X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা - ৫

মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল ময়মনসিংহ বিভাগ বিএনপিতে

আদিত্য রিমন
০৪ নভেম্বর ২০১৮, ২৩:৫০আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৫০



মনোনয়ন নিয়ে কোন্দল ময়মনসিংহ বিভাগ বিএনপিতে ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপির পাঁচ সাংগঠনিক জেলার মধ্যে চারটির কার্যক্রম চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। বাকি একটির কমিটি হলেও সাত মাসেও সেটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি। এসব জেলার অধীনে থাকা উপজেলাগুলোর কমিটিরও অধিকাংশের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অবশ্য মেয়াদোত্তীর্ণ এসব জেলার নেতারা বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। হামলা-মামলার কারণে নেতাকর্মীদের পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও জেলা সম্মেলন করে নতুন কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না।


তবে এই বিভাগের অধিকাংশ জেলায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন, এটাকে দ্বন্দ্ব বলা যাবে না। সবাই নির্বাচন করতে চাইবে। কিন্তু দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে সবাই তার পক্ষেই কাজ করবে।
৫ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ জামালপুর জেলা কমিটি
সর্বশেষ ২০১১ সালের ৪ মার্চ জামালপুর জেলা বিএনপির কমিটি হয়। ওই সময় ফরিদুল কবির তালুকদার শামীমকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট ওয়ারেছ আলী মামুনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৩ সালের মার্চে কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে কমিটি হয়নি। ফলে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে চলছে এই জেলার সাংগঠনিক কার্যক্রম। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় এবং আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সার্বিক পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, গত বছর জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও খালেদা জিয়ার কারারুদ্ধ থাকা এবং দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করার কারণে কমিটি করা সম্ভব হয়নি।’
জামালপুর-১ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম। এছাড়া এই আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির সাবেক এমপি এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবং ২০০৮ সালে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন অংশ নেওয়া জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাহিদা আক্তার রিতা। এর ফলে আগামী নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এসব নেতার অনুসারীরাও দ্বিধাবিভক্ত।
জামালপুর-৫ (সদর) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন। এর পাশাপাশি এ আসন থেকে বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী সিরাজুল হক এবং নিলোফার চৌধুরী মনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। ফলে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্ব রয়েছে সদরের বিএনপির মধ্যেও। প্রত্যেক নেতার অনুসারীরা অন্যদের প্রতিপক্ষ মনে করছেন।

সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে চলছে শেরপুর জেলা
২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর মাহমুদুল হক রুবেলকে সভাপতি ও মো. হযরত আলীকে সাধারণ সম্পাদক করা হয় শেরপুর জেলা বিএনপির। এরপর ২১ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি হয়নি।
জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, ‘বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় বর্তমানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ অনেক নেতাকর্মী কারাগারে রয়েছেন এবং গ্রেফতার এড়াতে অনেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’ তবে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে শেরপুরের বিএনপি এখন অনেক শক্তিশালী দাবি করে তিনি বলেন, ‘দলে কোনও গ্রুপিং নেই। সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আমাদের সংগঠন রয়েছে।’
জোটের রাজনীতির স্বার্থে বিগত চার জাতীয় নির্বাচনে শেরপুর-১ আসনটি জামায়াতকে ছেড়ে দেয় বিএনপি। যে কারণে বিএনপির ‘ধানের শীষ’ না পেয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের হতাশা ছিল। কিন্তু জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির রায় কার্যকরের পর এবার এই আসনে বিএনপির প্রার্থী চায় স্থানীয় নেতারা। এই আসনে দলীয় মনোননয়প্রত্যাশী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. হযরত আলী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম। এই ‘হেভিওয়েট’ চার নেতার অনুসারীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে একধরনের বৈরিতা। প্রত্যেকেই চাইছে তার পছন্দের নেতা দলীয় মনোনয়ন পাক।
ময়মনসিংহ জেলা বিএনপি কমিটির মেয়াদ নেই ৩ বছর
ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির কমিটির মেয়াদ (২০১৫ সালে) শেষ হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে তিন বছর। নতুন জেলা কমিটির মুখ দেখেনি এলাকাবাসী। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম। কমিটি না হওয়ায় হতাশ নেতাকর্মীরাও। ফলে এই জেলায় তেমন কোনও আন্দোলন-সংগ্রামও নেই বিএনপির।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পরে ২০১২ সালে ১৮৪ সদস্যের জেলা বিএনপির কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। তিন বছর মেয়াদি জেলা বিএনপির মেয়াদ ২০১৫ সালে শেষ হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটি গঠনের অংশ হিসেবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো সম্পন্ন করা হলেও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলার কারণে কাউন্সিল করে কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। তবে এখন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই নেতাকর্মীদের মূল লক্ষ্য। ’
জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটি করার বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশ কিংবা তাগিদ আসার কথা থাকলেও সেই রকম তাগিদ লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে আগামী নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াকে মুক্ত করাই এখন সবার লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এখন নতুন করে কমিটি গঠনের সময় নেই।’ তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই আমরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবো।’
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক একেএম শফিকুল ইসলাম জানান, বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে কোন্দল থাকলেও বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে সেটা কিছুটা কমেছে। কমিটির মেয়াদ চলে যাওয়ায় এখন নেতারা দায়িত্ব নিয়ে মাঠের আন্দোলনে অংশ নেন না।
তিনি বলেন, ‘নতুন কমিটি অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রীয় কমিটির ওপর ন্যস্ত। কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগ নিলেই নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন কমিটির হলে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত থাকতো এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা হতো। তবে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার নিয়ে কোনও কোন্দল নেই।’
মেয়াদোত্তীর্ণ নেত্রকোনা কমিটিতে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব
নেত্রকোনা জেলা বিএনপি কমিটি মেয়াদ শেষ হয়েছে সাত মাস। কিন্তু নতুন কমিটি গঠনের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এখন নতুন করে কমিটি গঠনের কোনও চিন্তা নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও আগামী নির্বাচনই এখন মূল লক্ষ্য।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৯ মার্চ মো. আশরাফ উদ্দিন খান সভাপতি ও মো. আনোয়ারুল হক সাধারণ সম্পাদক করে ১৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী গত মার্চে কমিটির মেয়াদ শেষ হয়।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি আশরাফ উদ্দিন খান বলেন, ‘কমিটির মেয়াদ শেষ, এটা ঠিক আছে। তবে এখন আমাদের চিন্তা-চেতনা হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন জোরদার করা। এরপর দ্বিতীয় লক্ষ্য হচ্ছে আগামী নির্বাচন। বেগম জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর নির্দেশ দিলে জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দেওয়া হবে।’
নেত্রকোনা-২ আসনে আগামী নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ। এ নিয়ে দুই নেতা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘এটাকে ঠিক দ্বন্দ্ব বলা যাবে না। কারণ, দল যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে মনোনয়ন দেবে। সবাই তার পক্ষে কাজ করবে। আমি আগেও সংসদ সদস্য ছিলাম। এখন আমাকে দল মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।’

 

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
বেয়ারস্টো-শশাঙ্কে হেসেখেলে ২৬২ রান করে জিতলো পাঞ্জাব
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!