ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ও পর্যবেক্ষণ নিয়ে প্রধান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিদের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী, বঙ্গবন্ধুবিরোধী শক্তি যত কদর্য মন্তব্য করেছে, তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এই রায় কে লিখেছেন, কিভাবে লিখেছেন, তা জানি কিন্তু বলব না।’ শনিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলিনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনীর ৯৬ ধারা স্রেফ ৭২-এর সংবিধানের পুনঃস্থাপন। এই পুনঃস্থাপন সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী হয় কী করে, তা আমার বোধগম্য নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কখনোই জনবিচ্ছিন্ন নই, বিদ্যমান অবস্থায় দলবিচ্ছিন্ন। তাই বলে দায়িত্ব এড়াতে পারি না। দায়িত্ববোধে তাড়িত হয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিমত স্পষ্ট করতে এখানে উপস্থিত হয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ব্যাপারটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী পরিস্থিতি মোকাবিলায় সঠিক কৌশল নিলেও অন্যরা ষড়যন্ত্রকে উস্কে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন। রায়ে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক বহুবার বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তাকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করা হয়েছে।’
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘৭৯৯ পৃষ্ঠার এই রায় আমি একাধিকবার পড়েছি। প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের রায়ও ভালোভাবে পড়েছি। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্ব নিয়ে অসঙ্গত ইঙ্গিত করা হয়েছে, যে ইঙ্গিত ঘোষক বিতর্কের অনুকূলে যায় বলে ভাবলেও দোষ দেখি না।’ তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের লর্ডগণ যেসব অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করেছেন, তার আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল? সংবিধানের ৯৬ ধারা ১৯৭২-এ কী ছিল, আজকে কী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। সে বিচার করার এখতিয়ার না সরকারের আছে, না বিচার বিভাগের আছে। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। এই রাষ্ট্রের মূলনীতি কী হবে, জনগণই তা নির্ণয় করবে।’
ষোড়শ সংশোধনী কোনও বিষয় নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত এই নেতা বলেন, ‘আমার ধারণা, বিষয়টি অন্য কোথাও আড়াল করে রাখা হয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ব্যাপারটা কি এমন—মানুষ হত্যা, যানবাহন পোড়ানো, বোমা ফাটানো, বৃক্ষনিধন, নির্বাচন বর্জন, সড়ক অবরোধ, পুলিশ হত্যা, জেএমবি-জঙ্গিবাদ তাণ্ডব করে কিছুই হরো না, অসাংবিধানিক শক্তিকেও ব্যবহারের সুযোগ কমে গেছে, তাই সাংবিধানিক পন্থায় শেখ হাসিনাকে কাত করার চেষ্টা? ভেবে দেখা দরকার।’
সংসদ সদস্যদের অপরিপক্ব বলায় গণমানুষের অধিকারই শুধু নয়, মর্যাদার প্রতি অবজ্ঞা দেখানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘সংবিধান রাষ্ট্রের বেতনভোগী কাউকে এমন অবজ্ঞা দেখানোর অধিকার দেয়নি। রাষ্ট্র, সংবিধান সবকিছুর মালিক নাগরিক। সংসদ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে নেতিবাচক প্রশ্ন তোলার অর্থই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে আদর্শিক হত্যার জঘন্য প্রচেষ্টা।’ তিনি বলেন, ‘সংসদ অকার্যকর হলে সংবিধান তার কার্যকারিতা হারিয়ে বসে। সুপ্রিম কোর্টের জন্য সংবিধান নয়, সংবিধানের ব্যাখ্যার জন্য সুপ্রিম কোর্ট। সব আদালতের ওপর জনতার আদালত।’
আদালতের পর্যবেক্ষণে সংসদ সদস্যদের যোগতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সমালোচনা করে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের আবার যোগ্যতা কিসের? সংসদ সদস্য একজন সংসদ সদস্য, এই যোগ্যতাই যথেষ্ট। সংসদ সদস্যদের যোগ্যতা নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী।
/পিএইচসি/এমএনএইচ/