X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর

আদিত্য রিমন
১১ মে ২০১৮, ০১:৩০আপডেট : ১১ মে ২০১৮, ২১:১৩

খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি) গৃহবধূ থেকে রাজনীতিতে আসার ৩৪ বছর পূর্ণ হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। ১৯৮৪ সালের ১০ মে কাউন্সিলের মাধ্যমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপির চেয়ারপাসন নির্বাচিত হন তিনি। এরপর থেকে দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করে আসছেন এ নেত্রী। বিএনপি চেয়ারপারসনের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছেন খালেদা জিয়া।

তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বর্তমানে তিনি পুরান ঢাকার কারাগারে বন্দি। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছিল স্বামী জিয়াউর রহমানকে হারানোর বেদনা, আর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ৩৪ বছরে এসে নিজেই বন্দি হয়ে আছেন কারাগারে। কারাবন্দি এ নেত্রীর রাজনীতির ৩৪ বছর উদযাপনে শুক্রবার (১১ মে) নয়াপল্টনে দলের কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি।

রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর উপলক্ষে বিএনপির প্রকাশিত পোস্টার থেকে নেওয়া ছবি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতির ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১০ মে) বিকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আজকে একটি বিশেষ দিন। এই দিনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে আসেন। তিনি রাজনীতিতে আসার পর থেকে দেশ এবং গণতন্ত্রের জন্য অনেক সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য এ জাতির, সেই গণতন্ত্রের নেত্রী আজ কারাগারে বন্দি।’ খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করুন।’

চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ১৯৮৩ সালে সাত-দলীয় জোট গঠন করে জেনারেল এরশাদের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম শুরু করে। এরশাদের স্বৈরশাসন অবসানের লক্ষ্যে পরিচালিত দীর্ঘ সংগ্রামে খালেদা জিয়া অবৈধ এরশাদ সরকারের সঙ্গে কোনও প্রকার আপোস করেননি। বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞামূলক আইনের দ্বারা তার স্বাধীন গতিবিধিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আট বছরে সাত বার অন্তরীণ করা সত্ত্বেও জেনারেল এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত কারার আন্দোলনে সক্রিয় নেতৃত্ব দেন খালেদা জিয়া।

৩৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহুবার সংকটের মুখে পড়েছেন খালেদা জিয়া। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর বিশেষ করে ২০০৮ সালের পর থেকে আদালতের আদেশে যেমন তার স্বামীর সময়ে পাওয়া বাড়ি হারাতে হয়েছে, তেমনি ছোট সন্তান আরাফাত রহমান কোকোর লাশও তাকে দেখতে হয়েছে। ২০১৫ সালে ৩ মাসের অবরোধ চলাকালে তার বিরুদ্ধে আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগ ওঠে। যদিও বিএনপির নেতারা বরাবরই বলে এসেছেন, ‘আগুন সন্ত্রাস ক্ষমতাসীনদের কৌশল।’  

জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ মনে করেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে দেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী তিনিই। নির্বাচন করে কখনোই নিজের আসনে হারতে হয়নি বিএনপির চেয়ারপারসনকে।’

জানা যায়, দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বিগত দিনের সাফল্য তুলে ধরলেও আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত। বিএনপি গত তিন মাস ধরে তার মুক্তি দাবি করলেও, নির্বাচনে তিনি আদৌ অংশ নিতে পারবেন কিনা- এই প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রায় প্রতিদিনই বলে আসছেন, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার প্রথম শর্ত খালেদা জিয়ার মুক্তি। তাকে মুক্তি না দিলে এই দেশে কোনও নির্বাচন হতে পারে না।’  

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে নাজিম উদ্দিন রোড়ের পুরানা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। আগামী মঙ্গলবার আপিলবেঞ্চে তার জামিন শুনানির কথা রয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সারা বাংলাদেশ জনপ্রিয়তম নেত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের কোটি কোটি মানুষ তার মুক্তির অপেক্ষার প্রহর গুণছে। তার নেতৃত্বেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রচার বিভাগ থেকে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুর জেলার জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ইস্কান্দার মজুমদার ব্যবসা উপলক্ষে জলপাইগুড়িতে বসবাস করতেন। তার আদি নিবাস ছিল ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর জলপাইগুড়িতে চা ব্যবসা ছেড়ে তিনি দিনাজপুর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

দিনাজপুর মিশনারি স্কুলে খালেদা জিয়া প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন এবং পরে ১৯৬০ সালে দিনাজপুর বালিকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ওই বছরই তৎকালীন ক্যাপ্টেন (পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রপতি) জিয়াউর রহমান সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বর্তমানে তিনি লন্ডনে আছেন। আর ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়া একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। খালেদা জিয়া বর্তমানে নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

উল্লেখ্য, রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার ৩৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘দেশনেত্রীর রাজনীতি, সংগ্রাম ও সফলতা’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১১ মে) বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

/এসটিএস/এএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ভুয়া অবিবাহিত সনদের মেয়াদ বাড়াতে গিয়ে ধরা পড়লেন এক ব্যক্তি
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
ঢাকায় ‘র‌্যাম্পে হাঁটলো’ উট, ঘোড়া, কুকুরসহ বিভিন্ন পোষা প্রাণী
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি