X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিঃসঙ্গতা নিয়েই আহমেদ কামালের জীবনাবসান

সালমান তারেক শাকিল
২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:১৩আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:২৭

আহমেদ কামাল (বাঁয়ে) ও ২০১৬ সালের তার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ‘আমি বাংলায় গান, আমি বাংলার গান গাই, আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’— সদ্যপ্রয়াত আহমেদ কামালের মোবাইলে কলার টিউনে সেট করা প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের এই গান। ব্যক্তিজীবনে নিঃসঙ্গ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কনিষ্ঠ এই ভাই বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মারা গেছেন। বছর দেড়েক আগে রাজনীতিতে আসার ঘোষণা দিয়ে আলোচনায় এলেও শেষ পর্যন্ত নিঃসঙ্গ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হয়েছে।
মনসুর রহমান-জাহানারা খাতুন রানী দম্পতির পাঁচ ছেলের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন আহমেদ কামাল। রাজধানীর সবুজবাগ থানা সংলগ্ন এলাকায় ২০৫, মধ্য বাসাবো ঠিকানায় একাই থাকতেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্তও একাই ছিলেন তিনি। পর্যটন করপোরেশনের জিএম হিসেবে ২০০৬ সালে তার কর্মজীবন শেষ হয়।
অকৃতদার আহমেদ কামালের স্বজন বলতে ছিলেন জিয়াউর রহমানের পরিবারসহ অন্য ভাইদের সন্তানেরা। গত প্রায় ২০ বছর ধরে তার দেখভাল করছেন রিজিয়া নামে এক নারী। তার তথ্য অনুযায়ী, আহমেদ কামালের বাড়িতে বলতে গেলে কেউ-ই আসতেন না। তবে কোনও সমস্যা হলে ছুটে আসতেন বা আহমেদ কামাল নিজেই ডেকে নিতেন বন্ধু কাদের ও শহীদকে। বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকেই খাবার আনিয়ে খেতেন বা বাইরে থেকেই খেয়ে আসতেন তিনি।
জিয়াউর রহমানের পরিবারের সঙ্গেও আহমেদ কামালের যোগাযোগ ছিল না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করা ভাতিজা-ভাতিজিদের সঙ্গেও যোগাযোগ হতো না তার। সম্প্রতি, গত অক্টোবরেই এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানিয়েছিলেন, নিজের না বলা কথাগুলো বলবেন গণমাধ্যমে।
নিভৃতে বসবাস করা আহমেদ কামাল আলোচনায় আসেন গত বছর। একটি মহলের উদ্যোগে জিয়াউর রহমানের আদর্শে নতুন দল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। গত বছরের ৫ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ ও বিপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমেদ কামাল লিখিত বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘দল তো করবই, সে জন্যই তো এসেছি।’ সাংবাদিকদের প্রশ্নে উত্তরে তিনি এ বলেন, ‘যখন করব, তখন আপনাদের ডাকব।’

পরে ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছিলেন, তিনি অসুস্থ। এ অবস্থায় তিনি কোনও দল করছেন না এবং রাজনীতি করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা তার নেই। এদিন বলেছিলেন তার পরিবারের কথাও।

জানা গেছে, গত কয়েকমাস ধরেই অসুস্থ আহমেদ কামাল। বিশেষ করে গত অক্টোবর ও চলতি নভেম্বর মাসে অসুস্থতা বেড়ে যায় তার। আজ বৃহস্পতিবার রিজিয়া জানান, গত কয়েকদিনে তার অসুস্থতা মাত্রা ছাড়িয়েছিল। এ কারণে প্রাকৃতিক কাজগুলোও বিছানাতেই সারতে হয়েছে এসময়।
রিজিয়া বলেন, ‘আমি তো ২০ বছর ধইরা স্যারের বাজার করি, ঘর দেখি, সবই করি। ইদানীং তার ডায়াবেটিস বাড়ছিলো।’ তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে শারীরিক অসুস্থতার অবনতি হয় আহমেদ কামালের। এসময় তার হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে এলে স্থানীয় কয়েকজন মিলে তাকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার জানান, পৌনে ৪টার দিকে মারা যান আহমেদ কামাল।
আহমেদ কামালের মরদেহ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পৌনে ৬টার দিকে বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হলি ফ্যামিলিতে এখন আহমেদ কামালের মরদেহের গোসলের কাজ চলছে। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররমে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।’ তার দাফনের বিষয়ে শায়রুল কবির জানান, দাফনের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পরিবার বা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কোনও যোগাযোগ করা হতো কিনা, জানতে চাইলে রিজিয়ার জবাব, ‘কেউরে তো দেখলাম না আইতে। আমি তো দেহি নাই।’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন মনসুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। তারা ছিলেন পাঁচ ভাই, কোনও বোন নেই। জিয়াউর রহমানেরও কোনও কন্যাসন্তান নেই। তার দুই ছেলের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন, বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডনে ‘চিকিৎসাধীন’। জিয়াউর রহমান ও আহমেদ কামালের বাকি তিন ভাইও মারা গেছেন। তাদের সন্তানেরা ইউরোপ-আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
পরিবারের বিষয়ে আহমেদ কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘মেজ ভাই (জিয়াউর রহমান) ছাড়া বাকি তিন ভাই বিদেশে স্থায়ী ছিলেন। বড় ভাই রেজাউর রহমান নেভিতে কাজ করে বিদেশে চলে গেছেন। সেজ ভাই মিজানুর রহমান ব্যাংকার ছিলেন। লন্ডনে স্থায়ী বসবাস করছে তার পরিবার। তিনিও বেঁচে নেই। ছোট ভাই খলিলুর রহমান ছিলেন ফার্মাসিস্ট। এই তিন জনের মধ্যে একজনের পরিবার লন্ডনে ও দু’জনের পরিবার আমেরিকায় বসবাস করছে।’
তাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ হয় না উল্লেখ করে আহমেদ কামাল ভাঙা-ভাঙা কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘না, ওরা সময় কোথায় পায়? ওদের ওখানে যখন দিন, আমাদের এখানে রাত। হয়তো সময় পায় না।’ তিনি বলেন, ‘বড় চার ভাইয়ের নামই রেখেছিলেন আমার বাবা। আর আমার নাম রেখেছিলেন দাদা। তিনিই আমার নামের শেষে রহমান শব্দটি দেননি।’
জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক রহমানের পক্ষ থেকেও কোনও যোগাযোগ করা হয় না বলে ওই সময় দাবি করেন আহমেদ কামাল। তিনি বলেন, ‘সবাই ব্যস্ত। তারেকও স্ত্রী ডা. জোবায়দা ও মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে আছে। ওরাই হয়তো সময় পায় না যোগাযোগ করার।’
আহমেদ কামাল বলেছিলেন, ‘একমাত্র মেজ ভাই (জিয়াউর রহমান) ছাড়া আমাদের পরিবারের কেউ-ই রাজনীতিতে জড়াননি। আর মেজ ভাইও চাইতেন না, পরিবারের সদস্যরা রাজনীতিতে যুক্ত হোক। যদিও তার স্ত্রী খালেদা জিয়া পরে বিএনপি চেয়ারপারসন হয়েছেন। তিনি আবার তার ভাই-বোনকে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত করেছেন।’

/এসটিএস/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
হাসপাতালের বদলে শিশুরা ঘুমাচ্ছে স্বজনের কোলে
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
পারটেক্সের বিপক্ষে হেরে রূপগঞ্জ টাইগার্সের অবনমন
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
বিএনপির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!