X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তফ্রন্ট-ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে মিল রেখেই বিএনপির দাবি-লক্ষ্য

সালমান তারেক শাকিল
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২৩:৫৭আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০৪

 

দলের জনসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা (ছবি: ফোকাস বাংলা) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তৎপর রয়েছে। এরইমধ্যে সেপ্টেম্বরের শুরুতে যৌথ ও এককভাবে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া। আর রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করে রাজনৈতিক দাবি-লক্ষ্য জানিয়েছে, যার মধ্যে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দাবি ও লক্ষ্যগুলোর প্রায় সবটাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

রবিবার জনসভায় বিএনপি নেতারা সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে নানা কথা বলেছেন। তারা আশাবাদী হওয়ার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। দলটির সিনিয়র নেতারা জোর দিয়েই বলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে। জনসভায় মির্জা ফখরুল বিএনপির যে লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন, তার শেষটিতেও এ বিষয়ে বলা হয়েছে, সব প্রতিহিংসার রাজনীতির অবসানে জাতীয় ঐকমত্য গঠন করা। গত কয়েকমাস ধরে বিএনপির অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল—বিকল্প ধারা, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ বাম দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করে আসছে একটি ঐকমত্য গড়ে তুলতে। ২২ সেপ্টেম্বর  ড. কামাল হোসেনের ডাকা নাগরিক সমাবেশে সাড়ম্বরে যোগ দিয়েছেন বিএনপির নেতারা। ওই সমাবেশে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ভাষ্য ছিল, চিন্তার ঐক্য হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন রাজপথের ঐকমত্য। যদিও বিকল্প ধারার ‘বিএনপিকে জামায়াত ছেড়ে আসতে হবে’—এমন শর্তে আটকে আছে ঐক্যের বাকি পথটুকু।

পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিএনপিঘোষিত সাত দফা দাবি ও ১২ দফা লক্ষ্যে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দাবি ও লক্ষ্যগুলো এসেছে। শুধু খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ছাড়া বাকি বিষয়ে দারুণ ঐকমত্য রয়েছে ‍দুটি তালিকায়। যদিও ড. কামাল হোসেনের নাগরিক সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির চেয়ারপারসনের সঙ্গে ‘ন্যায়সঙ্গত আচরণ’ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বলা হয়। কোনও-কোনও দফা ও লক্ষ্যে ভাষাগত ও শব্দগত মিলও পাওয়া গেছে পর্যালোচনায়।

বিএনপির ৭ দফায় বলা আছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই ১. দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ২. জাতীয় সংসদ বাতিল করা, ৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা, ৪. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা, ৫. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা, ৬. যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যব্ক্ষেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সম্পূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যব্ক্ষেণে তাদের ওপর কোনও ধরনের বিধি-নিষেধ আরোপ না করা।, ৭. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনি ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনও মামলা না দেওয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করার নিশ্চয়তা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্র-ছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবে ঘোষিত যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যের দাবিগুলো হচ্ছে, ১। আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে সকলের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা অর্থাৎ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।, ২। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ৩। ‘কোটা সংস্কার’ এবং ‘নিরাপদ সড়ক’ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-ছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না। ৪। নির্বাচনের একমাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করতে হবে।  ৫। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধনের মাধ্যমে গণমুখী করতে হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

বিএনপিঘোষিত দাবিতে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না’—এ বিষয়টি নেই।

বিএনপির ১২ দফা লক্ষ্য হচ্ছে, ১. রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা, ২. রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা, ৩. রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা, ৪. স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারক নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, ৫. স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও আধুনিক, শক্তিশালী ও কার্যকর করা, ৬. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, ৭. কঠোর হস্তে দুর্নীতি দমনের লক্ষ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও অধিকতর কার্যকর করা, ৮. সব নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা, ৯. ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—এই মূলনীতিকে অনুসরণ করে জাতীয় মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণ করে স্বাধীনতা পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। বিশেষ করে প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা।, ১০. কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদকে প্রশয় না দেওয়া এবং কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেওয়া, ১১। ক) নিম্নআয়ের নাগরিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিত করা, দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বেতন-মজুরি নির্ধারণ ও আয়ের বৈষ্যম্যের অবসানকল্পে সমতাভিত্তিক নীতি গ্রহণ করা ও সবারর জন্য কর্মসংস্থান, শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার-ভাতা, সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ও পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্যবীমা চালু, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষির সম্প্রসারণের লক্ষে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ও আধুনিক করা, খ) স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক এবং উচ্চশিক্ষা সহজলভ্য করার লক্ষ্যে জীবনমুখী শিক্ষানীতি চালু করা, প্রযুক্তি-বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ে মানব সম্পদের উৎকর্ষ সাধন করা, জাতীয় উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা নিশ্চিত করা, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জীবন, সম্ভ্রম ও সম্পদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গ) তৈরি পোশাক শিল্পের অব্যাহত উন্নয়ন এবং শিল্প ও রফতানি খাতকে বহুমুখী করা, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে উন্নয়নের ধারাকে গ্রামমুখী করা, বৈদেশিক কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ, ঝুঁকিমুক্ত ও প্রবাসী জনগোষ্ঠীর ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতিভার বিকাশ ও তাদের আধুনিক চিন্তা চেতনাকে জাতীয় উন্নয়নে কাজে লাগানোর জন্য শিক্ষা, তথ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া।

যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে বলা হয়েছে, ১) বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তি কেন্দ্রীক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদসহ যুগোপযোগী সংশোধন করা এবং জনগণের ক্ষমতায়ন ও সুশাসন নিশ্চিত করাসহ সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দোলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা। ২)  দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে দুর্নীতিকে কঠোর হাতে দমন এবং ইতিপূর্বে দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে। ৩) দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতাসহ রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগদানের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগত্যা হিসেবে বিবেচনা করা। ৪) কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারী অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা। ৫) জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতি ও দলীয়করণের কালো থাবা থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কাঠামোগত সংস্কার সাধন করা। ৬) রাষ্ট্রের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনগণের আর্থিক স্বচ্ছলতা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা নিশ্চিত, জাতীয় সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। ৬) জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন, প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা, নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল ও কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা। ৮) ‘সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে  শত্রুতা নয়’—এই নীতির আলোকে জনস্বার্থ ও জাতীয় নিরাপত্তাকে সমুন্নত রেখে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা এবং প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পারিক সৎ প্রতিবেশীসুলভ বন্ধুত্ব ও সমতার ভিত্তিতে ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ও বিনিয়োগ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৯) বিশ্বের সব নিপীড়িত মানুষের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত ও পুনর্বাসনের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমর-সম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার আগেই বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দাবিগুলোকে বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি দাবি ও প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবে। এক্ষেত্রে দাবির মধ্যে খালেদা জিয়া যে বিষয়গুলোকে সামনে রেখে নির্বাচন সুষ্ঠু করার কথা বলেছিলেন, সে বিষয়গুলোই সবার মধ্যে এসেছে।’

যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার নেতারা বলছেন, বিএনপি তালিকা প্রস্তুত করার আগেই বি চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আসম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকের পরামর্শ নিয়েছে। আলোচনা করেছে। তালিকা আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে দলীয় প্রস্তাবটিকে একটি সুষম জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে বি চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, বৃহত্তর ঐক্যের সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির আগে বিএনপির জনসভার ঘোষণা তিনি শুনতে চান। ফ্রন্টের নেতারা বলছেন, বিএনপির দাবিগুলোকে জনমানুষের দাবির পরিস্ফূটন ঘটেছে। আগামীতে ঐক্যের বাস্তবায়নে তা ভূমিকা রাখবে।

যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা তো খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছি। তাদের বক্তব্য আজ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু তারা তো আমাদের সমাবেশে এসেছেন, কথা বলেছেন। আমরা যেমন আশা করেছিলাম, তাই হয়েছে। এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে নৈতিক অবস্থানগত ঐক্য ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করি, এটা রাজনৈতিকভাবে, কর্মসূচি ও কাঠামোগতভাবে সামনে এগিয়ে যাবে।’

জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আবম মোস্তফা আমীন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএনপির দাবিগুলো আমি পুরোপুরি শুনিনি। তবে তাদের সঙ্গে কাজ করার কথা তো চলছেই।’

এদিকে, যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার দায়িত্বশীল একাধিক নেতা মনে করেন, বিএনপির সমাবেশে অন্য কোনও দলকে না ডাকার মধ্য দিয়ে একলা চলার একটা ইঙ্গিত থাকতে পারে। বিশেষ করে আলোচনাবিহীন ৩ ও ৪ অক্টোবর কর্মসূচি দিয়ে দেওয়ার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ।

জোটের একাধিক সূত্রের ভাষ্য, একক কর্মসূচি দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিএনপিতে ঐক্য নিয়ে এখনও সমস্যা রয়েছে—এটিরই প্রমাণ করে। ইতোমধ্যে শীর্ষ দুয়েকজন নেতা বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে কথাও বলেছেন। এই কর্মসূচি দেওয়াকে একজন নেতার মনে করছেন, ‘বিএনপির বাড়াবাড়ি, তাদের তো স্বাধীনভাবে কর্মসূচি দেওয়ার কথা ছিল না। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেওয়ার কথা।’

জোটের একজন নেতা বলেন, হয়তো তারা যুগপৎ চায়, সে কারণে এককভাবে কর্মসূচি শুরু করেছে।

যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার একজন শীর্ষ নেতা যদিও মনে করছেন, এগুলো প্রাথমিক বিষয়। আলোচনা শুরু হলেই থেমে যাবে। ঐক্য কার্যকর করতে বিএনপিরই বেশি আগ্রহ।

এই বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র কোনও নেতা  বলতে রাজি হননি।

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!