X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘দুর্নীতিবাজদের ওএসডি না করে শাস্তি দিন’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৫ মার্চ ২০১৮, ১৬:২৯আপডেট : ০৫ মার্চ ২০১৮, ১৭:০৫

নাগরিক ঐক্যের সেমিনারে বক্তারা ভালো লোকদের সামনে নিয়ে এসে খারাপ লোকদের শাস্তি দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষক, রাজনীতিক, আইনজীবীসহ সমাজের বিশিষ্টজনরা। তারা বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যেতে হবে।  

সোমবার (৫ মার্চ) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে জাতীয় ঐক্য আয়োজিত ‘দুর্নীতি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ সেমিনারে বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে শুধু ওএসডি করে নিশ্চিন্তে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাদের ওএসডি না করে শাস্তি দিন। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার কোনও বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখতে হবে আমরা কাকে টাকা দিচ্ছি। এই টাকা জনগণের। ব্যাংক আইনের বিধি-বিধানগুলো ঘন ঘন বদলানো যাবে না। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি  দিতে হবে—যা সবার কাছে দৃশ্যমান হয়।’

গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, ‘আমাদের দেশে আইন করা হয় ফাঁক রেখে, যাতে উকিল সাহেবরা সুবিধা করতে পারেন। প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্নীতি আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই যে নির্বাচনের বছর এলেই নানা রকম আন্দোলন, দাবি-দাওয়া আমরা এই প্রেসক্লাবের সামনেই দেখি। এর কারণ কী? কারণ, আন্দোলনকারীরা জানে শেষ সময়ে এসে চাপ না দিলে হবে না। অথচ এই দাবি দাওয়া একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আমরা রাস্তায় আন্দোলন দেখতে পাই। আমাদের কর্মকর্তারা প্রজেক্টের কাজ খুব ভালোবাসেন। কারণ, সেখানে অনেক দুর্নীতি করা যায়। প্রজেক্টে ট্রান্সফার করা হলে একজন কর্মকর্তা খুব খুশি হন। কিন্তু তাকে যদি কুতুবদিয়ায় পাঠানো হয়, তার খুব মেজাজ খারাপ হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘দুর্নীতির পেছনে যে মহান শক্তির মানুষ আছে, তাদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়। তারাই মূলত সবচেয়ে বড় চেতনা ভঙ্গকারী। দুর্নীতি কোনও সমস্যা না, সমস্যার আলামত। যে দেশে সুশাসন নাই, সেদেশে দুর্নীতি হবে না তো কী হবে? বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এককেন্দ্রিক সরকারের দেশ। নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যার দেশেও প্রাদেশিক সরকার আছে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য একটি সরকার। এক ব্যক্তির কাছেই সব ক্ষমতা।’

তিনি বলেন, ‘একটি দৈনিক পত্রিকায় জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারলাম, একজন ছুরিকাহত লেখককে ২৪ ঘণ্টা কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে না, সেটাও প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন। আজকে আমাদের আদালতের অবস্থা দেখেন। ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন কুক্ষিগত করা থাকে।নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে কী হয়—তা বলার অধিকার আইন দিয়ে খর্ব করা হয়েছে। এর উদাহরণ দিতে গেলে এক বিচারকের কথা বলতে হয়। তিনি র‌্যাবের বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিয়েছিলেন, ফলশ্রুতিতে তার মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, ‘আমরা যতই কথা বলি কোনও লাভ নাই। আমাদের কথাবার্তাকে ‘বাকোয়াস’ বলা হয়। দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের পুলিশ, আমাদের কর্মকর্তারা সাহায্য করছে। পুলিশ কখনও রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে না। তারা শুধু সন্ত্রাসী ধরতে পারে। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই আলোচনা করে রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে। উগ্র বামপন্থীরা আমাদের রাজনীতি ধ্বংস করে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আমাদের যে অপমান করতে পারেনি, তারচেয়ে বেশি অপমান হচ্ছি এখন। রাজনীতিতে উগ্র বামপন্থীদের প্রভাব ব্যাপক। বামপন্থীরা মাওলানা সাহেবদের মৌলবাদী হতে সহায়তা করছে।’

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, ‘যারা টাকা পাবে তাদেরই যদি বাজেট তৈরি করতে দেওয়া হয়, তাহলে দুর্নীতি থামানো যাবে কী করে? দুর্নীতিকে অবাধ রাখার জন্যে প্রয়োজন স্বৈরশাসন এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা।’

লেখক জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের যে কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদেরই কেউ হাবাগোবা দাড়িওয়ালা এই ছেলেকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা দেখতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এগুলো যারা করে তারা বিপদগামী। এটা করে বেহেশতে যাওয়া যায় না।’ খুন জখম করে বেহেশতে যাওয়া যায় না ঠিকই, তাহলে ক্রসফায়ার করে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া যায়? মানুষ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। ছয় মাস পরে এক বছর পরে তার লাশ পাওয়া যায়। ওরা বেহেশতে যাবে কীভাবে? কার বা কাদের নির্দেশে ক্রসফায়ার হয়? দেখতে দেখতে সবার ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে।’

 

/এসও/এপিএইচ/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
ইরাকি ঘাঁটিতে হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার যুক্তরাষ্ট্রের
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সভাপতির সাহসী পদক্ষেপ
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
‘তীব্র গরমে’ চু্য়াডাঙ্গা ও পাবনায় ২ জনের মৃত্যু
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
ডাগআউট থেকে রিভিউ নিতে বলায় ডেভিড, পোলার্ডের শাস্তি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
সারা দেশে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় ছুটি ঘোষণা
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি