X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির উদ্যোগে কেটে যাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা

এমরান হোসাইন শেখ
১২ ডিসেম্বর ২০১৬, ২০:৩৬আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৯:০২

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এই লক্ষ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আগামী সপ্তাহ (১৮ ডিসেম্বর) থেকে ধারাবাহিকভাবে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগের ফলে দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে যাবে। তারা আশা প্রকাশ করছেন, এই আলোচনার পথ ধরেই সব রাজনৈতিক দলের পরামর্শ নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন রাষ্ট্রপতি। নতুন কমিশনের হাতেই সব দলের অংশগ্রহণে সবার কাছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবার গ্রহণযোগ্য হবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিগত সরকারের ধারাবাহিকতায় এবারও সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন কমিশন গঠিত হবে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আগেই জানিয়েছিলেন। এরই মধ্যে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রস্তাবনায় দলটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি বাছাই কমিটি গঠনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। চলতি সংসদের ১৩তম অধিবেশনে সমাপনী (বৃহস্পতিবার) বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, আমরা মেনে নেব।’

এর আগে ২০১১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সার্চ কমিটির মাধ্যমে বর্তমান কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন। ওই বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিলেও শুরু থেকেই বর্তমান কমিশনের সমালোচনা করে আসছে। এই কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষতা দেখাতে’ব্যর্থ’ হয়েছে বলে বিএনপি দাবি করে আসছে।

তবে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের এই উদ্যোগ এবং নতুন নির্বাচন কমিশন সবার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,’রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগটি ভালো, প্রশংসনীয়। আমরা জানতে পেরেছি, তিনি নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই আলোচনা করবেন। আমি মনে করি, সব দলের অভিমত ও পরামর্শ নিয়ে সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি যে নতুন কমিটি গঠন করবেন, তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। ওই কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচন অবাধ-নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হবে বলেও মনে করি।’

এই বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার বি. জে. (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন,’নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি মনে করি, এটি খুবই ভালো। তবে এই উদ্যোগ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, ‘এটি ভালো উদ্যোগ। এর বাইরে এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে চাই না।’

নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনায় বসার জন্য রাষ্ট্রপতি যে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, তাকে শুভ উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বাবিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট রাজনীতি বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির এই উদ্যোগকে ভালা মনে কররি। এরই মধ্য দিয়ে সরকার ও সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলের মধ্যে যে আস্থাহীনতা রয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। আমাদের রাষ্ট্রপতি সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। আমার ধারণা তার এই উদ্যোগ সমাধানের রাস্তা বাতলে দেবে।’

নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উল্লেখ করে তারেক শামসুর রেহমান বলেন, ‘এই কমিশনই ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবে। আমরা চাইব, বর্তমান কমিশনের ব্যর্থতা যেন নতুন কমিশনের ঘাড়ে না বর্তায়। নতুন যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন, তিনি যেন সবার কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজন প্রধান নির্বাচন কমিশন খুঁজে বের করার রাষ্ট্রপতির। তিনি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সঙ্গে আলোচনা করে নিশ্চয় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একজনকে খুঁজে বের করবেন।’  সার্চ কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতা ভালো নয় উল্লেখ করে  তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান রকিব কমিশনও সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। আমরা আশা করবে, নতুন কমিশনের কার্যক্রম যেন এই কমিশনের মতো না হয়।’ 

উল্লেখ্য, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হতে যাচ্ছে।  

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ