X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

একই নামে দল, দুই জোটে

এমরান হোসাইন শেখ
০৭ আগস্ট ২০১৬, ২১:২৬আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০১৬, ২১:৩৪

 

দুই-জোট বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (মার্কসবাদ-লেনিনবাদ) বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত। দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন অংশটি রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে। ‍আর সাঈদ আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী দলের অন্য অংশটি রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে। ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ রয়েছে ২০ দলের সঙ্গে। একই দলের অন্য একটি অংশের সরকার দলীয় ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলেও মহাজোটের অংশ হিসেবে সরকারের প্রতি রয়েছে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন।
শুধু এই দুই দল নয়, দেশের নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দলের খণ্ডিত অংশ এভাবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধেছে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্তত ৩টি রাজনৈতিক দল রয়েছে, সেগুলোর খণ্ডিত অংশ বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটেও রয়েছে। দলটি তিনটি হলো সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি ও ন্যাপ।  এর বাইরে আরও একাধিক দলের খণ্ডিত অংশ রয়েছে যাদের যুগপথ একটি অংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিচ্ছে তো অন্য অংশ দিচ্ছে বিএনপিকে সমর্থন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০১ সালে বিএনপি চার দলীয় জোট গঠন করে। পরে ২০১২ সালে ওই জোট সম্প্রসারণ করে প্রথমে ১৮ ও পরে ২০ দলীয় জেটে পরিণত হয়। গত দুই বছরে ২০ দলীয় জোট থেকে অন্তত ৩টি দল বেরিয়ে গেলেও বিএনপির দাবি মতে, এ দলগুলোর একটি অংশ তাদের সঙ্গে থেকে গেছে।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ২০০৪ সালের শেষ দিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাম ঘরানার রাজিনৈতিক দল জাসদ, ন্যাপ ও ১১ দলীয় জোট নিয়ে গঠিত হয় ১৪ দলীয় জোট। অবশ্য শুরু থেকেই ১১ দলীয় জোটের মধ্য থেকে ৪টি দল এ জোটের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকে। বনিবনা না হওয়ায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামও একসময় এ জোট থেকে বেরিয়ে যায়। এর বাইরে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল ‘নির্বাচনি’ ঐক্যের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট গঠিত হয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মহাজোট ভেঙে গেলেও অটুট থাকে ১৪ দলীয় জোট। এ সময় আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশন যুক্ত হওয়া পাশাপাশি ১১ দলীয় জোটের শরিক বাসদের একটি অংশ ফিরে আসে এ জোটে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১৪ দলীয় জোটে সদস্য হচ্ছে ১২। অবশ্য জাসদ সম্প্রতি বিভক্ত হলেও দুটো অংশটি এখনও ১৪ দলের সঙ্গে রয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জোটভুক্ত দলগুলোর অবস্থান পর্যালোচনা করলে দেখা গেছে, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), সাম্যবাদী দল ও জাতীয় পার্টির খণ্ডিত অংশ দুই জোটেই রয়েছে। এর মধ্যে ন্যাপের (মোজাফ্ফর) যে অংশটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে, সে অংশটি মূলত ষাটের দশক থেকেই বিভক্ত হয়ে আছে। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠিত হওয়ার পরপরই ১৯৬৭ সালে ওয়ালি খান ও মোজাফ্ফর আহমেদের নেতৃত্বে এই গ্রুপটি বেরিয়ে আসে। আর ১৯৭৪ সালে ভাসানীর পদত্যাগের পর থেকে অন্য অংশটি ভাঙাগড়ার মধ্য দিয়ে কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত থাকে। এর মধ্যে দু’টি খণ্ড এখন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে রয়েছে।

এরশাদ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে তার দল জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখোমুখি হয়। প্রত্যেক ভাঙনে দলের খণ্ড বাড়তে থাকে। বর্তমানে জাতীয় পার্টির ৫টি খণ্ডের অস্তিত্ব রয়েছে। এর মধ্যে আন্দালিব রহমান পার্থ ও মরহুম কাজী জাফর আহমেদ নেতৃত্বাধীন দুটি অংশ রয়েছে বিএনপি জোটের সঙ্গে। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জেপি) যুক্ত হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির প্রধান অংশটি বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও সরকারি দলের প্রতি দলটির আকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। দলটির ৩ জন নেতা বর্তমানে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য। এছাড়া এরশাদের জাতীয় পার্টি ২০০৬ সাল থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্ব-পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে ছিল।

এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ সরাসরি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকলেও ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের কোনও অংশের সম্পৃক্ততা নেই। অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যে মহাজোট গঠন করা হয়েছিল, সেখানে মিজবাহুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশের সম্পৃক্ততা ছিল। বর্তমানে মহাজোটের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম না থাকলেও ইসলামী ঐক্যজোটের এই অংশটির সরকারের প্রতি সমর্থন রয়েছে। মিজবাহুর রহমান বর্তমানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে হাসানুল হক ইনু ও শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) শুরু থেকেই ১৪ দলীয় জোটে থাকলেও আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) জোট দু’টির বাইরে থেকে গত একদশক ধরে রাজনীতি করে ‍আসছে। অবশ্য সম্প্রতি জঙ্গিবাদ ইস্যুতে একই প্ল্যাটফর্মে আসতে জেএসডি ও বিএনপির মধ্যে প্রস্তাব-পাল্টা প্রস্তাব চলছে।

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!