ডিএনসিসি নির্বাচন বানচাল করাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা’ এবং ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যৌথ প্রযোজনা’ বলে দাবি করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ত্রুটিপূর্ণ তফসিলের কারণেই সংক্ষুব্ধরা রিট করার সুযোগ পেয়েছেন।’ একইদিনে বিএনপি’র অন্য নেতারাও একই দাবি করে বলেছেন,‘সরকার হেরে যাওয়ার ভয়েই নির্বাচন স্থগিত করিয়েছেন।’
বুধবার সকালে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) উপনির্বাচনের ওপর তিন মাসের স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে এ নির্বাচন স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ওয়ার্ড হিসেবে যুক্ত হওয়া ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দেন। আতাউর বিএনপি সমর্থিত ও জাহাঙ্গীর আ.লীগ সমর্থিত নির্বাচিত চেয়ারম্যান বলে জানা গেছে।
আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই স্থগিত করিয়েছে সরকার। বকশীবাজারের অস্থায়ী আদালতের সামনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এটি নির্বাচন কমিশনের চরম ব্যর্থতা। সরকার হেরে যাওয়ার ভয়ে এ সুযোগ নিয়েছে।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ডিএনসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে বলেই সরকারের ইঙ্গিতে তাদের লোক দিয়ে রিট করিয়ে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’
নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে রিজভী বলেন, ‘আমরা বারবার বলে আসছি, নির্বাচন নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি) আওয়ামী লীগের মাস্টার প্ল্যানেরই অংশ। ডিএনসিসিসহ ঢাকা সিটিতে যদি সুষ্ঠু ভোট হয়, তাহলে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবি হবে— এটা সরকারি দল নিশ্চিত জানে। গণমাধ্যমেও এরকম খবর বেশ কয়েকদিন ধরে প্রকাশিত হচ্ছে।’
রিজভী আরও বলেন,‘এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এ বছর হওয়ার কথা। তাই ঢাকা সিটিতে বিপুল ভোটে পরাজিত হলে আওয়ামী লীগের জাত-কুল কিছুই থাকবে না। তাই সরকারের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন আইনি ত্রুটি রেখে এ তফসিল ঘোষণা করেছেন। এটা সরকারেরই নীলনকশার একটা অংশ।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘গত ৯ জানুয়ারি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ১৮ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এখন যিনি প্রার্থী হবেন, তিনি জানেনই না তিনি ভোটার কিনা। তাছাড়া মনোনয়নপত্রে ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর থাকতে হবে। ভোটার তালিকা প্রকাশ না হলে এটা সম্ভব হচ্ছে না।’
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৫ (৩) উপধারা অনুযায়ী, মেয়রের পদসহ করপোরেশনের শতকরা ৭৫ ভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এবং নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশিত হলে, করপোরেশন এই আইনের অন্যান্য বিধানসাপেক্ষে যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে বলে গণ্য হবে।
রিজভীর ভাষ্য, এ আইন অনুযায়ী উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ১৮টি ওয়ার্ড মিলে কাউন্সিলর শতকরা ৭৫ ভাগ হয় না। কারণ নতুন ১৮টিতে তো নির্বাচনই হয়নি। তিনি বলেন, ‘সম্প্রসারিত ১৮টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর হবেন, তারা কত দিনের জন্য নির্বাচিত হবেন? তারা কি পাঁচ বছরের জন্য হবেন, না আড়াই বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন? এগুলো কমিশন নির্ধারণ করেনি। এসব ত্রুটির কারণেই রিট করার সুযোগ পেয়েছেন সংক্ষুব্ধরা।’
আরও পড়ুন: ডিএনসিসি'র উপনির্বাচনে হাইকোর্টের তিন মাসের স্থগিতাদেশ
