X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

আ. লীগ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সফল, সুশাসন-গণতন্ত্র-গণমাধ্যম প্রশ্নে সমালোচিত

মাহবুব হাসান
২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৯আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:২৩

আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার (২০০৮ ও ২০১৪)

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই মেয়াদে নির্বাচনি ইশতেহারের শিরোনাম—২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’, আর ২০১৪ সালে ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। এর মধ্যে ২০০৮ সালের ইশতেহারের শিরোনাম দিয়েই বাজিমাত করে আওয়ামী লীগ। এর সঙ্গে ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের কনসেপ্ট, আর ‘আমাদের বর্তমান তোমাদের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করলাম’ উক্তিটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে ফের মানুষের মন জয় করে নেয় দলটি।

শাসক দলের টানা দুই মেয়াদের পড়ন্ত বেলায় এসে রাজনৈতিক বিশ্লেষক, গবেষক এবং পর্যবেক্ষকরা ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগকে পুরোপুরি সফল না বললেও দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে এই দুটি ইশতেহারের ভূমিকার কথা অস্বীকার করছেন না কেউই।

পরিসংখ্যানের দিক থেকে দেখলে সরকার দুই মেয়াদে ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির প্রায় ৮০ থেকে ৯০ ভাগ সফল। তবে বড় বড় কিছু ইস্যুতে আশানুরূপ সফলতা অর্জিত হয়নি। ২০১৪ সালের ইশতেহার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়— এতে লক্ষ্য ও ঘোষণা হিসেবে মোট ৮৬টি পয়েন্ট আছে, যার অন্তত ৭৪টি পয়েন্টেই সরকার সফল হতে পেরেছে— কোনোটাতে শতভাগ ভাগ, আবার কোনোটাতে একটু কম। বাকি নয়টি প্রতিশ্রুতিও অনেকাংশে সফল। আর মাত্র তিনটি পয়েন্টের সফলতা ও অগ্রগতি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা আছে।

আওয়ামী লীগের রূপকল্প ২০২১

২০১৪ সালের ইশতেহারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল— ‘রূপকল্প ২০৪১’। এছাড়া, ইশতেহারে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল— সুশাসন, গণতন্ত্র, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, কৃষি, ধর্মীয় স্বাধীনতা,দারিদ্র্যের হার ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, নগরায়ণ, পরিকল্পতি উন্নয়ন, ১০ হাজার থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। সেই সঙ্গে ২০৪১ সালের মধ্যে বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রে বাংলাদেশকে উন্নীত করার মেগা প্রতিশ্রুতিও আছে এই ইশতেহারে।

সফল প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ, নিম্ন-মধ্য আয়ে উন্নীত হয়েছে দেশ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। দেশের অবকাঠামো খাতে উন্নয়ন হয়েছে। ব্যাংকিং খাতের লুটপাট বন্ধ করতে না পারলেও অর্থনীতিতে সাফল্য এসেছে, দুর্নীতি কমেছে, দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা এসেছে। এছাড়া, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হয়েছে অনেকাংশে।

নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নের মাধ্যমে আরও সফলতা এসেছে— শিল্পখাতের ঈর্ষণীয় অগ্রগতি। বন্ধ হওয়া কলকারখানাগুলো চালু হতে শুরু করেছে। নতুন শিল্প কলকারাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকগুলো অর্থনৈতিক অঞ্চল (জোন) সৃষ্টি করেছে সরকার। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতেও সাফল্যের পথে এগিয়েছে সরকার। কর্মসংস্থান বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, কৃষি, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে সাফল্য লক্ষ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে। নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। সরকার বড় ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে মাদক নিয়ন্ত্রণে এনেছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। শ্রমিক ও প্রবাসী কল্যাণে আছে প্রশংসিত উদ্যোগ। মুক্তিযুদ্ধ, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও রয়েছে সরকারের সফলতা। কিন্তু গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রশ্নে বড় ধরনের সমালোচনা আছে সরকারের বিরুদ্ধে। শেষ সময়ে এসে গণমাধ্যম প্রশ্নে সম্পাদক পরিষদসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে পড়েছে সরকার।বিচার বিভাগ,আইনের শাসন, শক্তিশালী নির্বাচন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, সংবিধান, সংসদ এবং জাতীয় ঐকমত্যের প্রশ্নে সরকারের প্রভূত সমালোচনা রয়েছে।

সাবেক প্রধান বিচারপিত এস কে সিনহার পদত্যাগ, বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার, নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনি ব্যবস্থা নিয়ে অনেকের আপত্তি, সংসদে বড় একটি রাজনৈতিক দলের অনুপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলের নানা বক্তব্য আছে।

এদিকে, ২০০৮ সালের ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতিসহ পাঁচটি বিষয় অগ্রাধিকারে ছিল। এর মধ্যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং বিশ্বমন্দা মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রশ্নে দ্রব্যমূল্য, বিশ্বমন্দা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং দারিদ্র্য ঘোচাও, বৈষম্য রুখো ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়। ২০০৮-২০১৩ মেয়াদে এসব পয়েন্টের মধ্যে সুশাসন ছাড়া সবক্ষেত্রেই সরকার সফল হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রংপুরে নতুন বিভাগ গঠন করা হয়। শিল্পবাণিজ্য, শিক্ষা ও বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, শ্রমনীতি, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিরক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং পররাষ্ট্র নীতিতেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায় সরকার। কিন্তু এ মেয়াদেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য-প্রবাহ প্রশ্নে সরকারের সমালোচনা ছিল।

যদিও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ মনে করেন, আওয়ামী লীগ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল, তার সবটাই বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত সবকটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন হয়েছে। দেশের মানুষ শান্তিতে আছে।’

তবে নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নে সরকার অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুদার।তিনি বলেন,‘সরকারের প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল সুশাসন, গণতন্ত্রায়ণ ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। এখানে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সরকার  উন্নয়নে এগিয়ে গেলেও আমরা গণতন্ত্রে পিছিয়ে আছি। গণতন্ত্রের ভিত শক্তিশালী না হওয়ার কারণে সরকার অনেক ক্ষেত্রে সফল হতে পারছে না। সুশাসনেও সরকার পিছিয়ে পড়ছে।’ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু হচ্ছে, অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পও বাস্তবায়ন হচ্ছে।’

/এমএইচবি/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু’ গানের স্রষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি