X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে তৃণমূলের সঙ্গে বর্ধিত সভা করছেন শেখ হাসিনা

পাভেল হায়দার চৌধুরী
২৯ জুন ২০১৮, ২২:৫৯আপডেট : ৩০ জুন ২০১৮, ১৯:৫৬

শেখ হাসিনা টানা ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কেন্দ্রের সৃষ্ট দূরত্বের কথা কমবেশি সবারই জানা। এই দূরত্ব তৈরির নানা কারণও এরই মধ্যে অবহিত হয়েছে দলের শীর্ষ পর্যায়। মূলত এই দূরত্ব ঘোচাতে বর্ধিত সভা করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। অন্যদিকে তৃণমূলের সঙ্গে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আগামীদিনের পরিকল্পনা ভাগাভাগি করতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী সংসদ নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে তৃণমূল নেতাদের সক্রিয় করার কোনও বিকল্প নেই। তাই তৃণমূলকে সরাসরি নির্দেশনা দিতে গণভবনে জাঁকজমকপূর্ণ বর্ধিত সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলীয় সভাপতি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে দলের প্রাণশক্তি হিসেবে বিবেচিত একেবারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের গণভবনে ডাকা হয়েছে। গত ২৩ জুলাই জেলা ও থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে বর্ধিত সভার আয়োজন করে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আগামীদিনের পরিকল্পনা ভাগাভাগি করেন শেখ হাসিনা। এবার সারাদেশের প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড নেতাদের সঙ্গে রাজনৈতিক পরিকল্পনা ভাগাভাগি করতে আরও দুটি বর্ধিত সভার আহ্বান করেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে শনিবার (৩০ জুন) সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, উপদেষ্টা পরিষদ, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন প্রতিটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত দলীয় চেয়ারম্যান, মহানগরের অধীন সংগঠনের প্রতিটি ওয়ার্ডের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দলীয় নির্বাচিত কাউন্সিলার এবং জেলা পরিষদের নির্বাচিত দলীয় সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।আগামী ৭ জুলাই বাকি ৪ বিভাগের ইউনয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগরের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সঙ্গে বর্ধিত সভার দিন নির্ধারণ করেছেন তিনি।


জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাসহ ও ক্ষমতাকেন্দ্রীক হওয়ায় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে কেন্দ্রের, তা দূর করতেই তৃণমূল নেতাদের গণভবনে ডেকেছেন শেখ হাসিনা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দলের তৃণমূল নেতাদের তিনি একটাই বার্তা দিতে চান, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার বাইরে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং সবাইকে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে বৃহৎ স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ থাকতে নির্দেশনা দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করেছে, তৃণমূলের সঙ্গে বর্ধিত সভার মাধ্যমে শেখ হাসিনা বার্তা দিতে চান তৃণমূল ঠিক থাকলে দল বাঁচবে। শেখ হাসিনা মনে করেন, দলের জাঁকজমকপূর্ণ সব অনুষ্ঠানেই তৃণমূল নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হন। তাদের গণভবনে প্রবেশাধিকারেও নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। তাছাড়া তারা ঢাকায় আসতেও পারেন না সবসময়। তিনি এ-ও অনুধাবন করেন মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হয় তৃণমূল নেতাদের। ফলে ক্ষমতাকেন্দ্রীক যে দূরত্ব তৃণমূলের সঙ্গে দেখা দিয়েছে তা ঘোচাতে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন করেছেন তিনি। এর আগে জেলা-থানার নেতাদের সঙ্গে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হলেও একেবারে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রথম বর্ধিত সভা এটি।

গণভবন সূত্র জানায়, গণভবনে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকা, কীভাবে তারা প্রবেশ করবেন, কীভাবে আতিথিয়েতা করা হবে— এসব শেখ হাসিনা নিজেই তদারকি করছেন। তার তত্ত্বাবধানে তৃণমূল নেতাদের মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে সে বিষয়টিতেও মনযোগ রয়েছে তার।
আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করেন, তৃণমূলের সঙ্গে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ সংগঠনের জন্যে মাইলফলক হয়ে থাকবে। গত ১০ বছর ক্ষমতায় থাকায় নানা কারণে দলের ভেতরে অনৈক্য-দূরত্বের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে মাথায় নিয়ে এসব দূর করতে শেখ হাসিনা নিজেই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
তারা বলেন, বর্ধিত সভার মাধ্যমে তৃণমূল নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হবেন। চাঙ্গা হয়ে উঠবে তৃণমূলের রাজনীতি। শেখ হাসিনার নির্দেশনার পরে দলের অভ্যন্তরে থাকা অনৈক্য-দূরত্বও ঘুচে যাবে। এর বাইরে যেসব এলাকায় এমপি-মন্ত্রীরা দলের তৃণমূল নেতাদের মর্যাদা-সম্মান দেন না সেসব এমপি-মন্ত্রীরা সতর্ক হবেন গণভবনে এ সভার কারণে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা সবসময়ই তৃণমল নেতাদের দলের প্রাণশক্তি মনে করেন। এ কারণেই বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে তাদের মর্যাদা দিতে চান তিনি। পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশীদারিত্ব আরও বাড়ানো এবং আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে দলকে প্রস্তুত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন শেখ হাসিনা।’

তিনি বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ড তৃণমূল নেতাদের উৎসাহিত করবে। দলের অভ্যন্তরে থাকা নানা অনৈক্য দূর হয়ে যাবে।’
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) সবসময় তৃনমূল নেতাদের সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করেন। সারাদেশের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানানোর মধ্য দিয়ে এর প্রমাণ মেলে।’ তিনি বলেন, ‘এই বর্ধিত সভাগুলো সারাদেশের আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে গতিশীল করে তুলবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের সম্মানিত করছেন। এতে করে তারা উৎসাহিত হবেন। সংগঠনের অভ্যন্তরে গতি আসবে।’
দলের উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, ‘তৃণমূলের নেতারা গণভবনে আসবেন, তাই তাদের মর্যাদা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই সবকিছু তদারকি করছেন।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা সবসময়ই তৃণমূল নেতাদের আওয়ামী লীগের প্রাণশক্তি বলে মনে করেন। ফলে তাদের গণভবনে ডেকে সাংগঠনিক বিষয়াদি আদান-প্রদান করবেন দলীয় সভাপতি।’

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া