X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

চীনের প্রেসিডেন্টের কাছে বিএনপির দুই প্রত্যাশা

সালমান তারেক শাকিল
১৩ অক্টোবর ২০১৬, ২৩:২৩আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০১৬, ০৩:০৫

বিএনপি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক চোখে দেখছে বিএনপি। প্রায় ৩০ বছর পর এই পরাশক্তি দেশটির প্রধানের সফরে অন্তত দু’টি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায় দলটি। বিষয় দুটি হলো চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ‘কান্ট্রি টু কান্ট্রি’ এবং ‘পার্টি টু পার্টি’ সম্পর্ক আরও জোরদার করা। আর এ দুটি বিষয়েই চীনের প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানাবে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপির প্রতিনিধি দল। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো চীনের কোনও প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে ১৯৮৬ সালে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট লি শিয়ানিয়ান ঢাকা সফর করেন।

গত দুই বছরে বিএনপির অন্তত চারটি প্রতিনিধি দল চীন সফর করে এসেছে। এসব সফরে ‘চায়না ড্রিম প্রজেক্ট সিল্ক রোড’, ‘সাউথ-চায়না সি’, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কসহ নানা বিষয়ের ওপর আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য রেখে এসেছেন বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। বিএনপি নেতারা বলছেন, চীনের প্রধান উদ্দেশ্য সিল্ক রোডে বাংলাদেশকে যুক্ত করার মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্বকে আরও সংহত করা। আর বিএনপিও চীনের এই উদ্দেশ্য সাধনে নিজেদের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরতে চায়।

গত বছরের শেষ দিকে চীন সফরে সিল্ক রোড বিষয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। বিএনপির সঙ্গেও সম্পর্ক অনেক দৃঢ়। আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে চীনের বিনিয়োগসহ নানা ক্ষেত্রে দেশটির উন্নয়ন সহযোগিতা রয়েছে। ফলে, চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে।’

বিএনপির প্রত্যাশার বিষয়ে বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের এই সদস্য বলেন, ‘প্রধানত পিপল টু পিপল, কান্ট্রি টু কান্ট্রি সম্পর্ক আরও উন্নত হবে। এমনকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে বিরাজমান সুসম্পর্ক আরও এক ধাপ এগুবে।’

তবে বিএনপির কেউ-কেউ মনে করেন, বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কী ধরনের আলোচনা হবে, এ নিয়ে বিএনপির অবস্থান রাখার সুযোগ নেই। কারণ হিসেবে তারা মনে করেন, সরকার দেশে গণতন্ত্র চর্চা রাখেনি। ফলে, সরকার বাংলাদেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করলেও বিএনপির সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। এতে  স্পষ্ট যে, চীনের কাছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রত্যাশা থাকলেও বিএনপির কার্যকর ভূমিকা রাখার কোনও সুযোগ নেই।

 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর অবশ্যই ইতিবাচক। আমরা আশা করছি, শি জিনপিংয়ের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুন্দর হবে। তবে তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কী আলোচনা হবে, এ নিয়ে তো আমাদের বলার কিছু নেই। সরকার তো আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছে না। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতিই নেই, যে বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তির আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করতে হয়।’

শি জিনপিংয়ের সফর নিয়ে বিএনপিতে প্রত্যাশা থাকলেও দলটির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টের প্রতি কোনও রাজনৈতিক আহ্বান থাকবে কিনা বা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনও অবস্থান ব্যক্ত হবে কিনা—এসব বিষয়ে বিএনপিতে কোনও প্রস্তুতি বা অবস্থান নেওয়ার কোনও খবর মেলেনি। দলটির নেতারা চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেও সাংগঠনিক অবস্থান নিয়ে অনেকটাই নীরব।

 শি জিনপিং ও খালেদা জিয়ার বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনও প্রস্তুতি আছে কিনা, এমন প্রশ্নে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এটি পররাষ্ট্র উইং দেখছে।’

এই উইংয়ের অন্যতম সদস্য সাবিহ উদ্দিন আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি একটি পলিটিক্যাল দল। যেকোনও দলেই এ ধরনের প্রস্তুতি থাকে। আমাদেরও আছে।’

স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘দুই দেশের সম্পর্ক অনেক পুরনো। শুধু আমাদের নয়, বাংলাদেশের সব দলের সঙ্গেই চীনের সম্পর্ক মহৎ। চীনের প্রেসিডেন্টের এই সফরের মধ্য দিয়ে এই সম্পর্ক আরও মধুর হবে।’

যদিও বিএনপির শাসনামলে ঢাকায় তাইওয়ানের ট্রেড সেন্টার খোলার অনুমতিকে কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটেছিল। পরবর্তী সময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলে চীন সফরে যান খালেদা জিয়া। এমনকি চীনের কয়েকটি রাজনৈতিক প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে এসে তার সঙ্গে বৈঠক করে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশ-চীনের জোরদার রাজনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল। তিনি এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক বাড়নোর বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। তাই অর্থনৈতিক শক্তি তৈরির জন্য সার্ক গঠন করেছিলেন।’

 বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের শুধু ভালোবাসার সম্পর্ক নয়, স্বার্থেরও। সেই স্বার্থ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণে চীনের সহযোগিতা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো।

আরও পড়ুন: খালেদা জিয়া-শি জিনপিং সাক্ষাৎ কাল

 /এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী