন্দু জমিদার পরিবারের আবহে লেখা। বই লিখার জন্য আমাকে সেই সময়ে কাহিনী নিয়ে লেখা প্রচুর বই পড়তে হয়েছে, মুভি দেখতে হয়েছে। উপনাস্যে খুব সচেতনভাবে সময় ও স্থান উল্লেখ করিনি। অন্দরমহল একটি ফিকশন। অন্দরমহল একটি বিশুদ্ধ কল্পনার নির্যাস।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো ছবি তোলেন,শর্ট ফ্লিম বানান,আবার লেখেনও কোনটাকে প্রাধান্য দেবেন?

সাদাত হোসাইন: ছবির মধ্যে গল্প থাকে,তেমনি গল্পের চিত্রায়ন ঘটে ফ্লিমে,লেখালেখির মধ্যে উঠে আসে গল্প। আমি আসলে গল্প বলতে চাই। গল্পে বেঁচে থাকতে চাই। আমি অনেক বেশি স্বপ্নপ্রবণ। আমার কল্পনাপ্রবণতা তীব্র। আমার মধ্যে প্রাচীনতা আছে,পুরনো দিনের প্রতি আমার মোহ আছে। আমি গল্পের মাধ্যমে পাঠকের অনুভূতির কাছে যেতে চাই। সব মানুষ অনুভতি প্রকাশ করতে চায়,কিন্তু পারে না। গল্পের মধ্যে পাঠক নিজেকে খুঁজে পেতে চাই। আমি চাই,আমার গল্পে পাঠক নিজেকে খুঁজে পাক,আমার ছবিতে,ফিল্মে দর্শক নিজেদের খুঁজে পাক,নিজেদের অনুভূতি খুঁজে পাক। আমি তিনটি মাধ্যমেই গল্প বলতে চাই... আমি জীবনজুড়েই গল্প বলতে চাই।

বাংলা ট্রিবিউন: আগামী দিনের পরিকল্পনা কি ?

সাদাত হোসাইন: সাধারণত সবার মধ্যে বই মেলা কেন্দ্রিক লেখার প্রবণতা থাকে। আমি এখন থেকে সারা বছর জুড়েই লিখবো। পাঠকের দাবির কারণে আরশিনগরের দ্বিতীয় ভাগ লিখবো। জনপ্রিয়তা পাওয়ার চেয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা কঠিন। পাঠকের কাছে আমার দায়বদ্ধতা আছে, সেজন্য লিখবো।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি কোন লেখকের লেখা পছন্দ করেন?

সাদাত হোসাইন: আমি সবার বই পড়ি। তবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা আমার বেশি পছন্দ। এছাড়াও মানিক বন্দোপাধ্যায়,হুমায়ুন আহমেদের লেখাও আমার পছদের।

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার সাফল্যে আপনার বাবা-মা’র প্রতিক্রিয়া কি ?

সাদাত হোসাইন: আমার বাবার সেনাবাহিনীতে সাধারণ সৈনিকের চাকরি করতেন,তার ইচ্ছে ছিল আমি আর্মি অফিসার হবো। কিন্তু সেটি তো হলো না। আমি লেখা লেখি করি,সেটা তারা জানেন, তবে গুরুত্ব দেন না। তারা চান চাকরি করে নিশ্চিত জীবনযাপন করি। কিন্তু অন্দরমহল লিখতে গিয়ে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। তবে ইচ্ছে আছে আগামী মেলায় বাবা-মা’কে দিয়ে আমার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করাবো।

ছবি: নাসিরুল ইসলাম

/সিএ/এমএসএম /এআর/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ