X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুকে নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন কাস্ত্রো: ড. কামাল

সালমান তারেক শাকিল
২৬ নভেম্বর ২০১৬, ২২:৫২আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০১৬, ১২:৫৩


ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে কয়েক বছর আগে ড. কামাল হোসেন। ড. কামাল হোসেনের বাসভবন থেকে তোলা ছবি: প্রতিবেদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, এমন তথ্য জানিয়েছেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৩ সালে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন (ন্যাম)-এর বৈঠককালে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দিয়েছেন কাস্ত্রো।’ শনিবার বাংলাদেশ সময় পৌনে ৫টার দিকে নেদারল্যান্ডস-এর হেগ থেকে মোবাইলফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

খ্যাতিমান এই আইনবিদ আন্তর্জাতিক একটি সালিশিতে বিচারক হিসেবে অংশ নিতে নেদারল্যান্ডস রয়েছেন। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনও দিন তিনি দেশে ফিরবেন। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি জানান, কাস্ত্রোর সঙ্গে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর যে সম্প্রীতি ছিল, দেশে ফিরে তিনি এ বিষয়ে একটি সেমিনারের আয়োজন করবেন।

 বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক থাকতে কাস্ত্রোর পরামর্শ 

১৯৭৩ সালে জোটবহির্ভূত সম্মেলনের সময় বাংলাদেশে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওই সময় ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর এক ঘণ্টার মতো বৈঠক হয়।’ ওই বৈঠক কেমন ছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কাস্ত্রোর খুব আন্তরিক কথা হয়। ব্যক্তিগতভাবে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। তারা উষ্ণতার সঙ্গে কথাগুলো বলেছিলেন।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানালেন কাস্ত্রো। বাংলাদেশের প্রতি তার যে একাত্মতা, তা জানালেন বঙ্গবন্ধুকে।’ তিনি বললেন, স্বাধীনতা পাওয়ার পর নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। কারণ, অনেক রকম ষড়যন্ত্র হতে পারে। নিরাপত্তার কথা বারবার বললেন। কাস্ত্রো বলেছেন, যারা আপনাদের স্বাধীনতা চায়নি, তারা কিন্তু লেগে থাকবে। এটা মেনে নিতে চাইবে না। কাস্ত্রোর কথার বিষয়বস্তু এটাই ছিল। একদিকে যেমন অভিনন্দন জানালেন, অন্যদিকে সতর্কতা অবলম্বন করতেও পরামর্শ দিলেন।’ 

কাস্ত্রো শেষ সারিতে বসলেন

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে, আমি ৩/৪ বছর আগে হাভানায় গিয়েছিলাম জাতিসংঘের একটা মিটিংয়ে। ওখানে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি নিয়ে ওই মিটিং ছিল। এরপর আমরা একটা টিভি ইন্টারভিউতে গেলাম। হঠাৎ টেলিভিশনের স্টুডিওর দরজা খুলে ফিদেল নিজেই ঢুকলেন। এরপর শেষ সারিতে বসে পড়লেন।’

 ড. কামাল হোসেনের বেইলি রোডের বাসভবনে লেখার টেবিল। এভাবেই সাঁটানো ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তার ছবি: প্রতিবেদক

গণফোরাম সভাপতি বলছিলেন, ‘যখন প্রশ্নোত্তর পর্ব চললো, তখন তিনিও হাত তুললেন। তিনিও প্রশ্ন  রাখলেন। আমি তো অবাক হয়েছি যে, তার মতো একজন ব্যক্তি সাধারণ প্রোগ্রামে চলে আসলেন, আলোচনা শুনলেন, প্রশ্ন করলেন! পরে অনুষ্ঠান শেষে আমি তার কাছে গিয়ে আমার শ্রদ্ধা জানালাম। এ সময় তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললাম, আপনার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়েছিল। তিনি আপনাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি ফিদেল কাস্ত্রোকে বললাম, এ বছরেই জোটনিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলন হতে যাচ্ছে, এটা বাংলাদেশে হওয়ার কথা। আপনি এই সম্মেলনে এলে বাংলাদেশের মানুষ খুব অনুপ্রাণিত হবে। তার ফরেন মিনিস্টারকে আমি বললাম, দেখুন; তাকে যদি আনতে পারেন, সেটা শুধু আমাদের সৌভাগ্য নয়, সারাজাতি অনুপ্রাণিত হবে। ওই কথা শুনলেন। কিন্তু তারপরে তো সম্মেলনও হয়নি, তার আসাও হয়নি।’

সদ্য প্রয়াত ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তাকে এতবার হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কেউ পারেনি। তিনি কিউবাতে যে বিপ্লব ঘটালেন, তাকে তিনি রক্ষা করে এতদিন যত্নের সঙ্গে একটি দাঁড়ানোর অবস্থায় এনে দিলেন।’

বঙ্গবন্ধু তাকে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা করেছেন

বঙ্গবন্ধু সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, ‘অনেক নেতার সঙ্গেই বঙ্গবন্ধুর দেখা হয়েছিল। কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হয় আলজেরিয়ায় প্রথম জোটবহির্ভূত শীর্ষ সম্মেলন। কাস্ত্রোর প্রতি বঙ্গবন্ধুর অগাধ শ্রদ্ধা ছিল। বঙ্গবন্ধু যে দুই-চারজনকে অন্তর থেকে যাদের শ্রদ্ধা করেছেন, যাদের কথা বারবার বলেছেন, ফিদেল কাস্ত্রো তাদের একজন।’ তিনি মনে করেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া কাস্ত্রোর পরামর্শ ‘খুব উল্লেখযোগ্য’।  আমরা বারবার স্মরণ করেছি। বঙ্গবন্ধুও বারবার স্মরণ করেছেন কাস্ত্রোর পরামর্শের কথা। আমরাও তাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, এ ব্যাপারে তার গুরুত্ব দেওয়া উচিত। ৭৫-এ যখন ঘটনা ঘটলো, তখন তার কথা মনে পড়লো, যে কাস্ত্রোর কত দূরদর্শিতা ছিল যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করার সঙ্গে-সঙ্গেই এ ব্যাপারটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আমরা তখন বুঝেও এটা বুঝতে পারিনি।’  

উল্লেখ্য, ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হিমালয়ের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে সরকার কাস্ত্রোকে 'মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা' দেয়। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময় ও বিভিন্ন দুর্যোগকালেও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই নেতা।

শুক্রবার ৯০ বছর ফিদেল কাস্ত্রো মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন।

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!