X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বন্ধে সাংবিধানিক সংস্কার চায় যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া

সালমান তারেক শাকিল
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:৫৭আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০৩

 

আ স ম আবদুর রবের বাসায় যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতাদের বৈঠক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। বৃহস্পতিবার রাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় তারা একমত হয়েছেন দুটি বিষয়ে। প্রথমত, এখন থেকে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করবে। এর মধ্যে প্রত্যেকটি প্রোগ্রামে বি চৌধুরী, কামাল হোসেন, আসম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না একযোগে অংশ নেবেন। দ্বিতীয়ত, আগামী শনিবার জোটের দফা ও প্রস্তাব ঘোষণা করা হবে। এই প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে যুক্তফ্রন্টের ৯ দফা ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ৭ দফাকে সমন্বয় করে। এই সমন্বিত দফার মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাব হচ্ছে ক্ষমতায় গিয়ে ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ বন্ধে সাংবিধানিক আমূল সংস্কার চায় যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

যুক্তফ্রন্টের ৯ দফার প্রথম দফায় আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতটি উপধারা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা, তফসিলের আগেই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনি রোডম্যাপ নির্ধারণ, নির্বাচনের একমাস আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, বর্তমান সরকার বাতিল করা, নির্বাচনের ১ মাস আগে ও ১০ দিন পর পর্যন্ত ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করা, ইভিএম বাতিল, নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। নির্বাচনে নির্বাচনকালীন সরকারের কোনও ব্যক্তি অংশ না নেওয়া। এরপর ২ নম্বর দফায় রয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তিন নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এই মুহূর্ত থেকে সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী গ্রেফতার বন্ধ করা। কোটা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের মামলা প্রত্যাহার করা। চার নম্বর দফায় বলা হয়েছে, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ করা। পাঁচ নম্বর দফা অনুযায়ী,  সরকার, সংসদ, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা। ছয় নম্বর দফা অনুযায়ী, ক্ষমতার কার্যকর বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা। সাত নম্বর দফায় বলা হয়েছে, জাতীয় স্বার্থে তেল, গ্যাস-বিদ্যুৎ বন্দরসহ জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। আট নম্বর দফায় অনুযায়ী  ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে কেউ যেন ‘স্বেচ্ছাচারিতা’ না করে, সে জন্য প্রচলিত রাজনীতি, রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা ও সংবিধানের আমুল সংস্কার সাধন করা। সবশেষ নয় নম্বর দফা মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনে কূটনৈতিক প্রক্রিয়া জোরদার করা।

ইতোমধ্যে ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সাত দফা প্রকাশিত হয়েছে। এই দফাগুলোর মধ্যে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত সংবিধানের প্রাধান্যকে সমুন্নত করে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে। স্বাধীন ও ক্ষমতাসম্পন্ন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হবে। পণমুখী প্রশাসন তৈরি করা, রাষ্ট্রের আর্থিক শৃঙ্খলা আনা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন বন্ধ এবং মিয়ানমার থেকে আসা শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার। 

এরমধ্যে যুক্তফ্রন্টের নয় দফার সঙ্গে ড. কামালের সাত দফার মিল রয়েছে কয়েকটি দফায়।

দুই জোটের নেতারা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের নয় ও সাত দফার সমন্বয় করা হবে। শনিবার সকাল ১১টায় সমন্বিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

জানতে চাইলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া একসঙ্গে কাজ করবে। যৌথ কর্মসূচি প্রণীত হবে। এরপর শনিবার ঘোষণা হবে। এই কর্মসূচি রাজপথের নয়, থিউরিক্যাল কর্মসূচি।’

জোটের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের নেতা ডা. জাহেদ উর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘শুক্রবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নেতারা বসে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত করবেন।’

বৈঠকসূত্র জানায়, আগামী ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে যোগ দেবেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা। শুধু এই সমাবেশই নয়, আগামী দিনে সব কর্মসূচিতেই তারা অংশ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

 বৃহস্পতিবার রাতে রাত সাড়ে আটটার দিকে আ স ম রবের উত্তরার বাড়িতে বৈঠক শুরু হয়। রাত পৌনে দশটার দিকে বৈঠক শেষ হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিকল্প ধারার সভাপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি সভাপতি আ স ম রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সুলতান মনসুর আহমেদ প্রমুখ।

বৈঠক শুরুর আগে আসম রব সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জাতীয় ঐক্যের পক্ষ থেকে দ্রুতই কর্মসূচি দেওয়ার চেষ্টা থাকবে।

উল্লেখ্য, এই যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গেই যৌথভাবে প্রকাশ্যে আসবে বিএনপি। ইতোমধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ড. কামাল ও মাহমুদুর রহমান মান্নার একাধিকবার বৈঠক হয়েছে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী দিনে যৌথভাবে কর্মসূচিতে আসার বিষয়ে তাদের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
চতুর্থ ধাপে যে ৫৫ উপজেলায় ভোট
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচন ৫ জুন
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সোনার দাম ভ‌রিতে কমলো ৩ হাজার টাকা
সর্বাধিক পঠিত
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
সকাল থেকে চট্টগ্রামে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না ডাক্তাররা, রোগীদের দুর্ভোগ
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী