X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে নীরব খালেদা জিয়া!

সালমান তারেক শাকিল
৩১ মার্চ ২০১৭, ২৩:১৭আপডেট : ৩১ মার্চ ২০১৭, ২৩:৪৮

 

খালেদা জিয়া দেশে জঙ্গিহামলা, জঙ্গিবিরোধী অভিযান ও গ্যাসের দামবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু জনস্বার্থ সম্পৃক্ত ইস্যু সৃষ্টি হলেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। এমনকি দলের কোনও অনুষ্ঠানেও যোগ দিচ্ছেন না তিনি। বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতা ও শুভানুধ্যায়ী বুদ্ধিজীবীর মতে, সরকারের মধ্যে অস্থিরতা চলছে। এই অস্থিরতার শেষ পরিণতি কী হয়, সে বিষয়ে পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ‘নীরব পর্যবেক্ষণে’র পথ বেছে নিয়েছেন বিএনপি প্রধান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একাধিক সিনিয়র নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জেলায়-জেলায় সফর করে আগামী নির্বাচনের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে, দলের অন্য নেতারা অনেকটাই নীরব অবস্থানে রয়েছেন। আর প্রায় আড়ালেই চলে গেছেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন খালেদা জিয়া।

সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ সিলেটে জঙ্গি হামলা ও নিহতের ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপি-প্রধান। এর আগে ২১ জানুয়ারি জিয়া পরিষদের প্রতিনিধি সভায় বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে প্রকাশ্যে কোনও অনুষ্ঠানেও যোগ দেননি বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এ মাসের শুরুর দিকে আয়কর আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় থাকলেও গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেননি খালেদা জিয়া। 

দলটির সিনিয়র নেতাদের ভাষ্য, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি জনপ্রিয়তা অর্জন করে বিপুলমাত্রায়। যদিও যৌক্তিক কারণে নির্বাচন বয়কট করেছে দলটি। পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালে ৫ জানুয়ারি থেকে কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। তবে ওই অবরোধ কর্মসূচি ‘অজনপ্রিয়’ হয়ে পড়ে। দলের  মধ্যেও হিসেব-নিকাশ চলে। রাজনৈতিক অঙ্কে পিছিয়ে পড়ে বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন এখনও ওই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার প্রতীক্ষায় রয়েছেন।

জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়া দলের সর্বোচ্চ রেসপনসিবিলিটি। তার কখন কথা বলা উচিত, এ নিয়ে নিশ্চয় তার ভাবনা আছে। তিনি দল গোছানোর জন্য, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার জন্যই হয়তো প্রয়োজনের বাইরে কথা বলছেন না। তবে প্রায়শই বক্তৃতা, বিবৃতি দিচ্ছেন।’

দলের চেয়ারপারসনের নীরব থাকার পেছনে সরকারের বাধাকে দায়ীকে করছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসনের প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে আমাদের আগে রিহার্সেল করা উচিত। তাও সরকার করতে দিচ্ছে না। একটি মিছিল করার অনুমতিও দিচ্ছে না সরকার। এই যে স্বাধীনতার দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করতে চেয়েছি, সরকার তারও অনুমতি দেয়নি।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘পরিস্থিতির খাতিরেই কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। চেয়ারপারসন দেখছেন, কিছুটা সংগঠনে হাত দিয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে তিনি জেলা কমিটিগুলো মনিটরিং করছেন।’

বিএনপির চেয়ারপারসের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রতিক আচরণে খালেদা জিয়া মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত সরকার আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো করে অনুষ্ঠান করবে। এক্ষেত্রে সরকারের এ পরিকল্পনা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে আগামী নির্বাচনও বয়কট করবে বিএনপি। তবে ব্যক্তিগত মত হিসেবে উল্লেখ করে আবদুল্লাহ আল নোমান বলছেন, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে।

বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, দলটির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কর্মিসভা, জনসভা করার প্রস্তুতি ছিল ভেতরে-ভেতরে। ওই সভাগুলোয় খালেদা জিয়াকেই উপস্থিত করার পরিকল্পনা ছিল দলেও। পাশাপাশি কর্মসূচি দিলে তার ধারাবাহিকতা রক্ষাও প্রয়োজন বলে মনে করে সূত্রটি। আবদুল্লাহ আল নোমান বলছেন, ‘এসব কর্মসূচি দিলেও সরকার মূলত বিএনপিকে এফোর্ড করতে পারবে না বলেই মনে হচ্ছে। তবে সরকারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও খুব বেশি ভালো নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।’

এদিকে গত ১২ মার্চ রবিবার দিবাগত রাতে চায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস দূরে থাকা অভিমানী বিশিষ্টজনেরা খালেদা জিয়াকে কয়েকটি বিষয়ে অবস্থান পরিবর্তন করার কথা বলেন। এর মধ্যে দ্রুত বিএনপি প্রধানকে সারাদেশে সফরের পরামর্শ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির ওপর। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নীরব থাকার পেছনে স্টুপিড স্ট্যান্ডিং কমিটি দায়ী। মওদুদ সাহেব থেকে শুরু করে কমিটির সবাই খালেদা জিয়ার ওপর দিয়ে হাওয়া ছেড়ে দিয়ে নিজেরা আত্মরক্ষা করছেন। তারা এত মানুষ, তাদের মুখে কুঁলুপ এঁটে বসে থাকতে কে বলেছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘তারা কেন পারশু করতে পারে না, তারা কেন বলতে পারেন না, এ সপ্তাহে আমরা বেরিয়ে পড়ব। এতদিন যে পরিস্থিতিই ছিল, কুমিল্লায় বিজয়ের পর তার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এখন দলের সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন জানাতে যেতে পারতেন। তাদের নবাবি স্বভাব ছেড়ে দেওয়া উচিত। জনগণের কাছে তো যেতে হবে।’

অবশ্যই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকারকেও দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘সরকার একটি পুলিশি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু সরকার তো বিএনপির প্রেমে নেই, তারা তো চেষ্টাই করবে বিএনপিকে দমিয়ে রাখতে। এই সরকার তো গণতান্ত্রিক না, স্বৈরতান্ত্রিক। ফলে তারা তো বিএনপিকে সুযোগ দেবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সরকারকে ওভারকাম করতে হবে। জনগণ তৈরি আছে, তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে।’

তবে খালেদা জিয়ার নীরব থাকাকে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন গিয়েছিলাম, তখন পরামর্শ দিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলার সুযোগ নেই আমার কাছে।’

 আরও পড়ুন: কুসিক নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সিইসির আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল: রিজভী
কুমিল্লায় আ. লীগই হারালো আ. লীগকে!

 /এমএনএইচ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!