X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচন নয়: খালেদা জিয়া

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪৫আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:২৩

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে কোনও নির্বাচন হতে পারে না, হবেও না। এসময় তিনি আগামী নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ মোতায়েন করার দাবি জানান এবং ইভিএমকে না বলেন। পাশাপাশি আজ (রবিবার) সমাবেশের অনুমতি দিলেও সফল যেন না হয়, সরকার সে অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন খালেদা জিয়া রবিবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপির চেয়ারপারসন। সাত নভেম্বর দিনটিকে বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে দলটি। এক ঘণ্টার বক্তব্যে খালেদা জিয়া বর্তমান সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন। বক্তব্যের শুরুতেই তিনি রবিবারের জনসভায় সরকার বিভিন্ন উপায়ে বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন।

১৯ মাস পর রাজধানীতে আয়োজিত সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিদ্যুৎ-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষকের হাহাকার, নির্বাচন কমিশন, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন। তবে প্রতিবারই তিনি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার কথা উচ্চারণ করেন।

বিকাল সোয়া তিনটা নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। বিকাল ৪.১০ মিনিটে খালেদা জিয়া বক্তব্য শুরু করার আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারসহ স্থায়ী কমিটির অন্য সদস্যরা।

‘আমি ক্ষমা করলেও জনগণ মানতে রাজি না’
সরকারের অন্যায়, অবিচার প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি বলেছি, আমি তাদের ক্ষমা করে দেব। কিন্তু জনগণ কিন্তু তারা জানে, এরা কত অবিচার করেছে তাদের সঙ্গে। জনগণ সেটা মানতে রাজি নয়। আমরা দেশের রাজনীতির জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই। এর জন্য প্রয়োজন দেশে গণতন্ত্র থাকতে হবে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে, কথা বলতে দিতে হবে, সুশাসন থাকতে হবে। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিন্তু আজকে এগুলোর সবই অনুপস্থিত। যতক্ষণ পর্যন্ত এগুলো প্রতিষ্ঠা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না।’

‘হাসিনার অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, হবে না’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রয়োজন। দেশের এই অবস্থা থেকে মানুষ পরিবর্তন চায়, এদের হাত থেকে মুক্তি চায়। আর এই পরিবর্তন ভোটের মধ্য দিয়ে আসতে হবে। সেজন্য মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। যে অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে।’

খালেদা জিয়া জোর দিয়ে বলেন, ‘নির্বাচনে নির্দ্বিধায় মানুষ ভোট দিতে যাবে। যাকে পছন্দ, তাকে ভোট দেবে- এই পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। কারণ, হাসিনার অধীনে কোনও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না, হবে না।’

খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় কী পরিমাণ চুরি করা হয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। আওয়ামী লীগ চুরি করে জিততে চায়, তারা জনগণকে ভয় পায়। এমনকি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশনের নির্বাচনে খুলনায় আমাদের লোকদের নমিনেশন পেপার পর্যন্ত জমা দিতে দেয়নি। একই অবস্থা চিকিৎসক, শিক্ষকদের নির্বাচনেও। সব নির্বাচনে তারা চুরি করে জিততে চায়।’

গুলশানে বাস দিয়ে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, রবিবার সমাবেশে আসার সময় গুলশানে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাত নভেম্বর আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমাদের তা করতে দেয়নি। আপনারা জানেন, জনসভা করার অনুমতি তারা দিয়েছে, কিন্তু জনসভা যেন সফল না, জনগণ যেন আসতে না পারে, সেজন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। এই জনগণ এসেছে কত দুর্ভোগ, কত কষ্ট করে।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর হোটেলগুলোতে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। পরবর্তীতে পাবলিক প্লেস বন্ধ করা, সমস্ত যানবাহন বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে যেন, জনগণ সমাবেশে আসতে না পারে। শুধু তাই নয়, আমিও যেন আপনাদের সামনে এসে না পৌঁছাতে না পারি, সেজন্য আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পর গুলশানে বাস দিয়ে রাস্তা আটকে রাখা হয়েছে। যানজট তৈরি করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এই হচ্ছে এদের অবস্থা। এরা যে এত ছোট, আজকেও দ্বিতীয়বার প্রমাণ করেছে। এত ছোট মন নিয়ে রাজনীতি করা হয় না। আর করলেও জনগণ বা দেশের জন্য ভালো কাজ করা যায় না।’

‘সরকার জনগণ ও বিএনপিকে ভয় পায়’
খালেদা জিয়া ১৯৭৫ সালের বাকশালের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সাত নভেম্বরকে ভয় পায়। আরও ভয় কি জানেন, জনগণকে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই হয় তুলে নিয়ে যাবে, না হয় তার বিরুদ্ধে মিথ্যে মামলা দেবে।’

‘মত ও পথের পার্থক্য থাকলেও ঐক্য করতে হবে’
বিএনপির প্রধান তার বক্তব্যে আবারও জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি হল ঐক্যের, আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। আসুন, বহুদলীয় গণতন্ত্রে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে। কিন্তু দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে এক হতে হবে। এই কাজ করলেই শুধুমাত্র দেশের কল্যাণ করা, জনগণের কল্যাণ করা ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব।’

এর আগে, রবিবার সকাল থেকে জনসভাকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা— মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, কেরানীগঞ্জ, গাজীপুর থেকেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। ঢাকঢোল বাজিয়ে, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন লাখো কর্মী। বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, সমাবেশে প্রায় পাঁচ লাখের বেশি নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়।


/এএইচআর/এসটিএস/এমও/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
ছাত্রলীগের ‘অনুরোধে’ গ্রীষ্মকালীন ছুটি পেছালো রাবি প্রশাসন
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
সাজেকে ট্রাক খাদে পড়ে নিহত বেড়ে ৯
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
বার্সেলোনার সঙ্গে থাকছেন জাভি!
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী