X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির জন্য এলডিপিকে যেতে হয় কম্পিউটারের দোকানে

আদিত্য রিমন
১০ মার্চ ২০১৮, ১২:০৮আপডেট : ১০ মার্চ ২০১৮, ১৭:০৬

এলডিপির কার্যালয় নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের নেতৃত্বাধীন এই রাজনৈতিক দলটি রাজনীতিতে মোটামুটি সক্রিয়। বছরের বিভিন্ন সময়ে একক বা জোটভাবে সভা, সেমিনার, মানববন্ধন কর্মসূচির মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা প্রকাশ করে দলটি। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গ্রেফতার হওয়ার পর একাধিক আলোচনা সভা ও ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে এলডিপির সরব উপস্থিতি দেখা গেছে।  তবে দলটির সাংগঠনিক কাঠামো এখনও মজবুত নয়। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) জাতীয় কাউন্সিল। এর ১৬ মাস পার হয়ে গেলেও এখনও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৫১ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সদস্য আছেন ১৫৪ জন। শুধু তাই নয়, দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ডিজিটালের ছোঁয়া লাগেনি। কার্যালয়ে নেই কোনও কম্পিউটার। এখনও গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাতে তাদের ভরসা করতে হয় কম্পিউটার দোকানের ওপর।

এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৫৪ জন আছেন। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার প্রক্রিয়া চলছে। আর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগে কম্পিউটার ছিল। সেটির সমস্যা হওয়ার পর এখনও নতুন কম্পিউটার কেনা হয়নি।’ এলডিপির কার্যালয়

নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব স্তরে ৩৩ শতাংশ নারী থাকতে হবে। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বর্তমানে নারী সদস্য ১০ শতাংশেরও কম জানা গেছে। শাহাদাত হোসেন সেলিমও বিষয়টি স্বীকার করেন নিয়েছেন।

নির্বাচন কমিশনের ১ নম্বর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এলডিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এফডিসির পাশে রাজধানীর পূর্ব পান্থপথে। একটি বাণিজ্যিক ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে সেখান থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এলডিপির কার্যালয়

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ে ওঠার সিঁড়ি অন্ধকার ও স্যাঁতস্যাঁতে। কার্যালয়ে ঢোকার মুখে ময়লা-আবর্জনাসহ পুরাতন পোস্টার ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। কার্যালয়ের ভেতরে কথা বলছিলেন দলটির প্রচার সম্পাদক ও একজন কর্মচারী। ফ্লোরটির একটি অংশে গ্লাস দিয়ে বিভক্ত করে দু’টি কক্ষ করা হয়েছে। এর একটি দলের চেয়ারম্যানের ও আরেকটি ব্যবহার করেন মহাসচিব। চেয়ারম্যানের কক্ষে এসি আছে, আছে একটি টেবিল ও কয়েকটি চেয়ার। মহাসচিবের কক্ষের টেবিলের ওপর বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

এই দুই কক্ষ বাদে ফ্লোরের বাকি অংশ পার্টির সংবাদ সম্মেলন, সেমিনার বা দলীয় মিটিংয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়।  সেখানে শতাধিক চেয়ার, দুইটি টেবিল ও কয়েকটি সোফাসেট রয়েছে। তবে কার্যালয়ে কোনও কম্পিউটার নেই। গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠাতে হয় কম্পিউটারের দোকান থেকে। এ কার্যালয়টি দলের আরও চারটি সহযোগী সংগঠনও ব্যবহার করে থাকে।

দলের প্রচার সম্পাদক মো. বিল্লাল হোসেন জানান, ২০০৯ সাল থেকে এটি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কার্যালয়ে দলের সংবাদ সম্মেলন, বৈঠক ও অঙ্গসংগঠনগুলোর বৈঠক করা হয়। আর মহাসচিব অসুস্থ হয়ে বিদেশে থাকায় তার কক্ষের এই অবস্থা হয়েছে।

এলডিপির কার্যালয়

এক প্রশ্নের জবাবে বিল্লাল বলেন, ‘দলের কোনও অনুষ্ঠান হলে বাইরের কম্পিউটার দোকান থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।’

জানা গেছে , রাজধানীর এফডিসি মোড়ের এই কার্যালয়ে তেমন একটা আসেন না দলের প্রেসিডেন্ট ও মহাসচিব। শুধু তা-ই নয়, দলের অন্য নেতাকর্মীরাও নিয়মিত আসেন না। যদিও দলটির নেতাদের দাবি, যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে কার্যালয়ে কম আসেন নেতাকর্মীরা।

এ প্রসঙ্গে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘দলের প্রেসিডেন্ট কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসেন। এর বাইরে তার মহাখালী ডিওএইচএসের বাড়িতে নেতাকর্মীরা আসা-যাওয়া করেন। অন্যদিকে মহাসচিব ও তার স্ত্রী বছরের বেশিরভাগ সময় অসুস্থ থাকেন। এ কারণে কার্যালয়ে কম আসেন। এখনও মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন বলে জানান তিনি।

এলডিপির কার্যালয়

যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে অন্য নেতাকর্মীরা কার্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না বলে দাবি করছেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘তবে সপ্তাহে দু’দিন নেতারা অফিস আসেন। এর বাইরে দলের বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ের সময়ও কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা আসেন।’

দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, প্রাথমিক সদস্য থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাসিক চাঁদা হবে দলের অর্থের উৎস। কিন্তু দলটির স্থায়ী কোনও আর্থিক তহবিল নেই। যে কোনও আলোচনা সভা বা অনুষ্ঠান থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিব ও যুগ্ম মহাসচিবসহ অন্য নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার খরচের সংস্থান করা হয়। দলের স্থায়ী তহবিল না থাকার কথা স্বীকার করেন দলের শীর্ষস্থানীয় এই নেতা। বলেন, ‘আমাদের কোনও অনুষ্ঠান থাকলে উপস্থিত সবাই মিলে চাঁদা দিয়ে করা হয়।’

দলটির নেতারা দাবি করেছেন, সারাদেশে পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক মিলিয়ে ৪৫টি জেলা ও মহানগরে কমিটি আছে এলডিপির। চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর ও দলের সাবেক এমপিদের এলাকায় দলটি সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী বলেও দাবি তাদের।

বগুড়ার জেলার এলডিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলা কমিটি ১০১ সদস্যের। তবে এখানে দলের কোনও কার্যালয় নেই। নিজের অফিসকে দলের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।’ এলডিপির কার্যালয়

বর্তমান সংসদে কোনও জনপ্রতিনিধি নেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির। দলের নেতারা জানান, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছে ৩০টি আসন দাবি করা হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-১৪ থেকে দলের প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, কুমিল্লা-৭ থেকে মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, লক্ষ্মীপুর-১ থেকে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর-১ থেকে আগামী নির্বাচন করার সব ধরনের প্রস্তুতি আমার আছে। এলাকায় আমি সবসময় কাজ করে যাচ্ছি।’

দলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বলেন, ৬০টিরও বেশি জেলায় আমাদের কমিটি আছে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ বলেও তিনি জানান। তাহলে দলের ওয়েবসাইটে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা নেই কেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওয়েবসাইটে আপডেট দেওয়া হয়নি।’

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে অলি আহমদ বিএনপি ছেড়ে নতুন দল এলডিপি গঠন করেন। এর আগে, জিয়াউর রহমান বিএনপি গঠন করার পর সেনাবাহিনীর চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেন অলি আহমেদ। তখন তার আরও ৯ বছর চাকরি ছিল। এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে যোগাযোগমন্ত্রী হয়েছিলেন অলি আহমদ।

 

/এইচআই/টিআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
জাতীয় পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস আর নেই
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ