X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংবর্ধনা উৎসব চলছে আ. লীগে

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৮ নভেম্বর ২০১৬, ২৩:১৭আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৬, ২৩:১৮

আওয়ামী লীগ সংবর্ধনা উৎসব চলছে আওয়ামী লীগে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক এমনকি কেন্দ্রীয় সদস্য কেউ এই উৎসবের বাইরে নন। সংবর্ধনা নিতে ব্যস্ত সবাই। গত কয়েকদিন ধরে  যেসব কেন্দ্রীয় নেতাকে ফোন করা হয়েছে তাদের সবাই আজ এখানে তো কাল ওখানে সংবর্ধনায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। জেলায় উপজেলার নেতারাও নব নির্বাচিত নেতাদের সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আযোজন করছে। আর কেন্দ্রীয় নেতারাও এতে সাড়া দিচ্ছেন বেশ। একজন নেতা একাধিক জেলায় একাধিক জেলায় সংবর্ধিত হচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের সংবর্ধনা উৎসব নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

আওয়ামী লীগের দফতর সূত্র জানান, কমিটি হওয়ার পর পেরিয়েছে এক মাস। এরমধ্যে বড় ছোট মিলিয়ে এক ডজন সংবর্ধনা উৎসব হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পর্যন্ত সংবর্ধনা নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মাস পুরোটাই কোনও না কোনও জেলায় সংবর্ধনার আয়োজন রয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমন কি সাংগঠনিক সম্পাদকরাও পৃথক সংবর্ধনা গ্রহণ করছেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের নামে উৎসব অনুষ্ঠান হয়েছে মূলত চট্টগ্রামে, কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরে। ১২ নভেম্বর চট্টগ্রাম ও ১৬ নভেম্বর কুষ্ঠিয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে মুলত আয়োজন ছিল তবে কেন্দ্রীয় কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই এ উৎসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ১২ নভেম্বর ফরিদপুরের উৎসব অনুষ্ঠানে মুলত সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান ও বন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এখানে সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন না। ১৫ নভেম্বর চাঁদপুরে দীপু মণি সংবর্ধনা নেন। সেখানে ত্রান ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীও ছিলেন। এছাড়া ১৮ নভেম্বর শুক্রবার ফেনী জেলায় ও ১৯ নভেম্বর শনিবার নোয়াখালী জেলায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এখনও চলছে ফুলের শুভেচ্ছা দেওয়া নেওয়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিকট অতীতে এমন সংবর্ধনা সংস্কৃতি অনেকেরই চোখে পড়েনি। এসব সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভেতরে লুকিয়ে আছে নানা চাওয়া-পাওয়ার হিসাব। নতুন সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের আস্থা অর্জন করাই এসব সংবর্ধনার মুল উদ্দেশ্যে।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনৈতিক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি যেভাবে সংবর্ধনা উৎসব নিয়ে ব্যস্ত তাতে করে দল লক্ষ্যচ্যূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, নতুন কমিটির কাছে জনগনের অনেক প্রত্যাশা। সরকার ও আওয়ামী লীগকে ভীশন ২০২১ বাস্তবায়নে যুগপোযোগী নীতি গ্রহণ করতে হবে। তাতে এ কমিটির গুরুত্বপূণৃ ভমিকা পালন করতে হবে। আমি মনে করি তাদের নতুন নীতি প্রণয়নের প্রতিই বেশি ব্যস্ত হওয়া জরুরি। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা এই সংবর্ধনা উৎসবকে বলছেন, এর মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে দল সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আজকাল সংবর্ধনার মানেই হচ্ছে ধণাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করা। এবং যারা সংবর্ধনার আয়োজন করে তারা বড় নেতাদের নৈকট্য লাভ করা। তিনি বলেন, আমি মনে করি নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের সংবর্ধনা নেওয়ার পরিবর্তে দলকে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠিত করে দলকে আগামী নির্বাচনের জন্যে উপযোগী করে তোলা। অধ্যাপক আরও বলেন, এ সংবর্ধনা দল ও জনগনের জন্যে কোন সুফল আনছে না। সংবর্ধনা নেওয়া নেতারা শুধুই আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন।     

এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। চট্টগ্রামে দলের সাধারণ সম্পাদকের সংবর্ধনায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। আর ফরিদপুরে আব্দুর রহমানের সংবর্ধনায় স্থানীয় নেতাদের বক্তব্যে অনেকটা কাদা ছোড়াছুড়ি হয়েছে। চট্টগ্রামের দুই পক্ষের হাতাহাতির পরে ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তৃণমূল থেকে বেশ কিছু নেতা তুলে আনা হয়েছে। তাদের দলের জন্য অনেক ত্যাগ রয়েছে। তাদের সংবর্ধনা পাওয়া আবশ্যক। তারা বলেন, জাতির নির্বাচনের আগে যে দুই বছর রয়েছে এর মধ্যে কোনও না কোনও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটকে কেন্দ্র করে যাতে তৃণমূলে উৎসবমুখর পরিবেশ বজায় থাকে সেজন্যে এখন থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকায় গিয়ে মাঠ তৈরি করছেন। প্রতিটি সংবর্ধনায় কেন্দ্রের একাধিক নেতা যাচ্ছেন। উদ্দেশ্য একটাই, জাতীয় নির্বাচনের আমেজ তৈরী করা। 

এ প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজি জাফরউল্যাহ বলেন, সংবর্ধনাও একটি রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকান্ড। তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে আমরা মুলত দলের কার্যক্রমই অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, নেতারা যখন বিভিন্ন জায়গায় যান, সেখানে বক্তব্য রাখেন। এগুলোর মধ্যে দলের করণীয় উল্লেখ থাকে। তৃণমূলের নেতাদের নির্দেশনা  দেওয়া হয়। এটি রাজনৈতিক কর্মসূচিরই অংশ। 

গত ২২/২৩ অক্টোবর দুই দিন ব্যাপী দলের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন শেষ করে আওয়ামী লীগ। ২৫ অক্টোবর থেকে শুরু করে তিন দফায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর চলতি মাসের ৮ অক্টোবর টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এরপর থেকেই শুরু হয় জেলায়, উপজেলায় সংবর্ধনা উৎসব। এসব সংবর্ধনা দলের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ঘিরে আয়োজন করা হলেও বেশির ভাগ অনুষ্ঠানেই কেন্দ্রীয় উল্লেখযোগ্য নেতারা উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ড. আব্দুর রাজ্জাক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, বি এম মোজ্জামেল, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ অধিকাংশ নেতাই নিজ নিজ এলাকায় পৃথক সংবর্ধনা নিতেও দেখা গেছে।

/এইচকে/  

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রাজশাহীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হলো বিভাগীয় সর্বজনীন পেনশন মেলা
রুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
নাটোরে উপজেলা নির্বাচনরুবেলকে শোকজ দিলো উপজেলা আ’লীগ, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ পলকের
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
এমপি দোলনের গাড়ি লক্ষ্য করে ইট নিক্ষেপ, সাংবাদিক আহত
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া