X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইফতার পার্টির মাধ্যমে বিভেদ দূর করতে চায় বিএনপি

আদিত্য রিমন
২৯ মে ২০১৮, ১৭:০৬আপডেট : ২৯ মে ২০১৮, ২৩:১৭

বিএনপি রমজানকে কেন্দ্র করে দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত বিএনপি। ইফতার পার্টির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। পুলিশি বাধার মুখে বারবার রাজপথে কর্মসূচি গড়ে তুলতে ব্যর্থ হওয়া বিএনপি রমজানে ইফতার পার্টিকে দল গোছানোর কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছে। এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একাধিক ইফতার পার্টির অনুষ্ঠানের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়েও এই আয়োজন করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাধ্যমতো যত সংখ্যক সম্ভব ইফতার পার্টি আয়োজন করার।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের বাধার কারণে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলের অভ্যন্তরীণ বিভেদ দূরা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই রমজানে ইফতার পার্টির মাধ্যমে দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করে বিভেদ দূর করে সাংগঠনিক শক্তি বাড়ার কাজ চলছে। ঈদের পরে আবারও আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন জেলার কমিটিগুলো ঠিক করা হচ্ছে। বিভিন্ন ইফতার পার্টির মাধ্যমে জনসংযোগ করা হচ্ছে। কারণ, অন্যভাবে করার সুযোগ নেই। 

বিএনপির আয়োজনে ইফতার পার্টিতে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট এ কিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুরোদমে আমাদের সাংগঠনিক কাজ চলছে। সরকার তো আমাদের সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তাই ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইফতার মাহফিলে মাধ্যমে আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হচ্ছে।    

এদিকে, ইফতারকে কাজে লাগিয়ে নিজ দলের পাশাপাশি শরিক ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। ইতোমধ্যে শরিকদের একাধিক ইফতারে অংশ নিয়েছেন বিএনপির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা। দীর্ঘদিন সম্পর্কের টানাপড়েনে থাকা বিকল্পধারা ও যুক্তফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও বিএনপির ইফতারে অংশ নিয়েছে। যুক্তফ্রন্টের ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেতারাও অংশ নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকেও একাধিকবার এই আহ্বান করা হয়েছে। ইফতারের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়াটা ভালো হচ্ছে, যা আগামীতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে কাজে আসবে।   

বিএনপি নেতারা বলছেন, রমজানের মধ্যে নিজেদের মধ্যকার কোন্দল বা বিভেদ থাকলে মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে গতিশীল করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ইফতার মাহফিলের আগে নেতাকর্মীদের নিয়ে বর্ধিতসভা বা বৈঠক করে স্থানীয়ভাবে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো মিটমাট করার চেষ্টা চলছে। তবে কোথাও স্থানীয়ভাবে বিভেদের সমাধান করা না গেলে তা নোট করে কেন্দ্রের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে, যাতে করে ঈদের পরে সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল করা যায়।  

রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বাংলা ট্রিবিউন বলেন, আমরা রাজশাহী মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ডে ইফতারের আয়োজন করছি। এরমধ্যে দলের মধ্যকার বিভেদ দূর করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করছি।    

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার নির্বাচনি এলাকা ঠাকুরগাঁও ঘুরে এসেছেন। সেখানে তিনি স্থানীয় বিএনপির ইফতার মাহফিলে অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়া বিএনপির সব কেন্দ্রীয় নেতারা পর্যায়ক্রমে তার নির্বাচনি এলাকায় ঘুরে আসছেন। সেখানে দলের নেতাদের সঙ্গে ইফতার করছেন। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক বিষয়ে নজর দিচ্ছেন। কোথাও কোনও সমস্যা থাকলে তা স্থানীয়ভাবে মেটানোর চেষ্টা করছেন। আর স্থানীয়ভাবে বিরোধ মেটানো সম্ভব না হলে নোট নিয়ে দলের মহাসচিবের নজরে আনা হচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের নির্বাচনি এলাকায় ইফতার মাহফিল করছেন। নিজ এলাকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডগুলো দেখছেন তারা। আবার বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিলে যাচ্ছেন, সেখানকার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। যেসব জায়গায় সাংগঠনিক জায়গায় দুর্বলতা বা ক্রটি আছে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ করাও হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে কোনও সমস্যা মেটানো না গেলে কেন্দ্রীয় মহাসচিব (মির্জা ফখরুল) বরাবর নোটিশ আনা হচ্ছে। এরপর কেন্দ্র থেকে তা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা কাজগুলো করছি।   

বিএনপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও কয়েকজন নেতা জানান, লন্ডন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের জেলা কমিটিগুলোর সমস্যা সমাধানের পাশাপশি ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ, বিএনপির সব থানা এবং ওয়ার্ডের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার। এছাড়া যেসব অঙ্গসংগঠনের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তাদের সম্মেলন করে নতুন কমিটি করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। যেসব সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে কিন্তু কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির দফতর সম্পাদক এবিএম আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তরের আওতাধীন ২৬টি থানা ও ৫৬টি ওয়ার্ডের কমিটি প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী ৩০ মে সেই তালিকা লন্ডনে পাঠানো হবে। এরপর যেকোনও দিন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে।         

 

 

/এএইচআর/টিএন/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!