X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতা

এমরান হোসাইন শেখ
১১ মার্চ ২০১৬, ২৩:৩২আপডেট : ১২ মার্চ ২০১৬, ০০:৪১

রাজনৈতিক সহিংসতা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতার বেড়েই চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার সংঘর্ষের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক গ্রুপ দফায়-দফায় সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিনে এ সব সংঘর্ষের ঘটনায় বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই রাজনৈতিক সংঘাত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবারও ভোলা, বাগেরহাট, লক্ষ্মীপুরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় শুক্রবার একজন নিহত হয়েছে। এর আগে গত কয়েকদিনে নির্বাচনি সহিংসতায় আরও দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এসব সহিংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। এ জন্য মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তাকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপরও দুই-একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে ঘটছে বলে আমাদের নজরে এসেছে। তবে, আমরা ঘটনাগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
নির্বাচন কমিশন ৬ ধাপে দেশের ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে দুধাপে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ প্রথম ধাপ ও ৩১ মার্চ দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মুলত বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। গত ৩ মার্চ থেকে প্রথম ধাপের প্রচারণা শুরু হওয়ার পর এই মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।

শুক্রবার ভোলা সদরের চরসামাইয়া ইউনিয়ন নির্বাচনের প্রচারণা শেষে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তের হামলায় সিরাজ নামে একজন নিহত হয়েছে। ভোলা মডেল থানার ওসি খাইরুল কবির ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ওসি বলেন, সকালে চরসামাইয়া ইউনিয়নের বজলু মেম্বারের পক্ষে প্রচার শেষে বাড়ি ফিরছিলেন সিরাজসহ কয়েকজন। পথে দুর্বৃত্তরা সিরাজকে মারধর করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা সিরাজকে উদ্ধার করে ভোলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। চরসামাইয়া ইউনিয়নে ইউপি সদস্য পদে বজুল মিয়া ও জাহাঙ্গীর হোসেন নামে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিহত সিরাজ ছিলেন বজলু মেম্বারের পক্ষের কর্মী।

একইদিনে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী মোসলেহ উদ্দিন ও আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল আহমদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে শুক্রবার দুপুরে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন। দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়।

মোসলেহ উদ্দিন অভিযোগ করেন, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি ৭ নং ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়ায় গণসংযোগ করতে গেলে ফয়সাল আহমদের সমর্থক উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় তাদের দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। ওই হামলায় তিনিসহ তার কয়েকজন কর্মী আহত হন।

এ দিকে, হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল আহমদ পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, তার সমর্থকদের ওপর বিএনপির প্রার্থীর লোকজন হামলা করেছে। হামলায় তাদের কয়েকজন কর্মী আহত হন।

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কবির আহম্মদ জানান, দুপক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলায় নির্বাচনি প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দুদল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে নারীসহ ৩৩ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আটজন। শুক্রবার সকালে উপজেলার উদয়পুর ইউপি সদস্য উদয়পুর গ্রামের কামরুল ও আস্তাইল গ্রামের ইউপি সদস্য মকুর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলায় শুক্রবার দুপুরে প্রতিপক্ষকে অস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কামাল পারভেজ গাজী নামের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভাইকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলবার ও আট রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।  কামাল পারভেজ গাজী শিয়ালকাঠী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান গাজীর ছোট ভাই।
এর আগে গত কয়েকদিনে পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, ঝালকাঠী, খুলনা, ফেনী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুজন নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়োন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘাত সংঘর্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। ওই বৈঠকে অংশ নিয়ে সেনা গোয়োন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের প্রিতিনিধি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যেসব স্থানে বিএনপির প্রার্থী নেই সেসব স্থানে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ সংঘাত এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দেন।

এদিকে, সংঘাত সংঘর্ষের বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা সব সময়ই কমে বেশি সংঘটিত হতে দেখা যায়। দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখনও দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। এর অবস্থায় রাজনৈতিকভাবে এই নির্বাচন করতে গিয়ে এর মাত্রাটা আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ধারণার চেয়ে কম সেনা প্রয়োজন ইউক্রেনের: সিরস্কি
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’
‘ভারতের কঠোর অবস্থানের কারণেই পিটার হাস গা ঢাকা দিয়েছেন’