X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতার এড়াতে মাঠে নামছে না বিএনপি!

আদিত্য রিমন
০৪ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৫৫আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০১৮, ২০:৫৪

বিএনপি

কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মুহূর্তে রাজপথে কঠোর আন্দোলনে যেতে চায় না বিএনপি। চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইসহ আরও কিছুদিন শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যেতে চায় দলটি। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি গ্রেফতারসহ পুলিশি হয়রানি এড়াতে এ কৌশল নিয়েছে বিএনপি। দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ মনোভাবের কথা জানা গেছে।

বিএনপি নেতারা জানান, তারা সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বা তাদের আন্দোলনে জনসমর্থন নেই—এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও কৌশলগত কারণে সাময়িক সময়ের জন্য ‘সফট’ নীতি অনুসরণ করছে। তারা মনে করছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় চেয়ারপারসনকে মুক্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এ সময় নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা গেলে তাদের জনমর্থন বাড়বে। তবে এতে ফল না হলে বছরের মাঝামাঝি সময় কৌশল পরিবর্তন করা হবে।

দলটি মনে করে, এ বছরের মাঝামাঝি সময় পার হলে পুরোদমে নির্বাচনি হাওয়া বইতে থাকবে। নির্বাচন দোরগোরায় আসায় তখন সরকারও কিছুটা দুর্বল থাকবে। তখন আন্দোলন গড়ে তুললে তার ফসল ঘরে তোলা সহজ হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এরপর বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীদের টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত রবিবারও (১ এপ্রিল) লিফলেট বিতরণের সময় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফরহাদ হালিম ডোনারকে আটক করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তারপরও দলীয় সিদ্ধান্তে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আমাদের লক্ষ্য বেগম জিয়াকে মুক্ত করে আগামী নির্বাচনে যাওয়া। তাই আগামী নির্বাচনের এখনও অনেক সময় বাকি আছে। ধাপে ধাপে বিএনপির কর্মসূচি আরও বেগবান হবে।’ বিএনপি সবসময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পক্ষে বলে দাবি করেন খন্দকার মোশাররফ।

এই মুহূর্তে কঠোর আন্দোলনে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সরকার তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার সুযোগও দিচ্ছে না। প্রতিনিয়ত তাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। বেগম জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর গত দেড় মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মুহূর্তে কঠোর আন্দোলনে গেলে সরকার হার্ডলাইনে চলে যাবে এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা, গ্রেফতার, নির্যাতন বহুগুণে বেড়ে যাবে। এজন্য তারা এখনই হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিতে না গিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দেশনেত্রীর কারাবন্দি করার পর থেকে সারাদেশ থেকে বিএনপির পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ মার্চ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন দুঃসময় চলছে। এটা বিএনপির জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য দুঃসময়। সারাদেশে আমাদের নেতাকর্মীদের মামলার সংখ্যা ৭৮ হাজার। আসামির সংখ্যা ১৮ লাখের বেশি। এর অর্থ কি আগামী নির্বাচন থেকে বিএনপিকে বাইরে রাখা?’

বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গ্রেফতার এড়ানোর কৌশল বলতে অবশ্য রাজি নন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান। তিনি বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার পরও প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে একজন কারাগারে মারাও গেছেন।’

আহমেদ আজম খানের ভাষ্য, প্রতিটি আন্দোলনের কিছু ধাপ থাকে। এই মুহূর্তের বাস্তবতা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া। এ বাস্তবতা শেষে হলে নতুন কর্মসূচি আসবে। দেশের ভেতরে কিন্তু একটা গণজাগরণ তৈরি হয়েছে। এরপর সরকার যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে বিএনপি ধাপে ধাপে কঠোর আন্দোলনে যাবে।

বিএনপির অনেকে মনে করেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে ও পরের বছর রাজনৈতিক সহিংসতার কারণেই পিছিয়ে পড়ে বিএনপি। আর অতীত-উপলব্ধি থেকেই বিএনপির কৌশল পরিবর্তন করা করেছে। এছাড়া শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে দলের শুভানুধ্যায়ীদের আগে থেকেই একটি পরামর্শ রয়েছে। একইসঙ্গে এ বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা থাকায় তাদের মূল লক্ষ্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে যতটা সম্ভব সম্পৃক্ত থেকে নির্বাচনের লক্ষ্যে ছুটছে বিএনপি।

এ প্রসঙ্গে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সরকারই তাদের লোক দিয়ে জ্বালাও-পোড়াও করে বিএনপির ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে। আর সেজন্যই আমরা এবার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে ধীরে ধীরে মানুষকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করবো।’

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে, এরপর নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, মামলা ও গ্রেফতার করা বন্ধ নেই। তারপরও আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’

 

 

 

 

/এসটিএস/এইচআই/আপ-এসটি/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া