X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিচারপতি সিনহার বইয়ের তথ্য বিবেককে দংশন করে: অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৩:৩৫আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:০৪




সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) তার বইয়ে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের বিষয়ে যে তথ্য দিয়েছেন তা আমাদের বিবেককে দংশন করে। তার বইয়ে উঠে আসা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিচার বিভাগের ওপর চাপ ও নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়টি জাতিকে বিস্মিত করেছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

শুক্রবার সকালে (২১ সেপ্টেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনটির আয়োজন করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।

সাবেক প্রধান বিচারপতির লিখিত বই ‘A Broken Dream- Status of Rule of Law, Human Rights and Democracy’, যা ইতোমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং যেখানে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। তার দাবি, জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগও করানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, তারা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়টি নিজেদের পক্ষে নিতে চেয়েছিলেন এবং বিচার বিভাগকে পূর্ণ করায়ত্ত করতে চেয়েছিলেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা প্রচণ্ড চাপের মুখেও ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন। রায়ের পর সরকার পক্ষের লোকেরা পার্লামেন্টে এবং বিভিন্ন সভা সমাবেশে তার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই চাপের মুখে নত হননি। এ কারণে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতির মাধ্যমে তার (এস কে সিনহা) সঙ্গে একই এজলাসে না বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওই চার বিচারপতির মধ্যে পরে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এমএ ওয়াহহাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি (এম এ ওয়াহহাব মিঞা) বিচারপতি সিনহাকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি আমাদের বলেছেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে, তাই আমরা আর আপনার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে চাই না। বিচারপতি ওয়াহহাব মিঞার এই বক্তব্যও ছিল সংবিধান পরিপন্থী। তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিচারপতি সিনহা অটল ছিলেন। কিন্তু সরকার চাপ প্রয়োগ করে সিনহাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং পরবর্তীতে তাকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করা হয়।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা আইনজীবীরা তখন জাতির সামনে পরিষ্কার করেছি যে বিচারপতি সিনহা অসুস্থ নন এবং তখনই বলেছিলাম ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বিচারপতি সিনহাকে এ ধরনের চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন করা হয়েছে। নিম্ন আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না বা পরিচালিত হচ্ছে না। দেশের মানুষ আজ অসহায়।’

বাংলাদেশে বর্তমান বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের চাপের মুখে রয়েছে। অর্থাৎ বিচার বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন।

জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের পর খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে ওই রায়টিও (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেওয়া হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন, সদস্য আহসান উল্লাহ, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামসহ বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা।

/বিআই/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন-রামাফোসার ফোনালাপ
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
ভিসা-পাসপোর্ট হারিয়ে প্রবাসী অজ্ঞান, ৯৯৯-এ কলে উদ্ধার
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
উত্তর কোরিয়া সফর করলেন রুশ গোয়েন্দা প্রধান
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর যেতে সময় লাগবে ৪৪ মিনিট