X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির উপ-কমিটিতে ছাত্রলীগ নেতা!

সালমান তারেক শাকিল
০৬ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৪৯আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০১৭, ২২:০৯

মাহবুবুর রহমান (ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া) প্রথমবারের মতো গঠিত বিএনপির উপ-কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জহুরুল হক হলের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান। সম্প্রতি গঠিত দলটির তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা-বিষয়ক কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে তিনি উচ্চ শিক্ষার্থে জাপানে রয়েছেন।

দলের উপ-কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ছাত্রলীগ নেতার মনোনয়নে বিএনপি ও ছাত্রদলে তৈরি হয়েছে নানামুখী আলোচনা। ছাত্রদলের কোনও পর্যায়ে যুক্ত না থেকে সরাসরি বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসায় আলোচনা তৈরি হয়েছে ছাত্রলীগেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অনেক নেতাও বিষয়টিতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জহুরুল হক হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আল নাহিয়ান জয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুমন-রাহাত কমিটিতে মাহবুবুর রহমান ধর্মবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৪-এর শেষ দিকে ও ১৫ সালের শুরুর দিকে ছাত্রলীগের সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।’

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সদ্য গঠিত তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান মাহমুদা হাবিবা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাহবুবুর রহমান স্কলারশিপ নিয়ে জাপানে আছেন।’ ছাত্রলীগের কমিটিতে মাহবুবুর রহমানের থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কিন্তু এই বিষয়টি আমি জানি না। তার সঙ্গে আমার ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়। এখানে কো-চেয়ারম্যান বলেন বা অন্য সদস্যদের ক্ষেত্রে বলেন, এগুলো আমার দায়িত্ব ছিল বেছে নেওয়ার। আমি নাম প্রস্তাব করার সময় দেখেছি, তাকে ইয়াং, ডায়নামিক। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি আমাদের অনেক কন্ট্রিবিউট করেছেন। লেখালেখি বা অন্যান্য ক্ষেত্রে। আমি কখনোই তাকে প্রশ্ন করিনি। এখন প্রশ্ন করব।’ তবে মাহমুদা হাবিবা এও বলেন, ‘এখনও কমিটির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। আমি এখন খোঁজ-খবর নেব।’ 

জানা গেছে, গত বছরের মার্চে জাতীয় কাউন্সিলের পর বিষয়ভিত্তিক সাব-কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। আগামী সপ্তাহ নাগাদ এই কমিটিগুলো চূড়ান্ত হবে। জাতীয় সংসদের সংসদীয় কমিটির আদলটি বিবেচনায় রেখেই এ কমিটিগুলো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কাউন্সিল। দলের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে সংযুক্ত করা হয়েছিল সাব-কমিটির বিষয়টি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১২টি সাব-কমিটি গঠনের উদ্যোগ এখন চূড়ান্ত-পর্যায়ে। ১২টি কমিটির মধ্যে ৮টি কমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যানের নাম চূড়ান্ত করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। বাকিগুলোও আগামী সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রলীগ নেতা জানান, মাহবুবুর রহমান ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকী বিএনপির উপ-কমিটিতে জায়গা পাওয়ার পর তার ওয়ালেও নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ছাত্রলীগের নেতারা।

মাহবুুবুর রহমান সম্পর্কে  জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা তিলোত্তমা শিকদারও জানান, ‘মাহবুবুর রহমানকে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেই চিনতেন। যদিও তার সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনও যোগাযোগ ছিল না।’

ঢাবির জহুরুল হক ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি সোহান বলেন, ‘আমি জানতাম তাকে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল হক হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. সবুজ বলেন, ‘মাহবুবুর রহমান ছাত্রলীগ ছেড়েছেন গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে। এর আগে ছাত্রলীগই করতেন। এরপর ছাত্রদল করতেন। ওই সময় নির্বাচনের আগে দল পাল্টানোর একটা বিষয় ছিল, ওই সময় ড্রাইভ দিয়েছেন মাহবুবুর রহমান।’

বিএনপির উপ-কমিটিতে জায়গা পাওয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ছাত্রদলেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নেতা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই এসে বিএনপির বড় জায়গায় চলে যাওয়া, এটা অবিশ্বাস্য।’

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জহুরুল হক হলের মাহবুবুর রহমান ছাত্রদল করেননি কখনও।’

জানা গেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি না জানালেও তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি ইতোমধ্যেই একটি সেমিনার আয়োজন করেছে। গত  ২৬ অক্টোবর প্রেসক্লাবে ‘বিদ্যুৎ ও চালের মূল্যবৃদ্ধি: বিপর্যস্ত জনজীবন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপিন্থী শীর্ষ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ অংশ নেন।

এদিকে, সূত্রের দাবি, স্থানীয় সরকার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যানের হিসেবে জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি আহাদ আহমেদ, হারুন অর রশিদকে নির্বাচন কমিশন বিষয়ক চেয়ারম্যান করা হতে পারে। এছাড়া মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে বিএনপির মুখপত্র ‘ধানের শীষ’-এর সম্পাদক ও জি নাইনের অন্যতম সমন্বয়ক ডা. শাখাওয়াত হোসেন সায়ন্ত ও ব্যারিস্টার এজাজ আহমেদ থাকতে পারেন।

বন, পরিবেশ ও পানিসম্পদ বিষয়ক কমিটিতে চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও ব্যারিস্টার শেখ মো. জাকির হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। টেলিকমিউনিকেশন বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রিয়াদ হাসনাইন। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান ও কো-চেয়ারম্যান হিসেবে মেজর (অব.) ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন ও ব্যারিস্টার তাসমিয়া রহমানের নাম এসেছে।

ইঞ্জিনিয়ার মিয়া মোহাম্মদ কাইয়ুম যোগাযোগ-বিষয়ক কমিটি, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা নৌ-পরিবহন ও নৌ- যোগাযোগ কমিটি, ড. মুহিত ক্ষুদ্র ঋণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক কমিটি, রুবায়েত জামিল তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক কমিটি ও ইঞ্জিনিয়ার রেজাউর রহমান স্বপন শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান হতে পারেন।

এই কমিটিগুলো করার ক্ষেত্রে বিএনপির জি-নাইন সংগঠনের ভূমিকা রয়েছে। যদিও জি-নাইনের প্রতিষ্ঠাতা বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম। সংগঠনটি তৈরিতে তার উদ্যোগ এবং অর্থ থাকলেও এখন জি-নাইনে তার কোনও অংশগ্রহণ নেই। সাইফুল ইসলামের ঘনিষ্ট একনেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যের সন্তানে নিজের তৈরি সংগঠনেও নেই আবার দলেও নেই।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘বিএনপির প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানকেও দলের কোনও স্তরে রাখা হয়নি। দলের চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনরা বিএনপিতে থাকলেও শামসুল ইসলাম ও হান্নান শাহের সন্তানরা কেউ বিএনপিতে স্থান পাননি।’

যদিও উপ-কমিটি গঠন নিয়ে ইতোমধ্যেই বিএনপিতে সমালোচনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সংশ্লিষ্ট কাউকে না জানিয়ে শীর্ষপর্যায়ের তিন-চার জন নেতা এই কমিটিগুলো করছেন। উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যকে নির্বাহী কমিটির প্রভাবশালী একনেতা নিজের উষ্মা প্রকাশ করেছেন।

উপ-কমিটিগুলো গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একনেতার সূত্রে জানা গেছে, উপ-কমিটিগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে না প্রকাশ না করায় ফাঁক রয়ে গেছে। সেক্ষেত্রে দ্রুতই বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। ছাত্রলীগের নেতা মাহবুবুর রহমানকে শেষ পর্যন্ত কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি এখনও উপ-কমিটিগুলোর বিষয়ে জানি না। তবে গঠনতন্ত্রে যেভাবে বলা আছে, পদবিন্যাস আছে, এই উপ-কমিটিগুলোর সঙ্গে নির্বাহী কমিটির সেভাবে কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও বিরোধও তৈরি হবে না।তাদের কোনও পদবিন্যাসও দেওয়া হচ্ছে না। এগুলো গবেষণা সংক্রান্ত কমিটি।’ 

জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জানা মতে, তো এটা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। উপ-কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানি, আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও জানানো হয়নি বলেই জানি।’ তিনি ছাত্রলীগ করতেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাহলে চার-পাঁচ আগে আমাকে হল থেকে বের করে দিয়েছিল কেন?’ তিনি দাবি করেন, ‘২০১২ সালের ডিসেম্বরে আমাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়।’


 বিএনপিতে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, ‘বিএনপি বা ছাত্রদল তো কোনও সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা নয় যে, জয়েন করার কথা বলছেন।’

 

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ