X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

এখন সংলাপেই সমাধান দেখছে বিএনপি

সালমান তারেক শাকিল
০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:০৪আপডেট : ০৫ জানুয়ারি ২০১৭, ১৯:৩৬

বিএনপি নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। চলমান বৈঠকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির সামগ্রিক মনোযোগ ইসি গঠনের ওপরে হলেও ২০১৯ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণই দলটির মূল লক্ষ্য। যেকোনও মূল্যে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায় বিএনপি। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে না গিয়ে সংলাপের পথেই হাঁটতে চায় দলটি। একটি শক্তিশালী-নিরপেক্ষ ইসির বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরই নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে একটি ‘ফর্মুলা’ হাজির করবে বিএনপি। দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একজন নেতার মতে, ‘আসলে এই ফর্মুলা হবে কম্প্রোমাইজিং। যেন সব দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। নির্বাচনও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়।’

বিএনপি সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় দাবি আদায়ে বড় কোনও আন্দোলনেও যেতে আগ্রহী নয় তারা। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনের পরপরই টানা ৩ মাস আন্দোলন করেও সফল হতে পারেনি দলটি। উল্টো হাজার-হাজার মামলার আসামি হতে হয়েছে দলীয় নেতাকর্মীদের। রাজপথ ছেড়ে নিয়মিত দৌড়াতে হয়েছে আদালতে। আন্দোলন প্রসঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, ১ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বড় আন্দোলনে না যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘সময়মতো বলব আন্দোলনের কথা। অহেতুক কথা বলব না। দলকে গুছিয়ে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিয়েই আবার ক্ষমতায় আসবে বিএনপি।’

বিদায়ী ২০১৬ সাল ও নতুন বছরের ৫ জানুয়ারিতে কোনও সংঘাতময় কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করলেও ঢাকার কর্মসূচি ৭ জানুয়ারিতে করতে চায় দলটি। প্রশাসনের কাছে অনুমতিও চেয়ে রেখেছে। এমনকি বৃহস্পতিবার আদালতে হাজিরা দিতেও গেছেন খালেদা জিয়া। এ প্রসঙ্গে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘‘আমরা গণতন্ত্রকেই মূল মনে করি। সংসদ হচ্ছে গণতন্ত্রের মৌলিক জায়গা। ফলে বিএনপি নির্বাচনেই বিশ্বাসী। এই যে ৫ জানুয়ারি ‘কালো দিবস’ পালন করছি, এটা দুশমনির জন্য না। আমরা বলতে চাই, এই দিনে গণতন্ত্র হরণ করা হয়েছিল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশকে গণতন্ত্রের পথে আনতে হলে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতেই হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীও ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।’

কেমন হবে সহায়ক সরকারের রূপরেখা

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে প্রস্তাব দেব। ইতোমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে।’ তবে ঠিক কী কী থাকছে—এ নিয়ে এখনই বলতে নারাজ বিএনপির প্রভাবশালী এই নেতা।

গত ১৯ নভেম্বর ইসি গঠনে বিএনপির পক্ষে প্রস্তাব দিয়েছেন খালেদা জিয়া। ওইদিন তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকার হিসেবে তারা সহায়ক সরকার চান। পরবর্তী সময়ে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। ইতোমধ্যেই কয়েকবার গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, এই সরকারের সময়ে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। এমনকী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ওপরে ‘ফিটফাট হলেও ভেতরে ষড়যন্ত্র’ ছিল বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তার মতে, ‘শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’

এদিকে, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো দৃঢ়ভাবেই বলছে, ২০১৯ সালেই নির্বাচন হবে। আর ওই নির্বাচন হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই। এ কারণে বিএনপিও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করলেও ভেতরে-ভেতরে ‘কম্প্রোমাইজিং ফর্মুলা’ নিয়েই ভাবছে। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে অবস্থান জানাব। এটা হয়তো শব্দগতভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, হবে সহায়ক। ওই সময় নির্বাচন কমিশনকে কিভাবে সহযোগিতা করা হবে, সরকারের দায়িত্ব কী হবে, এ নিয়ে আলোচনা হবে।’ তার মতে, ‘‘আলোচনার মাধ্যমেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়। সরকার পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা হবে। যথাসম্ভব ‘কম্প্রোমাইজিং ফর্মুলা’ তো হবেই। আল্টিমেটলি সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে দেশেরই ক্ষতি। ইতোমধ্যে সে ক্ষতি অনেক হয়েছে।’’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা না সরলেও কয়েকটি বিষয়ে অবশ্যই সরকারের অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে  ইসিকে নিরপেক্ষ ও শক্তিশালীকরণ প্রাথমিক বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। সহায়ক সরকার বলতে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও নির্বাচনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ইসির আওতায় নিতে হবে। সেক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতে হবে। বিএনপির নির্বাচন প্রক্রিয়ারসঙ্গে সম্পৃক্ত দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ এক সদস্যও প্রায় একই ধরনের কথা বলেছিলেন গত জুনে। তার মতে,‘ স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন—এই তিনটিকে নিউট্রাল রোল প্লে করতে হবে। যেকোনও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিকে এই তিন পদে দেওয়া যেতে পারে, যেখানে খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা কারও হাত থাকবে না।’  

আরও পড়ুন:  সরকার বিএনপিকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়: মির্জা ফখরুল

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
‘চাকরির পেছনে না ঘুরে নিজেই উদ্যোক্তা হোন’
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
শিলাবৃষ্টিতে ফুটো হয়ে গেছে ঘরের চাল, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
সর্বাধিক পঠিত
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি