X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্জিত সুনাম নির্বাচনি কাজে লাগাতে চায় আ. লীগ

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪৫আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৮:৪৬

আওয়ামী লীগ

মিয়ানমার থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সুনাম  অর্জন করেছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত এই সুনাম ধরে রাখতে চায় তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, এই সুনাম ধরে রাখা গেলে ভোটের মাঠে সুফল পাওয়া যাবে।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে অন্তত দুটি বড় অর্জন হয়েছে আওয়ামী লীগের। আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষমতাসীন দল তথা সরকারের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে এবং দেশে জনসমর্থনও বেড়েছে। এ দুটি অর্জন আগামী নির্বাচনে বড় সুফল বয়ে আনবে– এ ধারণা দৃঢ় হচ্ছে দলটির ভেতরে। 

আওয়ামী লীগের  সভাপতি ও সম্পাদকমণ্ডলীর একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে সম্পর্কের কিছুটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিছিয়ে পড়তে শুরু করে সরকার। নানা কৌশলে এই সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে এগিয়ে যায় সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের আস্থা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয়নি।

এরইমধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সম্পর্কোন্নয়নে সরকারের জন্য  বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের সবগুলো দেশই এ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসা করে। আন্তর্জাতিক শক্তিশালী সংগঠনগুলোসহ প্রায় সব দেশ বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ায়। শেখ হাসিনাকে সাধুবাদ জানায়। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুটি শেখ হাসিনাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকা ও শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকার প্রশংসা কুড়িয়েছে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় আওয়ামী লীগের জনসমর্থনও বেড়েছে। নীতিনির্ধারকদের হিসাব অনুযায়ী, মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের জনগণ ধর্মভীরু। পাশাপাশি অতিমাত্রায় মানবিকও। রোহিঙ্গারা মুসলমান।তাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের ছবি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দেশের ধর্মভীরু মানুষদের ভেতর প্রতিক্রিয়া হতে শুরু করে। আবেগতাড়িত হয় দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ। সরকার কী ভূমিকা নেয় সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন তারা। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হয় দেশের মানুষের কাছে।

রোহিঙ্গা প্রবেশের শুরুর দিকে সরকারের অবস্থান কিছুটা দোদুল্যমান হওয়ায় বিরোধী দল বিএনপি এটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক সুবিধার নেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে সরকারি দল মনে করে। তবে সরকার রোহিঙ্গাদের প্রবেশ উন্মুক্ত করে দিলে বিএনপির সেই রাজনীতি হালে পানি পায়নি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের বিপক্ষে  ধর্মীয় অপপ্রচার আগে থেকেই চালিয়ে আসছে একটি মহল।রোহিঙ্গা ইস্যুতে পজিটিভ ভূমিকা রাখায় আগামী নির্বাচনের সময় ধর্মীয় অপপ্রচার চালানো অংশটি সুবিধা নিতে পারবে না।

তবে সুবিধাজনক অবস্থানে এনে দেওয়া এই রোহিঙ্গা ইস্যুই সরকারকে বেকায়দায়ও ফেলে দিতে পারেন। এমন আশঙ্কাও করছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের অপব্যবহার করার সুযোগ মিললে ইস্যুটি সরকারের জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের কড়া নজরদারিতে রাখার পক্ষে তারা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কারা আসছে, কারা যাচ্ছে এসব দেখভাল করতে হবে। রোহিঙ্গাদের হীন রাজনীতির জন্য ব্যবহার করার কোনও ষড়যন্ত্র হয় কিনা, সে বিষয়েও নজরদারি বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে ইতোমধ্যে সরকারের ঝুড়িতে অনেক অর্জন যোগ হয়েছে। এই ইস্যুটি সন্তোষজনকভাবে মীমাংসা করা সম্ভব হলে নির্বাচনি মাঠেই শুধু নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার তথা আওয়ামী লীগ সুফল পাবে। একইসঙ্গে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন শেখ হাসিনাও।’

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাব প্রশংসা কুড়িয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ব নতুন করে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস স্থাপন করেছে।’

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে পৃথিবীব্যাপী যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা সবসময়ই আওয়ামী লীগের জন্য সুফল বয়ে আনবে।’

 

/এএম/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
সৌন্দর্যের সংজ্ঞা বদলাতে চান ম্রুনাল
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
পিএসজির অপেক্ষা বাড়িয়ে দিলো মোনাকো
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
অস্ট্রেলিয়ার সৈকতে আটকা পড়েছে শতাধিক পাইলট তিমি
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
যুদ্ধ কোনও সমাধান আনতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
২৪ ঘণ্টা পর আবার কমলো সোনার দাম
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন তিন বিচারপতি