সরকারকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপির সব দাবি মেনে নেওয়া আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। বিএনপির দাবিগুলো হচ্ছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং সব রাজবন্দির মুক্তি।
সোমবার ( ১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে বিএনপি নেতারা সরকারের কাছে এসব দাবি তুলে ধরেন।
মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাচ্ছি। এটা কোনও করুণা নয়, কোনও দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি না। তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। অবশ্যই তাকে মুক্তি দিতে হবে, মুক্তি তার আইনগত প্রাপ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে।’
খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনও নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘তাকে মুক্তি দিলে বোঝা যাবে সরকার দেশে একটা নির্বাচন চায়।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সকাল ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টা থেকে মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু হলেও সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন নেতাকর্মীরা। মানববন্ধনে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ বাস চলাচলের ব্যবস্থা করে দেয়। এছাড়া, মানববন্ধন ঘিরে বিপুল পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রেসক্লাবের সামনে পুলিশের এপিসি ভ্যান ও জলকামানও রাখা ছিল। নেতাকর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে মানববন্ধন শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট আগেই তাড়াহুড়ো করে প্রেসক্লাব এলাকা ত্যাগ করেন।
সরকার সংসদকে প্রহসনে পরিণত করেছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘তারা গৃহপালিত বিরোধী দল রেখে সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। সরকার প্রশাসনকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে রেখেছে। দুর্ভাগ্য, তারা বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করতে সব ধরনের চেষ্টা করছে।’
সরকার সারা দেশে কিছু ভৌতিক মামলা দিয়ে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনপির ১২ হাজারের মতো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। সারা দেশে নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। এভাবে খুন, গুম ও মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যায় না।’
সরকারকে দানব উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দানবকে সরাতে হবে। তার জন্য সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে একটি সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এ সরকার একটি সন্ত্রাসী সরকারে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সারা দেশে তারা সন্ত্রাস করছে। একদিকে তারা হুমকি দিচ্ছে, অন্যদিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে গোড়া জাতিকে জিম্মি করে রেখেছে।’
এই সরকারকে চলে যেতে হবে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তাদের দিন শেষ হয়ে এসেছে। কারণ, জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। সুতরাং এখন আমাদের দরকার ইস্পাত কঠিন ঐক্য। আমাদের জনগণের ও সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে এই দানব সরকারকে সরিয়ে দিতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মিথ্যা বানোয়াট মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়ার পরও তাকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। সরকারের উদ্দেশ্য খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে পাঁচ জানুয়ারির মতো ক্ষমতা দখল করা। কিন্তু দেশের মানুষ খালেদা জিয়া, বিএনপি ও ২০ দলকে ছাড়া কোনও নির্বাচন হতে দেবে না।’
সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন মোশাররফ। তিনি বলেন, ‘তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে যেকোনও পরিস্থিতির দায় সরকারকে নিতে হবে।’
বিএনপির দাবি মেনে নেওয়া না হলে দেশে কোনও নির্বাচন হবে না এবং হতে দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। তাকে মুক্ত করে গণতন্ত্রের লড়াই এগিয়ে নিয়ে, সব দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, মো. শাহজাহান, বরকতউল্লাহ বুলু, সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকনসহ বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের নেতারা মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।
মানববন্ধন শেষে বিএনপির ৩০ থেকে ৪০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে বলে অভিযোগ করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী।