X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিতে আ.লীগের ৬৯ বছর

আদিত্য রিমন
২২ জুন ২০১৮, ২৩:৪৪আপডেট : ২৩ জুন ২০১৮, ১৩:৩৪

আওয়ামী লীগ দেশের প্রাচীনতম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ৭০ বছরে পদার্পণ করছে ২৩ জুন। দীর্ঘ এই সময়ে নানা বাঁক পেরিয়েছে দলটি। উত্থান-পতনের পাশাপাশি দেশের ইতিহাসের অনেক কিছুর সাক্ষীও আওয়ামী লীগ।

এই সময়ে শুধু স্বাধীনতা অর্জনই নয়, বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল ও মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যেতে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিশ্বে বাংলাদেশকে দিয়েছে উন্নয়নের রোল মডেলের পরিচিতি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করে জাতিকে করেছে কলংকমুক্ত। অন্যদিকে, পোহাতে হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা, ৩ নভেম্বরের জেলহত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো বিপর্যয়। পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এই নিয়ে তৃতীয়বার এবং টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। ঐতিহ্যবাহী দলটির এই ৭০ বছরের রাজনীতিকে নিজেদের মতো করে বিশ্লেষণ করেছেন বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদরা।

১৯৪৯ সালের এইদিনে ঢাকার গোপীবাগে রোজ গার্ডেন থেকে এই রাজনৈতিক দলটির পথচলা শুরু। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের রাজনীতি সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এক কথায় বলতে চাই, আওয়ামী লীগের ৭০ বছরের রাজনীতি দুটি অংশে ভাগ করতে হবে। একটা অংশ হচ্ছে–৭১ সালের আগের রাজনীতি। অন্য অংশ– ৭১ সালের পরের রাজনীতি। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু স্বাধীনতার পর যখন ক্ষমতায় ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে তারা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে ১৯৭৫ সালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ সেই আওয়ামী লীগ একই অবস্থায় দেশের গণতন্ত্রের সমস্ত স্তম্ভকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। জনগণের অধিকারগুলো হরণ করছে। আমাদের সন্দেহ হয়, আসলে এই সরকার আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে নাকি অন্য কেউ! কারণ, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে এতো দেউলিয়া আমি ভাবতে চাই না।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের ৭০ বছর বিরাট অবদান রেখেছে গণতন্ত্র ও বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। কিন্তু তারা বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা দিতে, জনগণকে একটা শান্তিময়, স্বস্তিময় রাষ্ট্র উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা আশা করবো, ৭০ বছর পূর্তিতে আওয়ামী লীগের বোধোদয় হবে তাদের যে অতীত ঐতিহ্য তা রক্ষা করার। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করার ক্ষেত্রে জনগণের ইচ্ছা পূরণ করবে তারা।’  

যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ.কিউ.এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘খুব সংক্ষেপে যদি বলি, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে পুরনো দল। পুরনো গণতান্ত্রিক দল। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ক্রমে দেশে যেভাবে গণতান্ত্রিক বিকাশ হওয়ার দরকার ছিল, তা করতে পারেনি তারা। তা হলে দেশের জনগণের সঙ্গে আমিও খুশি হতাম। তারপরও আওয়ামী লীগের জন্য শুভকামনা থাকবে আমার।’

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের মধ্যে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা দেশে একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে পূর্ব বাংলায় অপশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তারা। যদিও মধ্যে কিছু ক্রটি বিচ্যুতি ছিল তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরবর্তীকালে শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ দফা পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা স্বাধিকারের পক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে।  ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর ১৯৭১ শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্ব বাংলাদেশেকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছে। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের ইতিহাস খুব একটা সুখকর ছিল না। এ কারণে দেশের স্বাধীনতার প্রথম সাড়ে তিন বছরে অনেক দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি হয়েছে। এর খেসারতও দিতে হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছে এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ দূর করেছে। এখন ধারাবাহিক উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যধিক দূরদৃষ্টি রয়েছে।’

মেনন বলেন, ‘সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মধ্যে আমরা এক ধরনের বড়লোকের রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ লক্ষ্য করছি। সেখানে কিছু অসুস্থ আচরণও রয়েছে। তারপরও আমি বলবো ৭০ বছরের যাত্রায় বাঙালি ও বাঙালির ইতিহাসের পুরোটার সঙ্গেই ছিল আওয়ামী লীগ। তার উত্থান-পতন ও অগ্রগতি মধ্যে দিয়ে দেশের অগ্রগতি হয়েছে।’    

জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল। এ দল প্রথম বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন শুরু করে। পরে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করে ইতিহাসে তাদের অবস্থান গৌরবোজ্জ্বল করেছে। আশা করি সামনের দিনগুলোতে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে।’ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শুভ কামনা জানান তিনি।

আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই দলের যাত্রাটা গৌরবময় ছিল। দীর্ঘসময় জনগণের অধিকার আদায়ের জন্যে গণতন্ত্র, সাম্য, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। এজন্য দলটা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু দলটি যখন ৭০ বছরে পর্দাপণ করেছে তখন এ দলের চেহারা খুবই কিম্ভুতকিমাকার। দলের চেহারা কুৎসিত আকার ধারণ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা। তাদের ডাকে ও নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। কিন্তু এখন সেই দল জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে, দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিনষ্ট করেছে, সেই দল উন্নয়নের নাম করে মূলত লুটপাটতন্ত্র কায়েম করেছে। সবকিছু মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এখন একটা গভীর খাদে পড়ে গেছে। যে আওয়ামী লীগকে নিয়ে গর্ব করা যেত, এটা সেই আওয়ামী লীগ নয়। সেই খাদ থেকে আওয়ামী লীগকে উঠতে হলে, দেশের গণতন্ত্রকে সেই জায়গায় পৌঁছাতে হবে। আর এ কাজটা তাদেরই করতে হবে। আমি আওয়ামী লীগের ৭০ বছরে সেই কামনা করি।’

/এএম/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
পথের পাশের বাহারি শরবতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা?
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
মন্ত্রণালয়ে সভা করে ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে: কৃষিমন্ত্রী
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
লাগাতার তাপদাহে যশোরে জনজীবন দুর্ভোগে
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ