X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফোরাম পুনর্গঠনের শর্তে ছাড় পেলেন জয়নুল-খোকন

সালমান তারেক শাকিল
১০ মার্চ ২০১৮, ০০:১৮আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৮, ১১:৫৩

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন (ফাইল ছবি) প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ থাকা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন কমিটি গঠনের শর্তে ছাড় পেয়েছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন। আগামী ২১-২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রথম জন সভাপতি ও দ্বিতীয় জন সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৯ মার্চ) প্রায় তিন ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিএনপির নেতারা দলীয় আইনজীবীদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এদিন সন্ধ্যা ছয়টায় বৈঠক শুরু হয়ে রাত নয়টার দিকে শেষ হয়। শুক্রবার রাতেই বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দফতরের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে এ নির্দেশনা দেন।

বিএনপির দলীয় সূত্রের ভাষ্য, শুক্রবারের বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মধ্যস্থতায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বন্ধ থাকা ফোরাম পুনর্গঠিত হবে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির পরই নতুন কমিটি গঠনের তৎপরতা শুরু হবে। আর এই বিষয়ে একমত হয়েছেন সিনিয়র নেতারা ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।

আইনজীবীদের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীদের সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য জয়নুল আবদীন ও মাহবুব উদ্দিন খোকনদের চূড়ান্ত করেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। এরপর বিদ্রোহী একটি গ্রুপ গত মঙ্গলবার রাত থেকে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে পাল্টা প্যানেল ঘোষণা করে। ওই প্যানেলে তৈমুর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও এ বি এম রফিকুল হক তালুকদারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হলে বিএনপির সিনিয়র নেতারা হস্তক্ষেপ করেন।

বিএনপির দফতরের সহ সম্পাদক বেলাল আহমদ জানান, ‘বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ২০১৮-১৯ উপলক্ষে নীল প্যানেলের নমিনেশন বোর্ড-এ  অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের নেতৃত্বে প্যানেল অনুমোদিত হয়েছে। এই প্যানেলই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। বৈঠকে অনুমোদিত প্যানেলের প্রতি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী নেতাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’  

 শুক্রবার বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা বিদ্রোহ করেছিল, তারা বলেছে যে, এটা ছিল প্রপাগান্ডা। জয়নুল আবদীন ও মাহবুব উদ্দিনকে প্রার্থী করায় যে প্রশ্ন উঠেছিল, তা এখন নেই। সবাই তাদেরকে প্রার্থী করার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছেন।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে বৈঠক শেষ হয়। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গুলশানের কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র কয়েকজন নেতার সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠক শুরু হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বৈঠকে স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য ছিলেন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক আইনজীবী জানান, প্রায় নয় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এই ফোরামের সভাপতি হিসেবে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন ও যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া। রফিকুল ইসলাম মিঞা দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থতাজনিত কারণে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। বাকি দুইজন ‘দেবো-দেবো’ করে নির্বাচন পিছিয়ে রেখেছেন এই নয় বছর।

মাহবুব উদ্দিন খোকনের ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবী দাবি করে বলেন, 'রফিকুল ইসলাম মিঞা স্থায়ী কমিটির সদস্য, তাকে সরাবে কে? ম্যাডাম ছাড়া এখন আর সমাধান হবে না।’

যদিও মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্যানেল নির্বাচন করেন সিনিয়ররা বসে। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কারা প্রার্থী হবেন। এখানে তো আমার কিছু নেই। আর ফোরামের কমিটি দেওয়ার ক্ষমতা ম্যাডামের। তিনি তো এখন কারাগারে। বেরিয়ে আসলে নিশ্চয়ই কমিটি হবে। আমি তো ফোরামের পদ ছেড়ে দিতে চাই।’

বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, শুধুমাত্র খালেদা জিয়ার কারণেই পরপর কয়েকবার জয়নুল আবদীন ও মাহবুব উদ্দিন নির্বাচিত হয়েছেন। আইনজীবীদের কাছে কেবলমাত্র বিএনপির চেয়ারপারসনের বিষয়টিই সামনে এসেছে। আর বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় আইনজীবীদের মধ্যে তাকে ঘিরেই সব জল্পনা-কল্পনা। এ কারণেই জয়নুল আবদীন ও মাহবুব উদ্দিনের বিরোধিতা করে পাল্টা প্যানেল ঘোষণা করা হয়।  বারবার তাদের দুজনের প্রার্থিতার কারণে আইনজীবীদের মধ্যে নতুন নেতৃত্বের সংকট তৈরি হয়। এ কারণে তরুণ আইনজীবীরা চেয়েছেন, আগামী নির্বাচনে নতুন নেতৃত্ব সামনে আসুক।

যদিও শুক্রবার বিএনপির সিনিয়র নেতারা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে নতুন প্রার্থী ঠিক করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেননি। বিশেষ করে নতুন প্রার্থী নির্ধারণে রিস্ক থাকায় পুরনো দু’জনকেই বেছে নিয়েছেন তারা।

বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী নয়, খালেদা জিয়ার বিষয়টিই বেশি প্রাধান্য পাবে ভোটারদের কাছে। আর এ কারণে নতুন প্রার্থী হলেও ভোটারদের কাছে তারা নগন্য বিষয় হিসেবে চিহ্নিত হতো।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে শুক্রবার রাতে জানান, প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। আইনজীবীদের যুক্তি একদিক থেকে সঠিক হলেও রিস্ক নিতে চাননি বেশিরভাগ নেতারা। আর এ কারণেই পুরনো দুজনকে ফের প্রার্থী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্রোহী অংশটির নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর খন্দকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ম্যাডাম এখন কারাগারে, তার প্রতি সম্মান রেখে আমরা একমত হয়েছি। সবকিছু মিটমাট হয়ে গেছে। কোনও সমস্যা নেই।’

মির্জা ফখরুল ছাড়াও শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, আগামী ২১ ও ২২ মার্চ (বুধ ও বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির  ভোটগ্রহণ  অনুষ্ঠিত হবে।

/এসটিএস/এসএসএ/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
নাগরিক জীবনের সব ক্ষেত্রে পুলিশের অবস্থান রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
মহাকাশে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধে জাতিসংঘের ভোটে রাশিয়ার ভেটো
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
তামাক কর বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ তরুণের অকালমৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না
ভুল সময়ে ‘ঠিক কাজটি’ করবেন না