X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হ্যাকার তৈরির বিজ্ঞাপন: ক্ষমা চেয়ে পার পেতে চায় সাইফুরস!

জাকিয়া আহমেদ
২৮ মার্চ ২০১৬, ০৩:৫৫আপডেট : ২৮ মার্চ ২০১৬, ০৪:০৪

হ্যাকার তৈরি করতে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিপদে পড়েছে কোচিং সেন্টার—সাইফুরস। আর এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে ক্ষমা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে, মধ্যস্থতা করার জন্য ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা সাংবাদিক পরিচয়ধারী চার শিবিরকর্মীর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। সাইফুরসের হ্যাকার বিষয়ক বিজ্ঞাপন

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও সাইফুরস বারবার নীতি-নৈতিকতাকে বিসর্জন দিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী টেনে নিয়েছেন তারা। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সেখানে তাদের কিছুই শেখানো হয়নি। বরং, এক কোর্স  থেকে আরেক কোর্সে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  এভাবেই বারবার শিক্ষার্থীদের থেকে কোর্স ফি-এর নামে টাকা আদায় করেছেন তারা।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গত বছরের ১৬ অক্টোবর কোর্সের টাকা ফেরতের দাবিতে সাইফুরসের পান্থপথ, ফার্মগেট ও নীলক্ষেত শাখার সামনে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

সাইফুরসের একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন সাইফুরসে কোর্স করা কেউ লজ্জায় তার সিভিতে উল্লেখ করেন না—তিনি সেখানে কোচিং করেছেন। 

ফেসবুকে রিসালাত ইসলাম নামের একজন বলেন, সাইফুরস আসলেই ভুয়া। আমিও গিয়েছিলাম ইংরেজি শিখতে। তারা বলেছিলেন, আমাকে এক মাসে বুলেট বানিয়ে দেবে ইংরেজিতে। বুলেট হওয়া দূরের কথা, খোসাটাও হতে পারিনি। যেই স্যারেরা ক্লাস নিয়েছিলেন, পরে জানতে পেরেছি, তারা আমাদের কলেজেরই নতুন স্যার, নতুন জয়েন করেছেন। অথচ বলা হয়েছিল, ঢাকা থেকে আসেন স্যাররা। এসি নেই, বসার পরিবেশ নেই। তবু ৫০০০ টাকা নিয়েছিল। অভিযোগ করেছিলাম হেড অফিসে, লাভ হয়নি।

এদিকে, সাইফুরস থেকে ইংরেজি শিখে হ্যাকার বানানোর বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গত ২৩ মার্চ সচিবালয়ে বলেছেন, চোর বানানোর বিজ্ঞাপন দিয়ে সাইফুরস মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।একই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী কোচিং সেন্টারটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

সাইফুরসের বাহারি বিজ্ঞাপন

এদিকে, ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে সাইফুরস ক্ষমা চেয়ে রেহাই পেতে যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। এর মধ্যস্থতা করছেন সাংবাদিক পরিচয়ে চার শিবিরকর্মী। জানা যায়, সাইফুরসের প্রধান শাখা ফার্মগেট শাখায় এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন তারা। সেখানে সাইফুরস ক্ষমায় পার পেতে চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। প্রয়োজনে তারা সংবাদ সম্মেলন করে কিংবা যেভাবেই হোক ভুল স্বীকার করবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে  প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আশরাফ উদ্দিন জুয়েল বলেন, আমি বাইরে। বিষয়টা ভুল এবং মিথ্যাতথ্যে ভরা। আমাদের প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় মোটেও, এটি মিথ্যা খবর।

সাংবাদিক কাম চার শিবির নেতার সঙ্গে বৈঠক নিয়ে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেবে কি না—জানতে চাইলে শেরে বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোপাল গনেশ বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এ ধরনের কোনও বৈঠকের কথা জানা নেই তাদের। যদি এর সত্যতা পাওয়া যায়, অবশ্যই তারা পদক্ষেপ নেবেন।

তবে, হ্যাকার বানানোর বিজ্ঞাপনই প্রথম নয়, সাইফুরস এর আগেও নানা রকম বৈষম্যমূলক বিজ্ঞাপন দিয়ে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সাইফুরসের বাহারি বিজ্ঞাপন

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীর সঙ্গে মেয়ের বিয়ে হয়েছে কেবল সাইফুরস থেকে ইংরেজি শিখতে পারায় এমন একটি বিজ্ঞাপন সাইফুরস দিয়েছে বেশ কিছুদিন হলো। এটা বিজ্ঞাপনের কেমন মাপকাঠি—জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই বিজ্ঞাপন দুটি ছাঁচিকৃত অংশ প্রকাশ করেছে। একটি হলো, বিদেশ গমন সম্পর্কে আকাঙ্ক্ষা। অর্থাৎ, অস্ট্রেলিয়ায় যেতে পারাকে সাফল্যের মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিয়ে এটি সর্বজনের প্রত্যাশা বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, অস্ট্রেলিয়া প্রববাসী পাত্রকে বিয়ে করতে পারাই একটি মেয়ের যোগ্যতা বলে প্রচার করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে, একজন মেয়ের জন্য ইংরেজির মতো একটি আন্তর্জাতিক ভাষা শেখার প্রয়োজন হবে নিজে সাবলম্বী হওয়া, যোগাযোগ ক্ষমতা বাড়ানো কিংবা স্ব-উদ্যোগে ইংরেজিভাষী দেশে যাওয়ার জন্য নয়; শুধু বিয়ে করতে পারার জন্য। আর সেটাই তার সার্থকতা।

সাইফুরসের বাহারি বিজ্ঞাপন ১

এভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে শিক্ষার্থী টানা কতটুকু নৈতিক—জানতে চাইলে গীতিআরা নাসরিন বলেন, বিজ্ঞাপনের মূল কাজতো পণ্য বা সেবার বিক্রি। এই বিজ্ঞাপণটিও তাই করেছে। তবে লক্ষণীয় যে, ইংরেজি শিক্ষাকে এখানে আধুনিক একটা ব্যাপার  বলে মনে করা হয়, এবং বিশে যাওয়ার মতো একটি গণ্ডি অতিক্রমণের কথা বলছে যে বিজ্ঞাপন, মূল চিন্তাধারার দিক থেকে এই বিজ্ঞাপনটি সেই পুরনো গণ্ডি অতিক্রম করতে পারেনি। নারী যেখানে নানা ক্ষেত্রে কাজ করছেন, নানা জায়গায় ভ্রমণ করেছেন, শিক্ষার হার যেখানে বাড়ছে; সেখানে  এ ধরনের বিজ্ঞাপণ নারীর যোগ্যতাকে শুধু বিবাহেই সীমাবদ্ধ করে রাখছে। শুধু এই বিজ্ঞাপণটিই নয়, আরও অনেক বিজ্ঞাপণ বিশ্লেষণ করলে আমরা নারীকে অনগ্রসর ছাঁচে ঢালা ভূমিকায় উপস্থাপন করার চেষ্টা দেখতে পাব।

এসব বিজ্ঞাপন নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আশরাফ উদ্দিন জুয়েল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিজ্ঞাপনগুলো আমরা আমাদের জায়গা থেকে করেছি। আমাদের মূল জায়গাটা হলো ইংরেজি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। কিন্তু ইংরেজি শেখানোর গুরুত্ব বোঝানোর জন্য যা ইচ্ছে, তাই লিখে বিজ্ঞাপন কেন তৈরি করা হলো—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইংরেজিটাকে হাইলাইট করা বা এর গুরুত্ব বোঝানোর জন্যই আমরা  এভাবে লিখেছি, কাউকে ছোট করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।  

  /এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
এফডিসিতে মারামারি: যৌথ বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হলো
বাংলাদেশকে ‘সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশকে ‘সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ দেশ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
আরও কমলো সোনার দাম  
আরও কমলো সোনার দাম  
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
 ১ পদে ২৩৮ জনকে চাকরি দেবে ভূমি মন্ত্রণালয়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না