২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ‘ফরমায়েশি রায়’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
বুধবার (১০ অক্টোবর) দুপুর ১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক। ক্ষমতাসীন দলের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই রায় দেওয়া হয়েছে। জাতির দুর্ভাগ্য এই যে সরকার তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে। তাই, এই রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি বলেন, দেশবাসী জানেন যে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারই এই ঘটনার প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মামলা দায়ের করেছিল। স্থানীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এফবিআই ও ইন্টারপোলকে সম্পৃক্ত করেছে। বিএনপি সরকারই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছিল। এসব তদন্ত বা আওয়ামী লীগ সরকারের আন্দোলনের ফসল ১/১১ সরকারের আমলে তদন্ত প্রতিবেদনের কোথাও তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি ওই সময়ে ১৬১ ধারা অনুযায়ী তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে দেওয়া জবানবন্দিতে কারারুদ্ধ শেখ হাসিনা তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি। ৬২ জন সাক্ষীর কেউই তারেক রহমান বা বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করেননি বা বিএনপির নামও উচ্চারণ করেননি। ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে হেয় প্রতিপন্ন, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদাপন্ন করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে এটাকে একটা রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করে তোলে। উল্লেখ্য যে বিএনপি সরকারের সময় অবসরে পাঠানো পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহার আকন্দ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং করেছেন। পোস্টার লিফলেট করেছেন। এসবই তৎকালীয় জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের একজন নেতা জেনেই ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। এই নতুন তদন্ত কর্মকর্তাই মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে সীমাহীন অকথ্য অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে বানানো এক জবানবন্দিতে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তী সময়ে মুফতি হান্নান আদালতে তার সেই কথিত জবানবন্দি এই মর্মে প্রত্যাহার করে যে তিনি তারেক রহমানকে চেনেন না। তার সঙ্গে কখনও কথা হয়নি। এবং জানান, তাকে অত্যাচার করে এই মামলার জবানবন্দিতে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এই মামলার অন্য কোনও সাক্ষঅ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কোনও কথা না বলায় ও মুফতি হান্নান তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করায় এই মামলায় তারেক রহমানের আর কোনও সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও আজ তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হলো যে কোনও নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ায় দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার কথাই প্রমাণিত হয় যে যেদেশে প্রধান বিচারপতিই সুবিচার পান না সেদেশে কোনও নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
এ সময় সরকারকে অনির্বাচিত উল্লেখ করে এই সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে প্রতিষ্ঠার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ সিনিয়র নেতারা।
আরও পড়ুন:
রায়ে আমরা অখুশি না: ওবায়দুল কাদের
‘তারেক রহমানসহ ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁসির দাবিতে উচ্চ আদালতে যাবো’
রায় ‘ফরমায়েশি’, বিএনপির প্রত্যাখ্যান
বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, তারেকের যাবজ্জীবন
‘রায়কে ঘিরে নৈরাজ্য সৃষ্টির কোনও ধরনের সুযোগ নেই’
তারেকের পূর্ণ সহযোগিতায় হামলাকারীরা কাজ করে: মুফতি হান্নান
