অভিযোগ না থাকলে মানব পাচারকারীসহ দুর্বৃত্তদের ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।তারপরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে দেশ ও মানুষের স্বার্থে দুর্বৃত্তদের আস্তানায় অভিযান চালান তারা। ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলতা আসে। তবে অভিযোগ ও মামলা থাকলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে কাজ করা সহজ হয়।সম্প্রতি কয়েকটি অভিযোগ ও দু’টি মামলার ভিত্তিতে অভিযান চালাতে গিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধান পেয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার।
বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, মানবপাচারের পেছনে দেশের এক শ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত। দালালের মাধ্যমে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে সহজ সরল মানুষদের সংগ্রহ করে জনশক্তি রপ্তানির নামে তারা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেন।পাচার হয়ে যাওয়ার পর অনেক ক্ষেত্রেই কিছু করার থাকে না। তাদের হদিস পেলেও ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়ে।
খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানান, মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রকে তারা গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য।পেয়েছেন আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সন্ধানও। এরইমধ্যে এ বিষয়টি র্যাব সদর দফতরসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন তারা।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার বলেন,অনুমোদন দেওয়ার আগে ও পরে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম নজরদারিতে রাখা জরুরি। কারণ, দেশের শতকরা আশিভাগ এজেন্সি লাইসেন্স নিয়ে জনশক্তি রপ্তানির নামে অনিয়ম ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। জাল ভিসা ও পাসপোর্ট দিয়ে মানবপাচার করে তারা। যারা তাদের হাতে প্রতারিত হন তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন না। কার কাছে কোথায় অভিযোগ করলে প্রতিকার পাওয়া যাবে সেই বিষয়টিও অনেকের অজানা। বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিষয়ে সঠিকভাবে খোঁজ না নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো পরে সরকারের ব্যবস্থাপনাকেই দোষারোপ করে পার পাওয়ার চেষ্টা করে থাকে। ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এজেন্সি ও তাদের দালালরা সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করেন।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক গোলাম সারোয়ার বাংলা ট্রিবিউনকে আরও বলেন, গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে দু’টি পাচারকারী চক্রের সদস্যদের আটক ও পাচারের জন্য তাদের হেফাজতে থাকা কয়েকজনকে উদ্ধার করা হয়।পাচারকারী চক্রে দু’টি ট্রাভেল এজেন্সির মালিকও রয়েছেন।
মানবপাচার প্রতিরোধ করতে হলে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর ওপর নজরদারির পাশাপাশি তাদের দায়বদ্ধতাও বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার। কারণ, দেশের শতকরা আশিভাগ এজেন্সি জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে কোনও নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। এজেন্সিগুলোর এমন কার্যক্রমকে তিনি উপার্জনের পরিবর্তে আত্মসাৎ বলেই উল্লেখ করেন। এক সময় ঠেলাগাড়ি চালাতেন এমন লোকও পরে ট্রাভেল এজেন্সি দিয়ে মানবপাচারে জড়িয়ে পড়ছেন বলে তথ্য রয়েছে তাদের কাছে।
জেইউ/এমএসএম