X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এরশাদের জোটের আরও একটি শরিক জোটে ভাঙন

সালমান তারেক শাকিল
২৫ মে ২০১৭, ১৮:০৩আপডেট : ২৫ মে ২০১৭, ১৮:০৯

 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোট প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে ৩০ মার্চ সাংবাদিক সম্মেলন এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের আরও একটি শরিক জোটে ভাঙন ধরেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এ ভাঙন ধরার মাত্র আট দিনের মাথায় ভাঙলো জাতীয় ইসলামী মহাজোট। ৩৫টি দলের নামস্বর্বস্ব সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই জোটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুককে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য খাজা মহিবউল্লাহ শান্তিপুরী। দু’জনই বাংলা ট্রিবিউনের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

জানতে চাইলে খাজা মহিবউল্লাহ শান্তিপুরী বলেন, ‘কমিটি গঠনের আগে তহবিল তসরুফ, জোটের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছ থেকে অর্থ দাবির অভিযোগে সর্ব-সম্মতিক্রমে ওয়াহিদ ফারুককে অব্যাহতি দিয়েছি।’ 

এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াহিদ ফারুক বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘দল করার পর থেকে একশ থেকে দেড়শ লোক আসছে-যাচ্ছে। কে কী বলল, এ নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। আমাদের জোট হওয়ার পর থেকে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। জামায়াতিরা চেষ্টা করবে দল ভাঙতে। কিন্তু এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটে আমিই থাকব।’

শরিক জোটের ভাঙনে সমস্যা নেই এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোটের—এমন দাবি জোটের সমন্বয়ক ও জাপার প্রেসিডিয়ামের সদস্য সুনীল শুভরায়ের। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমাদের জোট হয়েছে দু’টি দল, দু’টি জোটে। তো তাদের দলে কে থাকবে, কয় দল যাবে, এগুলো নিয়ে তো সম্মিলিত জাতীয় জোটের কিছু আসে যায় না। এটার ব্যাখ্যা আমরা বহুবার দিয়েছি।’

গত ৩০ মার্চ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপস্থিতিতে জাতীয় ইসলামী মহাজোট আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠার দুই মাসের মধ্যেই ভাঙন ধরল ‘নামস্বর্বস্ব’ জোটে। গঠনের শুরু থেকে অভিযোগ ছিল, এই জোটের প্রতিটি  সংগঠন ব্যক্তিনির্ভর। সংগঠনগুলোর কোনও নেতাকর্মী নেই, কার্যালয়ও নেই।

জাতীয় ইসলামী মহাজোটে যে সব সংগঠনের নাম আছে, সেগুলো হলো—গণ ইসলামিক জোট, পিপলস জাস্টিস পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামিক লিবারেল পার্টি, জাতীয় শরিয়া আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ, বাংলাদেশ জনতা পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামি জনকল্যাণ পার্টি, ইউনাইটেড ইসলামিক লীগ, জমিয়তে মুসলিমিন বাংলাদেশ, ন্যাপ-ভাসানী, খেলাফত সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি, ইসলামি গণ আন্দোলন, জাতীয় ইসলামি আন্দোলন, জমিয়তুল ওলামা পার্টি, জাতীয় ইসলামিক মুভমেন্ট, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশ, ইনসানিয়াত পার্টি, খেলাফত বাস্তবায়ন পার্টি, ইসলামি আক্বিদা সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামি সংরক্ষণ পার্টি, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ, মুসলিম জনতা পার্টি, ইসলামি আক্বিদা সংরক্ষণ আন্দোলন, খেদমতে খালক পার্টি, ওলামা মাশায়েখ সমন্বয় পরিষদ, ইউনাইটেড ইসলামিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ ইসলামি পার্টি, ইসলামি সমাজ কল্যাণ আন্দোলন, বাংলাদেশ ইত্তেহাদুল মুসলিমিন, বাংলাদেশ খেলাফাতুল উম্মাহ, বাংলাদেশ আক্বিমুদ্দিন মজলিস, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জমিয়তুল হেদায়াহ মুভমেন্ট।

মহিবউল্লাহ শান্তিপুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘গতকাল ২৪ মে আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় একটি হোটেলে ইসলামি মহাজোটের এক জরুরি সভায় ২১ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়।’ ঘোষিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলনের সভাপতি মহিবউল্লাহ শান্তিপুরী। কো-চেয়ারম্যান ইসলামি লিবারেল পার্টির সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী, মহাসচিব নির্বাচিত হন বাংলাদেশ জনতা পার্টির সভাপতি মাওলানা এএম আনোয়ার শাহ্, জোটের প্রধান সমন্বয়কারী নির্বাচিত হন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফেডারেশনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফিয়ী। অন্যান্য দলের সভাপতিরা জোটের সদস্য নির্বাচিত হন।

মহিবউল্লাহ দাবি করেন, তার নেতৃত্বেই মহাজোট এরশাদের জোটে থাকবে। যদিও ওয়াহিদ ফারুক বলেন, ‘গতকাল এরশাদের সঙ্গে জোটের বৈঠক করেছি। পত্রিকায় ছবি দেখুন। আমিই আছি।’

ওয়াহিদ ফারুক তার জোটের কার্যালয় হিসেবে ৫৫/বি, নোয়াখালী টাওয়ার, ৯ম তলা ঠিকানা ব্যবহার করলেও মহিবউল্লাহ ব্যবহার করছেন ৩৯/১, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, খদ্দর মার্কেট (৬ষ্ঠ তলা), ঢাকা-১০০০ ঠিকানাটি।

উল্লেখ্য, জাতীয় ইসলামি মহাজোটের অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাওলানা আবু নাসের ওয়াহেদ ফারুক নিজেকে স্পিকারের চাচা দাবি করতেন। এ প্রসঙ্গে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে  বলেন, ‘উনি আমাদের গ্রামের, অনেক দূর সম্পর্কের আত্মীয়। কাছের কেউ নন। আর আমি চিনি মানে,  ‍খুব ছোটকালে উনাকে দেখেছি। আমার আপন চাচাও নন তিনি। উনি রাজনৈতিক জোট করছেন, এটার সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক?’ 

এর আগে গত ১৬ মে এরশাদের সম্মিলিত জাতীয় জোটের আরেক শরিকজোট ‘নামসর্বস্ব’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এ ভাঙন ধরে। ওই দিন মঙ্গলবার বিএনএ-এর চেয়ারম্যান সেকান্দার আলীকে অব্যাহতি দিয়ে গণজাগরণ পার্টির চেয়ারম্যান সেলিম হায়দারকে চেয়ারম্যান, আমজনতা পার্টির চেয়ারম্যান বেনজির আহমদকে সদস্য সচিব ও গণ অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান হোসেন মোল্লাহকে মুখপাত্র করা হয়।

গত ৭ মে দু’টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও দু’টি নাম সর্বস্ব জোট নিয়ে সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠন করেন এরশাদ। নিবন্ধিত দল দু’টি হচ্ছে জাতীয় পার্টি ও ইসলামি ফ্রন্ট। জোট দু’টি হচ্ছে, জাতীয় ইসলামি মহাজোট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ)।

প্রসঙ্গত, এ ধরনের নামস্বর্বস্ব জোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে খোদ জাতীয় পার্টিতেও। গত ২৫ মার্চে জাপার প্রেসিডিয়ামের সভায়ও নামসর্বস্ব দল দিয়ে জোট না করার পক্ষে আলোচনা ছিল। 

/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৬ এপ্রিল, ২০২৪)
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
ট্রাকেই পচে যাচ্ছে ভারত থেকে আনা আলু, বাজারে ৫৫ টাকা কেজি
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
দুর্বৃত্তের হামলায় গুরুতর আহত যুবলীগ নেতা
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা