X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করতে পারেন সুষমা

সালমান তারেক শাকিল
২২ অক্টোবর ২০১৭, ০১:০৪আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০১৭, ০১:৩১

২০১৪ সালের ২৭ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে খালেদা জিয়া ও সুষমা স্বরাজ (ফাইল ফটো)

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বৈঠক হচ্ছে। আজ রবিবার (২২ অক্টোবর) সুষমা স্বরাজ দু’দিনের সফরে ঢাকা আসছেন।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকা ত্যাগের আগে ‘সুবিধাজনক স্থানে’ এই গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে আছেন এবং দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন, এমন অন্তত আট জন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

২০১৪ সালের ২৭ জুন খালেদা জিয়া হোটেল সোনারগাঁওয়ে গিয়ে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও এবার বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের বাসভবন ‘ফিরোজা’য় হতে পারে দু’নেতার একান্ত বৈঠক। এ ব্যাপারে বিএনপিকে প্রস্তুতি রাখতেও বলা হয়েছে ভারতের তরফ থেকে।

শনিবার সন্ধ্যার পর গুলশানের কার্যালয়েও ছিল বিএনপি নেতাদের আসা-যাওয়া। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ফরেইন উইং মেম্বার ও উপদেষ্টা সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আবদুল কাইয়ুম, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অনেকেই এসেছেন কার্যালয়ে। রাত আটটার পর ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাহিবউদ্দিন আহমেদকে খালেদা জিয়ার বাসায় যেতে দেখা গেছে।কার্যালয়ে আসা কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন ফুরফুরে।

তবে খালেদা-সুষমার সম্ভাব্য বৈঠকটি কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, সে বিষয়ে এখনও মুখ খুলতে নারাজ বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা। বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির আট নেতাই বৈঠকের বিষয়টিকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে স্বীকার করেছেন। এই প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে নেতাদের ভাষ্য, ২০১৪ সালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে, এবার না হওয়ার কথা নয়। তবে তারা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব মাথায় রেখে বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে ইতিবাচক জোর দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগেরবার বৈঠক হলে একই ধারাবাহিকতায় এবারও হতে পারে। না হওয়ারই বা কী আছে। এবার আরও বেশি প্রাসঙ্গিকতা আছে। রোহিঙ্গা ইস্যু আছে,সামনের নির্বাচন নিয়ে বড় ইস্যু দাঁড়িয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগে যদি বৈঠক করতে পারেন, তাহলে এবার এমন ইস্যু রেখে বৈঠক কেন হবে না,’ বলে প্রশ্ন করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা।

তবে বৈঠক কী খালেদা জিয়ার বাসায় হচ্ছে, এমন প্রশ্নে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এটা বলতে পারবো না। তবে বেগম জিয়া এখন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি যদি ফরমাল বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকতেন, তাহলে অবশ্যই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছিল তার বাড়িতে আসা। গতবারও অনেকে সমালোচনা করেছেন, বেগম জিয়া কেন সোনারগাঁও হোটেলে গিয়ে দেখা করেছেন।’

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৈঠকের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাব দেন, ‘আমরা কনফার্ম না, আমি বলতে পারবো না।’ একই প্রশ্নে সাবিহউদ্দিন আহমেদ পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘এর আগের বার কি বৈঠক হয়েছিল?’ এরপর তিনি বলেন, ‘আগের বার হলে এবারও তো হওয়ার কথা।’

দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বৈঠকের সম্ভাব্যতা ইতিবাচক বলে জানান।

বিএনপির ফরেই উইং নিয়ে কাজ করে, এমন একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, আঞ্চলিক সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট ও এ অঞ্চলে চিনের অবস্থান বিষয়ে সুষমার সঙ্গে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া। এক্ষেত্রে বিশেষ প্রাধান্য পাবে আগামী নির্বাচন। কারণ, হিসেবে এই সূত্রের ভাষ্য, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ নির্বাচনে অংশ নিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।এ বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে ভারতকে বাংলাদেশের কাছে নেতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করেছে।এরশাদ নিজেও এ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন গণমাধ্যমে।

পরবর্তীতে ২৯ জুন ২০১৪ সালে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অভিযোগ করেছিলেন, ‘আমি জানি না, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার কোনও ভূমিকা রেখেছিল কিনা; অনেকেরই বিশ্বাস যে (এটা হয়েছিল),বিশেষ করে যখন পররাষ্ট্র সচিব এ রকম কথা বললেন...। এরশাদ পরে বললেন, পররাষ্ট্রসচিব তাকে চাপ দিয়েছিলেন এবং একমাত্র তারাই (ভারত) এ নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।’

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, কংগ্রেসের পর ২০১৪ সালের মে মাসে বিজেপি সরকার গঠন করলে বিএনপির প্রত্যাশা তৈরি হয়। যদিও কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা প্রণব মুখার্জী রাষ্ট্রপতি থাকায় বিএনপির প্রত্যাশা বাস্তবে রূপ নেয়নি। পরবর্তীতে এ বছরের জুলাইয়ে বিজেপির দলিত মোর্চা’র সাবেক প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর প্রত্যাশায় নতুন পালক যুক্ত হয় বিএনপিতে।

তবে ফরেই উইং নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন দায়িত্বশীলের দাবি, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাব্যতা নিয়ে ভারতের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে চিনের কাছ থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্রয়ের বিষয়টি ভারতকে ঢাকায় নতুন বন্ধু খুঁজতেও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ফলে ভারত সরকারের কাছে আগামী নির্বাচন ও স্টেক হোল্ডার হিসেবে বিএনপির প্রতি দেশটির সম্পর্ক বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা এখন অনেক বেশি।

এ বিষয়ে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কাজ করেন ও দলের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এর আগের বার যখন এসেছিলেন, তখনও বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এখন সুষমা স্বরাজ নতুন করে আসছেন। প্রায় বছরখানেক পরেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের একটি নেতিবাচক ভূমিকা, ওই নির্বাচনকে এক তরফা করতে ভূমিকা রেখেছিল বলে বাংলাদেশে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, প্রায় ৬ লাখের ওপর রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে এদেশে এসেছে। এসব ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষিতে বিএনপি প্রধানের সঙ্গে সুষমা স্বরাজের দেখা হওয়াটাই স্বাভাবিক।’

গত ২০ অক্টোবর শুক্রবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকের একটি উদ্যোগ আছে বলে শুনেছি।’

দলটির একজন যুগ্ম মহাসচিব জানান, ‘ভারতের পক্ষ থেকে বৈঠক আয়োজন করতে বিএনপিকে বলা হয়েছে। নানা প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে এ তথ্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

দলের ফরেইন উইং নিয়ে কাজ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তারা প্রত্যেকেই বৈঠকের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে নারাজ।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ভাষ্য, ‘ভারত উইং বলে তো আলাদা কিছু নেই দলে। কে বিষয়টি দেখভাল করছেন তা জানা নেই।’

প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দাসূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বাসাতেই বৈঠক হওয়ার কথা। রবিবার ঢাকায় এসে সুষমা স্বরাজ পরদিন সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বাসায় লাঞ্চ করতে পারেন বলেও দাবি করে সূত্রটি।

তবে বিএনপির কোনও নেতাই খালেদা জিয়ার বাসায় বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। দলটির বিদেশ নীতি নিয়ে কাজ করেন, এমন প্রায় প্রত্যেক নেতাই বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন।

তবে শুধুমাত্র একজন দায়িত্বশীল নেতার মন্তব্য, ‘খালেদা জিয়া বর্তমানে কোনও দায়িত্বে না থাকলেও তার বাসায় গিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রটোকলগত কোনও বাঁধা নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৈঠক কোথায় হবে এবং কখন হবে, সেটা আমাকে এখনও বলা হয়নি। আমাকে নির্দেশনা দেওয়ার পর আপনাদের জানাবো।’

উল্লেখ্য,২০১৪ সালের ২৭ জুন হোটেল সোনারগাঁওয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠক হয়।হোটেলের প্রেসিডেন্ট স্যুট ‘বেঙ্গলি’তে সকাল ১০টা ২৫ মিনিট থেকে থেকে ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ওই বৈঠক শেষে জানিয়েছিলেন,১২ মিনিটব্যাপী খালেদ-সুষমা একান্ত বৈঠক হয়।

এর আগে ২০১২ সালে নয়া দিল্লি সফরের সময়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল। ওই সময় সুষমা ছিলেন লোকসভায় বিরোধী দলীয় নেতা।

ছবি: নুরুদ্দিন আহমেদ

 

/এসটিএস/ এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
রেলক্রসিংয়ে রিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, বাবার মৃত্যু মেয়ে হাসপাতালে
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পুরস্কার পেলেন কুবির চার শিক্ষার্থী
গরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগরমে বেড়েছে অসুখ, ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী হাসপাতালে
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (১৯ এপ্রিল, ২০২৪)
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
পিএসসির সদস্য ড. প্রদীপ কুমারকে শপথ করালেন প্রধান বিচারপতি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন