X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

হাসিনা কেবল দিয়েই এসেছেন, কিছুই আনতে পারেননি: খালেদা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৩৬আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০১৭, ১৯:৪৩

খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ভাটির দেশ হিসাবে সব আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আমাদের অধিকার। এটা কারও কোনও দয়া-দাক্ষিণ্য বা করুণার বিষয় নয়। তিস্তার পানি বন্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এ জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেবল দিয়েই এসেছেন, কিছুই আনতে পারেননি। বুধবার বিকালে গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে দেওয়া ৫০ কোটি ডলারের সহায়তার আওতায় ভারত কোন ধরনের সমরাস্ত্র সরবরাহ করবে জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন যে, এখনও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, শেখ হাসিনা যাই বলুন না কেন একমাত্র ভারতই হবে ওই ঋণের আওতায় একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী। এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

খালেদা বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে আরও লক্ষ্য করেছি যে, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা প্রয়োজন, সেসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি।

খালেদা বলেন, পাট রফতানির ক্ষেত্রে ভারত যে এন্টি-ডাম্পিং ক্লজ প্রয়োগ করে থাকে তা তুলে নেওয়ার ব্যাপারেও এই সফরে প্রধানমন্ত্রী কিছুই করতে পারেননি। সফর শেষে প্রকাশিত দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার কথা বলা হলেও এই প্রতিশ্রুতি অতীতের মতোই অন্তঃসারশূন্য হয়ে থাকবে বলে দেশবাসীর মতো আমাদেরও আশঙ্কা। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের ব্যাপারে ভারতের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা এখন এই প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এখন আরও পিছিয়ে গিয়ে প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন এবং নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভারতীয় প্রস্তাব তিনি মেনে নিয়েছেন।

খালেদা বলেন, দেশে জনসমর্থিত ও গণতান্ত্রিক কোনও সরকার না থাকলে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে কোনও রাষ্ট্রের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ আদায় করে আনা সম্ভব নয়। সে কারণেই বর্তমান প্রশ্নবিদ্ধ সরকার যতই বন্ধুত্বের বুলি আওড়াক না কেন, প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকেও সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে তারা পারেনি, পারবেও না। তাই দেশবাসী বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছে, গতকালের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন যে, তিনি দিল্লিতে কিছু চাইতে যাননি। কেবল বন্ধুত্বের জন্য গিয়েছিলেন এবং সেটা তিনি পেয়েছেন। কিসের এই বায়বীয় বন্ধুত্ব তা দেশবাসীই বিচার করে দেখবেন। তবে এই কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন যে ভারত থেকে তিনি দেশের জন্য কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। বরং ভারতের চাহিদা মোতাবেক সবকিছুই দিয়ে এসেছেন।

খালেদা বলেন, চুক্তি ও সমঝোতাগুলো প্রকাশ করার বদলে তিনি তার নিজের ওপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার উপর আস্থা রেখে দেশবাসী আজ পর্যন্ত কোনও কিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং ভোট দেওয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন অধিকার হারিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে অতীতে জনগণ দেখেছে তিনি একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসংখ্য চুক্তি করেছেন। ভারতকে একতরফাভাবে কেবল দিয়েই এসেছেন। বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি। এবারেও জনগণ চরম হতাশা ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করলো যে, নিরাপত্তা সহযোগিতা, অস্ত্র ক্রয়, লাইন অব ক্রেডিট ঋণ, পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা, ডিজেল ও বিদ্যুৎ আমদানি, কানেকটিভিটি বৃদ্ধি, মহাকাশ সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি যে সব চুক্তি ও সমঝোতায় সই করেছেন তাতে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে। শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে তার এবং তাদের সরকারের যেসব সাফল্য দাবি করেছেন সেগুলোর বেশির ভাগই অসত্য ও একতরফা। সরকার একটি ধারাবাহিকতা। আমাদের সরকারের কিছু  উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে তিনি সেগুলো বাস্তবায়ন করলেও এখন একতরফা সাফল্য দাবি করেছেন। অথচ প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে জিয়াউর রহমান এবং আমাদের সরকার কী কী করেছে তা দেশবাসী জানেন।

আওয়ামী লীগই বিদেশি মদদ নিয়ে ক্ষমতায় আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে: সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনা গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বিদেশীরা এদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিল বলে আবারো সম্পূর্ণ অসত্য অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু কোনও প্রভু নেই। বিদেশি চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। বরং আওয়ামী লীগই ভোট ছাড়া বিদেশি মদদ নিয়ে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার অভিযোগের জবাবে আমি বলতে চাই, সশস্ত্রবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি কখনও ব্যবহার করেনি। তারাই করেছেন। তারা সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল-এর অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ ও মঈনের ক্ষমতা দখল এবং জেনারেল নাসিমের সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় তারাই প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন।

গোপনীয়তার কারণে প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে উদ্বেগ তা প্রমাণিত হয়েছে: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার এই সফরের আগে থেকেই দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন ও শংকিত ছিলাম। কারণ প্রস্তাবিত চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে সফরের আগেও রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি এবং কারও মতামত নেওয়া হয়নি। তাদের একতরফা কথিত পার্লামেন্টেও কোনও আলোচনা হয়নি। এই গোপনীয়তার কারণে সবার মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিল সফরের পর তা যথার্থভাবে প্রমাণিত হয়েছে।   

সফরকালে বাংলাদেশের জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দু’দেশের মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এবং সেগুলোর বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশি রফতানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে এই সফরে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। জনগণের দাবি সত্ত্বেও আমাদের ঐতিহ্য ও গৌরবের সুন্দরবন-বিনাশী এবং পরিবেশ বিধ্বংসী রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের জন্য তিনি একটি কথাও বলেননি। বরং প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই কেবল অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা সই করা হয়েছে। এই সফরকে দেশবাসী কেবলই দেওয়ার এবং কোনো কিছুই না পাবার এক চরম ব্যর্থ সফর বলেই মনে করে।

/সিএ/টিএন/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
১০ জন নিয়েও কৃত্রিম আলোয় ইয়ংমেন্সের উৎসব
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
পোড়া রোগীদের যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে তাপপ্রবাহ
নিখোঁজের ২৫ দিন পর ছাত্রলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার
নিখোঁজের ২৫ দিন পর ছাত্রলীগ নেতার মরদেহ উদ্ধার
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
যুক্তরাষ্ট্র বড় শক্তি, তাদের পরোয়া করতে হয়: শ্রম প্রতিমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট