X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিগগিরই বিএনপির সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্যের রোডম্যাপ

সালমান তারেক শাকিল ও আদিত্য রিমন
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২২:৩৭আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৬

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নাগরিক সমাবেশে ঐক্যপ্রক্রিয়া ও বিএনপির নেতারা সদ্য অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া’র সফল নাগরিক সমাবেশের পর নির্বাচনকেন্দ্রিক কর্মসূচি-দাবিগুলোকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। পাশাপাশি এই দলগুলো ঐক্যপ্রক্রিয়াকে আরও বড় পরিসরে বাস্তবায়ন করতে বিএনপিকেও যুক্ত করতে চায়। এ লক্ষ্যে শিগগিরই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নাগরিক সমাবেশে কয়েকটি বিষয়ে সবগুলোর দলের নেতাদের বক্তব্যেই ঐকমত্য দেখা গেছে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করার দাবিতে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেওয়া, কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তি, কোটা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিগুলো নেতাদের কণ্ঠেই উচ্চকিত ছিল।  

ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা বলছেন, সমাবেশে আমন্ত্রিত রাজনীতিকদের বক্তব্যে প্রায় ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। এখন এই চিন্তার ঐক্যকে রাজপথে বাস্তবায়ন করাই মূল কাজ বলে মনে করছেন অনেকে। এরইমধ্যে শনিবার সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ঐক্য একধাপ এগিয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া জোটের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন তো বিভিন্ন দল যারা আমাদের সুর মেলাচ্ছে, তাদের সঙ্গে কথা বলবো যে,  কীভাবে এই দাবিগুলোকে মানুষের কাছে নিয়ে যাবো। জাতীয় ঐকমত্য হলে তো সরকার দাবিগুলোকে মানবে। আমার তো মনে হয়, আমরা যা বলছি, তা সবারই কথা। সংগঠিতভাবে, একত্রে, গণমাধ্যমে বলতে হবে—এটাই প্রথম পদক্ষেপ। এরপরই কর্মসূচির বিষয়।’

শনিবারের সমাবেশ প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘মানুষের মধ্যে লক্ষ করুন, তাদের যাতায়াতের জন্য বাস বা কোনও যানবাহন দেওয়া হয়নি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসেছে। দূরদুরান্ত এসেছে। এত মানুষ হবে, ভাবতে পারি না। তারা তো সোচ্চার হয়েছে। তারা পরিবর্তন চায়। আগামী নির্বাচনকে তারা অংশগ্রহণমূলক দেখতে চায়।’

নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন একিউম বদরুদ্দোজা চৌধুরী

 

কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা, বিএনপির সঙ্গে রোডম্যাপ

তিনদলীয় যুক্তফ্রন্টের নেতারা রবিবার একটি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। আগামীতে সারা দেশে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যপ্রক্রিয়ার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। রবিবার বিকল্প ধারার সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুকের কার্যালয়ে জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কেন্দ্রীয় নেতা স্বপন, নাগরিক ঐক্যের ডা. জাহেদ উর রহমান, মমিনুল ইসলাম, আতিকুর রহমান এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তবে, ওই বৈঠকে গণফোরামের কেউ ছিলেন না।

বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, আগামী ১ অক্টোবর চাঁদপুর ও ময়মনসিংহে ৭/৮ অক্টোবর সমাবেশ করার চিন্তা করছে যুক্তফ্রন্ট। পাশাপাশি সিলেটে জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া সমাবেশ আয়োজন করবে। এতে অংশ নেবেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা।

নাগরিক ঐক্যের  নেতা জাহেদ উর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে আলোচনা করেছি। শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে।’

যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) নাগরিক সমাবেশে মানুষের বিপুল উপস্থিতি, সিনিয়র রাজনীতিকদের বক্তব্য ও আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া—সব মিলিয়ে ইতিবাচক অবস্থানে আছে পুরো বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়া। বিএনপির দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, ঐক্যকে পুরো অবয়ব দিতে এখন বিএনপিকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দেশ, বিদেশ, দল ও জোটের মধ্যে সমন্বয় রেখে বৃহত্তর ঐক্যপ্রক্রিয়াকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

যুক্তফ্রন্ট সূত্র বলছে, ইতোমধ্যেই সমাবেশের পর জোটের নেতারা শনিবার রাতেই ফলোআপ বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে আগামীতে নির্বাচনের দাবিগুলোকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সমাবেশে ওঠে আসা দাবিগুলো ও বক্তব্যগুলো সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। সাধারণ মানুষকে দাবিগুলোর প্রতি উৎসাহিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে এই সচেতনতা কোনও ব্যানারে প্রচার করা হবে, এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশেষ করে শনিবার সমাবেশে বিপুল উপস্থিতির পেছনে বিএনপির নেতাকর্মীদের ভূমিকা মাথায় রেখেই পরিকল্পনা তৈরি করছেন যুক্তফ্রন্টের নেতারা। এক্ষেত্রে এখনপর্যন্ত কর্মসূচি নির্ধারণ না হওয়ায় আলোচনা আরও কয়েকদিন চলবে। শিগগিরই বিএনপির সঙ্গে জরুরি আলোচনা শুরু করার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে দলটি একজন সিনিয়র নেতার পক্ষ থেকে।

নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ড. কামালা হোসেন

 

এদিকে, শনিবার সমাবেশের পর করণীয় নিয়ে রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর)   ঘরোয়াভাবে বৈঠক করেছেন ড. কামাল হোসেন। এদিন রাতে তার বেইলিরোডের বাসায় গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কয়েকজন নেতারা মিলিত হন।  সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছে; এই জাতীয় ঐক্য জেলা উপজেলা গ্রামেও পৌঁছে দিতে হবে।’

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় জনগণ ঘরে ছিল। এখন আগামী আন্দোলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণকে ঘরের বাইরে এনে আন্দোলনের পথে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসবো।’

সমাবেশে খুশি বিএনপি, পুনর্গঠিত হচ্ছে আইনজীবীদের ফোরাম

রবিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি বৈঠক করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ড. কামাল হোসেনের ডাকা নাগরিক সমাবেশ বিএনপির অংশগ্রহণকে ইতিবাচকভাবে মূল্যায়ন করেছেন দেলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। লন্ডনে থাকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার সন্তুষ্টির কথা নেতাদের জানিয়েছেন।

সিনিয়র নেতাদের সূত্র জানায়, শনিবারের সমাবেশে ড. কামাল হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্য কয়েকজন নেতার বক্তব্যে বিএনপি নেতারা  খুশি।

বৈঠকে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জাতীয় ঐক্যের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে জবাবে আরেকজন সদস্য জানান, ‘ডেভেলপম্যান্ট সো ফার, সো গুড। বিশেষ করে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেনের ঘোষণায় তার সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার দাবিটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে বিএনপি। ঐক্যপ্রক্রিয়া ভালোই এগুচ্ছে।’ 

নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, ‘আগামীতে এসব সমাবেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আরও জোর দেওয়ার পরামর্শ এসেছে। এছাড়া যৌথভাবে কর্মসূচি ও বিএনপির আলাদা কর্মসূচি দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বৈঠকে জাতীয় ঐক্য ও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’

রবিবারের বৈঠকে আরও একটি সিদ্ধান্ত হয় দলীয় আইনজীবীদের সংগঠনটিকে পুনর্গঠন করার। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও জেলাপর্যায়ে জজ কোর্টে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটিগুলো নবায়ন করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবদীন, নিতাই রায় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা