ষোড়শ সংশোধনীতে আদালতের রায় সরকারের বিরুদ্ধে যাওয়ায় ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (৫ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ অভিযোগ তোলেন।
বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, ‘যখনই সরকারের বিরুদ্ধে কিছু যায়, তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। ষোড়শ সংশোধনীর রায় দেওয়ার পরই ফরহাদ মজহারকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি মনোযোগ বিক্ষিপ্ত করার প্রচেষ্টা। ফরহাদ মজহারকে যদি না পাওয়া যেত আমরা কি করতাম? কী করার ছিল? কারণ পুলিশ যেভাবে কথা বলছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে অপরাধ ফরহাদ মজহারেরই! অথচ তিনি একজন সাচ্চা দেশপ্রেমিক, দৃঢ়চেতা ও দার্শনিক। মানুষ তথা জনগণের অধিকার নিয়ে তিনি কাজ করেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘ফরহাদ মজহারের কোনও দোষ এখনও আমরা পাইনি।’ তাকে উদ্দেশ্য করে বিএনপি মহাসচিবের কথা, ‘এ মন্তব্য দিয়ে আপনি কী বোঝাতে চেয়েছেন? অবাক হয়ে যাই। কোনও ঘটনারই প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে পারছে না সরকার।’
ষোড়শ সংশোধনী প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সবসময় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি। কারণ আমরাই সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার যে অবস্থা তাতে আমরা যারা বিরোধী দল, তাদেরই ভোগান্তি পোহাতে হয় বেশি। উচ্চ আদালতের অবস্থা কিছুটা ঠিক থাকলেও নিম্ন আদালতের অবস্থা আরও খারাপ। আমরা যারা প্রতিনিয়ত আদালতে যাচ্ছি তারা জানি, সরকার কীভাবে নিম্ন আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়টি যখন এলো এবং সংসদকেই তারা ক্ষমতা দিলো, তখন আমরা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলাম। কারণ এতে করে বিচারকরা সঠিক বিচার করতে পারবেন কিনা সন্দেহ ছিল। সেদিক থেকে আমি মনে করি, এটি একটি নন স্টেপ ফরওয়ার্ড। এখন বিচারপতিরা আইনগতভাবে স্বাধীন থেকে কাজ করতে পারবেন। তাদের মধ্যে ভীতি থাকবে না। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে পূর্ণাঙ্গ রায়তে কী আসে।’
সরকারের নির্বাচনি প্রচারণার সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার মুখে নির্বাচনের ধোঁয়া তোলার চেষ্টা করছে। একটা আবহ তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু অন্যদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলকে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার যে অধিকার দিতে হবে তার কোনও লক্ষণই দেখছি না। উপরন্তু যারা ভিন্নমত পোষণ করছে, কাজের সমালোচনা করে তাদের ওপর সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন আরও বেড়েছে। আমরা কখনও চিন্তাও করিনি যে, কবি ফরহাদ মজহারের মতো একজন মানুষকে অপহরণ করা হবে। এটি একটি অবিশ্বাস্য বিষয়। আসলে এটি অবিশ্বাস্য নয়। কারণ সরকার আমাদের অনেক নেতাকে গুম করেছে। আমাদের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদলের নেতাকর্মীদেরও গুম করা হয়েছে।’
শিগগিরই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জনগণের সামনে আসবেন বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আশা করছি, সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। আমাদের রূপরেখা মেনে নিয়ে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেবেন।’
অবৈধভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসতে চায় অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নির্বাচন হলে আবার ক্ষমতায় আসতে পারবে না এটা তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জেনেছে। আর ক্ষমতায় না আসতে পারলে কী হবে তা তাদের সাধারণ সম্পাদক বলে দিয়েছেন। আমি আর বলতে চাই না।’
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি বুঝতে পারি না সরকার কী চায়। তারা কী এ দেশকে ইরাক কিংবা আফগানিস্তান বানাতে চান? তা হতে দেওয়া হবে না। এ দেশের মানুষ তা হতে দেবে না। কারণ তারা গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী।’
/এসটিএস/জেএইচ/
