X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরিক দলগুলোকে গুনছেন না খালেদা জিয়া

সালমান তারেক শাকিল
১৬ নভেম্বর ২০১৬, ২২:৫৯আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০১৬, ১৪:৪৪

খালেদা জিয়া আগামী ফেব্রুয়ারিতে আবদুর রকিব কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এ কারণে নতুন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী শুক্রবার বিকালে গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিনে আড়ম্বরপূর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব তুলে ধরবেন। ইতোমধ্যে বিএনপির একটি উচ্চ পর্যায়ের টিম প্রস্তাবনা সুনির্দিষ্ট করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। দলীয়ভাবে প্রস্তাবনা নিয়ে সুসংগঠিত কাজ হলেও ২০দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া জোটের কোনও শরিক দলের সঙ্গে ইসি পুনর্গঠন বিষয়ক প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেননি। জোটনেতারা বলছেন, নির্বাচনি জোট হয়ে ইসি নিয়ে আলোচনা না হওয়া নীতিগতভাবে জোটের ঘোষণাপত্রবিরোধী।

জোটের শরিক দল, বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে আলোচনা হয়নি। বৈঠকের কোনও খবর পাইনি। তবে যেহেতু জোটের সঙ্গে আলোচনা হয়নি, সেহেতু প্রস্তাবনাটি বিএনপির দলীয়ই হবে।’

জোটের আরেক শরিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক আহমদ আবদুল কাদের বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যতদূর জেনেছি, বৈঠক হবে। তবে এখনও আমন্ত্রণ পাইনি। আর নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে প্রস্তাব নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিএনপির কোনও আলোচনা হয়নি।’

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের একটি নির্ভরশীল সূত্র জানায়, আগামীকাল ২০ দলীয় জোটের কোনও বৈঠক হচ্ছে না।’

চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সফররত একটি প্রতিনিধি দল খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ওই সাক্ষাতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকজন সিনিয়র নেতা উপস্থিত থাকবেন।’

গত ১৩ জুলাই ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে খালেদা জিয়া

বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘বুধবার রাত ৯ টা পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের কোনও আমন্ত্রণ তারা পাননি। যদিও গত ৬ নভেম্বর জাপা (জাফর) অংশের প্রেসিডিয়ামের সঙ্গে বৈঠকে খালেদা জিয়া জোটের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনার কথা জানিয়েছিলেন। বাংলা ট্রিবিউনকে ওইদিন বৈঠক শেষে জাপার মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার জানান, ‘শিগগিরই হয়তো জোটনেত্রী এ দু’টি বিষয়ে জাতির সামনে আসবেন।’ তবে এর আগে তিনি জোটের সঙ্গে বসবেন বলেও জানান। তিনি বলেছেন, ‘যে শিগগিরই এ ব্যাপারে সবাইকে ডাকবেন।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা সম্ভবত আগামীকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঠিক হবে। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’

যদিও গত ১৪ নভেম্বর খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও এর কাঠামো সম্পর্কে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির প্রস্তাবনা আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করবেন।

২০ দলীয় জোটভুক্ত একটি শরিক  দলের চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘১৮ দলীয় জোট গঠনের সময়ই ঘোষণাপত্র ছিল, যে এই জোট নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হবে। এটি নির্বাচনকালীন জোট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বিএনপির নেতারাও বলেছেন সব সময়। তবে এখন কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেবেন, কিন্তু জোটকে বলাই হলো না। কেন?’

জোটের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা নামসর্বস্ব দল, লাখ টাকার না হতে পারি, হাজার টাকার দল তো। নিবন্ধিত দল হিসেবে ছোট করে দেখা তো ঠিক নয়। এই জোট কার্যকর নয়।’ তিনি বলেন, ‘২০ দলের সদস্য হিসেবে লজ্জা লাগে। যে এই দলের জোটে আছি। যে দল আমাদের সঙ্গে কথাই বলে না। প্রস্তাবের দাওয়াত পেয়েছি, কিন্তু প্রস্তাব নিয়ে কোনও আলোচনাই হলো না!’

ইসলামী ঐক্যজোটের (একাংশ) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে ম্যাডামের কোনও কথা হয়নি। তবে আমি যাব। নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা না হলেও আমি যাব। এটা হতে পারে কৌশল।’

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নির্বাহী সভাপতি মুফতি ওয়াক্কাছ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনও আলোচনা হয়নি বিএনপির সঙ্গে। জোটের বৈঠকের পর বলতে পারব।’

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অদ্যাবধি কোনও আমন্ত্রণ পাইনি। তবে জোট যেহেতু আন্দোলনের, সেহেতু নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা নাও হতে পারে। জোট হচ্ছে, আন্দোলনে বিজয়ী হলে আসন বণ্টনের।’

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্য জোট মিলিত হয়ে চার-দলীয় ঐক্য জোট গঠন করে। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল বিএনপি আরও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একীভূত হয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটের পর কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির যোগ দিলে ১৯ দলীয় জোটে পরিণত হয়। এরপর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল সাম্যবাদী দলের একাংশ যোগ দিলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটি  ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চার দলীয় জোটের সময় থেকে বিএনপির সঙ্গী ইসলামী ঐক্যজোট বেরিয়ে যায়। এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জোটটি ছেড়ে শেখ শওকত হোসেন নীলুর নেতৃত্বে ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) জন্ম হয়েছিল। এরপর নতুন কোনও দল যোগ না দিয়ে ২০ দলীয় জোট থেকে দলের সংখ্যা কমতে থাকে। সর্বশেষ শরিক জাগপার সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন বাবলু ও যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বেরিয়ে গিয়ে নতুন জাগপা গঠন করে জোটত্যাগ করেন।

একটি শরিক দলের চেয়ারম্যান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাজনীতি বদলাচ্ছে। সব সময় এক থাকে না। হাওয়া বদল হবেই। বিএনপির আচরণ আমাদের বাধ্য করবে যেকোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে।’

সংবাদ সম্মেলনের প্রেস রিলিজ

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি শরিক দলের সিনিয়র একজন নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘বিএনপি কখনও গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে জোটের সঙ্গে পরামর্শ করে না। অতীতে করেনি, ভবিষ্যতে করবে কিনা, জানি না। ওয়েস্টিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে শুধু চেয়ারম্যানদের। একটি করে কার্ডও দেওয়া হয়েছে। এটা তো স্পষ্ট তো অপমান।’ তিনি নেতা বলেন, ‘বিএনপি জোটের বৈঠক করে ও আগামী শুক্রবারের বৈঠকেও জোটের নেতাদের রাখা হয়েছে শুধু দেখানোর জন্য। দেশে-বিদেশে দেখানো যে, তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক দল আছে।’
জোটের একাধিক দল বিএনপির আলোচনা না করার বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে নিলেও জামায়াতের নির্ভরযোগ্য একনেতা ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। দলটির উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগের চেষ্টা করে কোনও নেতার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলেও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার একজন সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটা কৌশল হতে পারে। হয়তো এখন কাউকে সামনে রাখতে চায় না বিএনপি। এক্ষেত্রে জোটের না করে বিএনপির ব্যানারেই করা হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যকে কল করা হলেও তারা এ নিয়ে কথা বলতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল একাধিক মিডিয়াকে জোটের বৈঠকের কথা বলেছিলেন। বুধবার রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ বৈঠক হচ্ছে না, ততক্ষণ হচ্ছে না। যখন হবে, তখন আপনিও জানবেন, আমিও জানব।’

নির্বাচন কমিশনের বিষয়ে আলোচনার বিষয়ে প্রতিবেদককে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘এটা নিয়ে তর্ক-বিতর্কের কিছু নেই। হলে জানবেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব ও জোটের সমন্বয়ক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘শক্তিশালী  ইসি গঠনের রূপরেখা বিএনপি এককভাবেই উপস্থাপন করবে। পরে প্রয়োজন হলে শরিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করা হবে।’

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
দুবাই হয়ে ট্রানজিট ফ্লাইট স্থগিত করলো এমিরেটস
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
ঢাকা শিশু হাসপাতালে আগুন
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
রাজশাহীতে বইছে তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ