X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙছে জাগপা

সালমান তারেক শাকিল
০৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৬:২৬আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০১৬, ১৭:১৪

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি  

আবারও ভাঙনের কবলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এবার জোটের শরিক জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) একটি অংশ দলটির সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের ওপর অনাস্থা জানিয়ে পৃথক দল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন ডেকে দল ও ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করবে তারা। এ সময় নতুন কাউন্সিলের ঘোষণাও দেবেন প্রধানের নেতৃত্ব ছেড়ে আসা নেতারা। বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন নতুন জাগপার সম্ভাব্য সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু।

জানা গেছে, দলীয় সভাপতি প্রধানের স্বেচ্ছাচারিতা ও যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং  রাজনৈতিকভাবে নির্বাচনমুখী চর্চা অব্যাহত না রাখার কারণেই জাগপায় ভাঙন ধরছে। বিদ্রোহী অংশটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু ও যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান।

নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দলে ভাঙছে জাগপা

বাবলু জানান, তার সঙ্গে ঠিক কতজন নেতা প্রধানের নেতৃত্বে অনাস্থা জানাবেন তা এখনও তিনি বলতে পারছেন না। তবে দলের বেশিরভাগ নেতাই তার সঙ্গে আসবেন বলে ধারণা করছেন তিনি। তার দাবি, নগর সেক্রেটারি সানাউল্লাহ সানু, সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরসহ অনেকেই তার নেতৃত্বে একমত হয়েছেন।

মহিউদ্দিন বলেন, আমরা খুব শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে জাগপা ভাঙার কারণ ও নতুন কাউন্সিল নিয়ে বক্তব্য পেশ করব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাগপার মহাসচিব খন্দকার লুৎফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত মাসে কনভেনশন হওয়ার পর এখন কোনও কমিটি নেই। পুরাতন কমিটি কার্যকর নেই। আমরা ১৫ অক্টোবর কমিটি করব। এখন ওরা হয়তো ভাবছে নতুন কমিটিতে কী পাবে, পাবে না তাই দুশ্চিন্তা কাজ করছে। এ কারণে চলে যাওয়ার কথা বলছে।

তিনি আরও বলেন, পদের বাইরেও সরকার তো দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছে বিরোধীজোটে ভাঙন ধরানোর। এ ক্ষেত্রে তারা হয়তো সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতেই এমন করছে।

তবে মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিবাদ করে মহিউদ্দিন বাবলু বলেন, সরকারি সুবিধা নিলে বহু আগেই নিতে পারতাম। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে অবস্থানকারীর রাজনীতি করি না। এ কারণেই নতুনভাবে শুরু করব আমরা।

ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে জোটের সমন্বয়ক ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওরা গভর্নমেন্ট এর পয়সা খেয়েছে। যাবেই তো।’

প্রথমবার ভাঙল জাগপা

এদিকে কয়েকজন সিনিয়র নেতার বেরিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ভাঙছে ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত জাগপা। জাতীয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এসেছিল দলটি। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম প্রধান। ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল রমনার সবুজ চত্বরে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি জাগপা নামের রাজনৈতিক দলের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ‘কোনো কিছুই বিনা চ্যালেঞ্জে যেতে দেওয়া হবে না’- এ অঙ্গীকার নিয়ে ১৯৮০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রলীগের বর্ধিত সভায় জাগপা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।

চাঙ্গা হতে পারে সেভেন মার্ডার মামলা!

১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে সাতজন ছাত্রকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনা এখনও ‘মুহসীন হলের সেভেন মার্ডার’ হিসেবে পরিচিত। সেই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়েছিলেন শফিউল আলম প্রধান। বিচারে তার কারাদণ্ড হয়েছিল। যদিও প্রধানের দাবি, তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তের বলি হয়েছেন।

প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানিয়েছে, শফিউল আলম প্রধানের বিরুদ্ধে ওই মামলাটি আবারও সক্রিয় করা হতে পারে।

দুই বছরে ৩ বার ভাঙল বিএনপি-জোট

এ বছরের ৭ জানুয়ারি ইসলামী ঐক্যজোটের বেরিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে বড় ধরনের ভাঙনের মুখে পড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জোটটি ছেড়ে শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- এনডিএফের জন্ম হয়েছিল। এবার জাগপার একটি অংশ বেরিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তৃতীয়বারের মত ভাঙনের মুখে পড়ল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট।

১৯৯৯ সালের দিকে আওয়ামী লীগের গত আমলে নির্দলীয় সরকারের দাবির আন্দোলনে গতি আনতে চারদলীয় জোটের পরিসর বাড়িয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটের পর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যোগদানের মধ্য দিয়ে তা ১৯ দল হয়েছিল। এরপর সরকারের শরিক সাম্যবাদী দলের একাংশ যোগ দিলে তা হয় ২০ দল। এরপর নতুন কোনও দল যোগ না দেওয়ায় ২০ দলীয় জোট থেকে দলের সংখ্যা কমতে থাকে। প্রথমে বের হয় শেখ আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী। প্রধানমন্ত্রীর ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পর ২০১৪ সালের আগাস্টে জোট থেকে বহিষ্কার করা হয় শেখ শওকত হোসেন নীলু নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টিকে (এনপিপি)। ওই জোটের অন্যতম দলগুলো হচ্ছে, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ (আনোয়ারুল হক), মুসলিম লীগ (জোবাইদা কাদের-আতিক), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি (আলমগীর মজুমদার), ভাসানী মঞ্চ (মমতাজ চৌধুরী), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি (আবদুর রশিদ প্রধান), লেবার পার্টি (সেকান্দর আলী), ইনসাফ পার্টি (শহীদ চৌধুরী)। এর মধ্যে মুসলিম লীগ, এনডিপি, ইসলামিক পার্টি, লেবার পার্টি ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। তবে, দেখা গেছে, কেউ জোট থেকে বেরিয়ে গেলে আরেক নেতার নেতৃত্বে অন্য একটি অংশ ২০ দলে থেকে যাচ্ছে, যা এনপিপির ক্ষেত্রেও হয়েছে।

 /এসটিএস/টিএন/

আরও পড়ুন: মা-বোনদেরও আত্মঘাতী দলে টেনেছিল আকাশ!

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা