X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনে অযোগ্য করতে নীল নকশা করেছে ক্ষমতাসীনরা: খালেদা জিয়া

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৩:৩৫আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০১৭, ১৪:৪৫


আদালত থেকে বেরিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
অসৎ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে সরিয়ে দেওয়া এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে ক্ষমতাসীনরা একটি নীল নকশা প্রণয়ন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বকশিবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালতে তার বিরুদ্ধে আনীত দুটি মামলার শুনানিতে উপস্থিত হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থনে এসব কথা বলেন তিনি। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখছেন খালেদা জিয়া। ১৯ অক্টোবর থেকে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য রাখা শুরু করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন  শেষ না হওয়ায় আগামী ৯ নভেম্বর আদালতের পরবর্তী নির্ধারিত তারিখে আবারও বক্তব্য দেবেন তিনি।  

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে সে বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন, মতামত ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত হয়েছে। সরকারের উচ্চমহলের কার্যকলাপ এবং বক্তব্য থেকেও তা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। আর এসব কারণে দেশবাসীর মনে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোতে ন্যায়বিচার হবে না।’
তিনি বলেন, জনগণের মৌলিক মানবিক অধিকার এবং বিচার বিভাগের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। দেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করার নিরলস প্রয়াসে কখনও বিরতি দেইনি। আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। আত্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলছি না। আমার এ অবস্থার জন্য বাড়তি কোনও সুবিধা বা মর্যাদা দাবি করার কোনও অভিপ্রায় নেই। আমি নিজেকে আইন ও বিচারের ঊর্ধ্বেও মনে করি না।
খালেদা জিয়া বলেন, আমি শুধু বলতে চাই, একই ধরনের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে আরেকজন নেত্রী যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন আমি আদালতের কাছে তেমন কোনও সুবিধা দাবি করিনি।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের একজন সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে প্রাপ্ত অধিকার পেলেই খুশি। ন্যায়বিচার ছাড়া কোনও কিছুই চাই না।
তিনি প্রশ্ন রাখেন ‘আজ আমার প্রতি যে আচরণ করা হচ্ছে তা আমার অবস্থা ও ভূমিকার সঙ্গে যায় কিনা? এর মাধ্যমে বৈষম্য করা হচ্ছে কিনা সেটা আদালতের বিবেচনার বিষয় বলে মনে করি।’
একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো খারিজ হয়ে গেলেও তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো চলায় তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে কোনও যাদুর কাঠি আছে। সেই যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম চাঁদাবাজিসহ সব মামলা তিনি সরকারে আসার পর উঠে গেছে বা খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু, আমাদের আর কারও হাতে তেমন কোন জাদুর কাঠি নেই। কাজেই একই সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো সচল ও গতিশীল হয়েছে। হয়েছে নতুন নতুন মামলা ।’
খালেদা জিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘দেশে কত গুরুত্বপর্ণ মামলা বছরের পর বছর ধরে চলছে। কতগুলো মামলা সচল আছে? কিন্তু আমার মামলাগুলো পেয়েছে রকেটের গতি। যেন কেউ পেছন থেকে তাড়া করছে। শীঘ্রই শেষ করো। তড়িঘড়ি করে একটা রায় দিয়ে দাও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কেন, কোন উদ্দেশ্যে এবং কিসের জন্য এত তাড়াহুড়া? এ তাড়াহুড়ায় কি ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে? নাকি ন্যয়বিচারের কবর হবে?’
‘আমাদের কাছে যাদুর কাঠি থাকলে বলতাম না মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন। আমরা আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। আশা করি সব প্রভাবের ঊর্ধ্বে উঠে আইন অনুযায়ী ন্যায়বিচার করা হবে। ন্যায়বিচারের কথা জোর দিয়ে এত বারবার বলছি। এর কারণ আছে। কারণ, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে কিনা সে ব্যাপারে দেশবাসীর ঘোরতর সন্দেহ আছে ।’

ক্ষমতাসীনদের দেওয়া বক্তব্য, প্রচারণা ও আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয়ে করা মন্তব্যকে আদালতের গোচরীভূত করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মাননীয় আদালত, আপনি জানেন আমার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচারকাজ চলার সময় প্রধানমন্ত্রী থেকে মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য এবং শাসকদলের কোনও কোনও নেতা আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে বক্তব্য দিয়েছেন। অভিযুক্ত করে বিরূপ প্রচারণা চালাচ্ছেন। যেন তারা মামলার রায় কী হবে তা আগাম জানেন! অথবা তাদের বক্তব্যে আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। তদন্ত ও বিচারাধীন বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের এই অপপ্রচার ন্যায়বিচারকেই শুধু প্রভাবিত করতে পারে না, বরং তা আদালত অবমাননার শামিল। এখানেই শেষ নয়। আমার সাজা হবে এবং কাশিমপুর কারাগারে রাখা হবে বলেও কোনও কোনও মন্ত্রী প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন। কোনও কোনও মন্ত্রী ও শাসক দলের নেতা প্রায় নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন আমাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় করে দেওয়া হবে। এ পরিস্থিতিতেই এসব কথা বলছি।’

এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এর আদালতে উপস্থিত হন তিনি। বেলা ১১টা ৩৬ মিনিটে আদালতে শুনানির কাজ শুরু হয়। এ মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ৯ নভেম্বর।

২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ মামলা দুটির অভিযোগ গঠন করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে দুদক খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অপর মামলাটি করে দুদক। এ মামলায় ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয় ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলা করে দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ মামলা দুটির অভিযোগ গঠন করেন।

/এএইচআর/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা