X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লায় আ. লীগই হারালো আ. লীগকে!

এমরান হোসাইন শেখ ও পাভেল হায়দার চৌধুরী, কুমিল্লা থেকে
৩০ মার্চ ২০১৭, ২৩:৪৬আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ২৩:২৬

আওয়ামী লীগ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা পরাজিত হয়েছেন বলে মনে করছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, দলীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও তার অনুসারীদের অসহযোগিতার কারণেই আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে হারতে হয়েছে। তবে, নৌকার এই পরাজয়ের পেছনে স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয়তাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার।

অবশ্য, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা তারা পরাজয়ের পেছনে কাউকেই দায়ী করেননি। তিনি মনে করেন, জনগণ তাকে বেছে নিতে চাননি বলেই ফল তার বিপক্ষে গেছে। তবে, এর পেছনে অন্য কোনও কারণ থাকলে তা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বলতে পারবেন বলে তিনি মনে করেন।

বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মনিরুল হক সাক্কু ১১ হাজার ৮৫ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত। সাক্কু পেয়েছেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট আর আওয়ামী লীগ মনোনীত সীমা পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট।

কুমিল্লার স্থানীয় নেতারা বলছেন, ‘দলীয় প্রার্থী স্বচ্ছ ইমেজের হলেও তার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা প্রবীণ রজানীতিবিদ অ্যাডভোকেট আফজল খান ও বাহার উদ্দিনের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণেই কুমিল্লায় ক্ষমতাসীন দলকে হারতে হয়েছে। আফজল-বাহার দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করে তারা জানান, কুমিল্লায় নৌকার ভোট বেশি হলেও দ্বন্দ্ব-কোন্দল যতদিন শেষ হবে না, ততদিন নৌকাকে এভাবে হারতে হবে, তা আবারও প্রমাণিত হলো।’

ভোটের দিন বাহাউদ্দিনের কর্মকাণ্ড নিয়ে স্থানীয় নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন। ভোট দিয়ে বাইরে এসে গণমাধ্যমের সামনে তা ফলাও করে প্রচার করাটাকেও সন্দেহের চোখে দেখছেন তারা। তাদের মতে, বাহাউদ্দিন নৌকার লোক। তিনি নৌকাতেই ভোট দেবেন। কিন্তু এটা জানানোর কী আছে?’  

এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার ফল ঘোষণার সময়ে তাৎক্ষণিক পর্যালোচনা করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা সন্ধ্যায় কুমিল্লার ভোট নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা বৈঠকে বাহার উদ্দিনকেই দায়ী করেছেন। বৈঠকে উপস্থিত  সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এই হারের পেছনে কুমিল্লা দক্ষিণের সভাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালও কিছুটা দায়ী। নির্বাচনে জেতার জন্যে তার যতটা সক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল, তিনি ততটা সক্রিয় হননি।’  

বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাক মাহাবুবউল আলম হানিফসহ সম্পাদকমণ্ডলীর বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে কুমিল্লা সদর আসনের দলীয় এমপি বাহারের বিভিন্ন অসহযোগিতার কথা উঠে আসে। বৈঠকে বলা হয়, বাহার উদ্দিন কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য যতটা সক্রিয়া ছিলেন, মেয়র-প্রার্থীর জন্য ততটাই বিপরীত অবস্থানে ছিলেন।

ভোটের দিন যেসব ওয়ার্ডে দলের সিনিয়র নেতারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন নৌকার সমর্থকরা। কুমিল্লার ২৭ ওয়ার্ডে প্রায় ৫০ হাজার সংখ্যা লঘু ভোটার রয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগ করলেও তাদের অনেকেই নৌকার পক্ষে ভোট দেননি। কেউ-কেউ ভোট দিতেই আসেননি। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের রাজনীতি যারা নিয়ন্ত্রণ করেন, বিভিন্ন কারণে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।’

ভোটের ফল বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্জুম সুলতানা সীমা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তারা যাকে যোগ্য মনে করেছেন, তাকেই ভোট দিয়েছেন।’ দ্বন্দ্ব-সংঘাত প্রভাব ফেলছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রচার-প্রচারণায় তো সবাই একসঙ্গে ছিলেন। ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। ভেতরে ভেতরে কে কী করেছেন, তা কেন্দ্রীয় নেতারা চিহ্নিত করতে পারবেন।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালনকারী আওয়ামী লীগ নেতা একেএম এনামুল হক শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুমিল্লার রাজনৈতিক গ্রুপিংয়ের কারণেই আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়েছে।’ কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘সীমার পক্ষে প্রচার-প্রচারণার সময়ে আমরা অনেক অসহযোগিতার শিকার হয়েছি। শুধু তাই নয়, প্রচারণার সময়ে বিভিন্ন সামাজিক গণমাধ্যমে নিজ দলের কিছু কর্মীর কারণে নেতিবাচক প্রচারণার শিকার হয়েছি। ভোটের দিন নিরপেক্ষতার নামে প্রশাসনও আমাদের সঙ্গে রূঢ আচরণ করেছে।’

কুমিল্লা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয় ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্ল্যাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নৌকার বিপক্ষে ছিলেন কাউন্সিলররা ও সদর আসনের এমপি। আমরা কিভাবে জিতব? ১১ তারিখ পর্যন্ত কুমিল্লায় নৌকার কোনও অবস্থান ছিল না। আমরা দৌড়ঝাঁপ করে অবস্থার পরিবর্তন করেছিলাম। বাহার যদি আমাদের সহযোগিতা করতেন, তাহলে আমরা ভালোভাবে জিতে পারতাম।’

সীমার কর্মীদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ‘১ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন কাউন্সলর-প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা বুকে নৌকা মার্কার কার্ড নিয়ে ভোট কেন্দ্রে এলেও কাজ করেছেন ধানের শীষের পক্ষে। বাহার উদ্দিনের নির্বাচনি এলাকার আওতাভুক্ত এই ১৮টি ওয়ার্ডে তার ইন্দনে এমনটি হয়েছে বলে স্থানীয় নেতারা অভিযোগ করেন।

সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমরা হেরেছি ঠিকই। কিন্তু এতে বিজয় হয়েছে গণতন্ত্রের। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।’ দলীয় প্রার্থীর পরজয়ের পেছনে কী কারণ থাকতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কর্মীদের আরও সক্রিয় হওয়া দরকার ছিল। ঢাকা থেকে যেসব কেন্দ্রীয় নেতারা এসেছিলেন, তারাসহ আমরা সবারই আরও বেশি অ্যাকটিভ হওয়া দরকার ছিল। ভোট আসলে মানুষের। ভোটের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হয়। সেখানে কাউকে বলে বা বাধ্য করে ভোট আদায় করা যায় না। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আমার বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হয়, সেগুলো একেবারেই অপপ্রচার।’

 আরও পড়ুন: আবারও কুসিক মেয়র সাক্কু

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৭ এপ্রিল, ২০২৪)
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
কুষ্টিয়ায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা