একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ইতিবাচক হলেও আবার নতুন করে তফসিল ঘোষণার দাবি জানাতে পারে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। শনিবার (১০ নভেম্বর) গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। তবে এর আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা এবং ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে নির্বাচনি কর্মকৌশলের খসড়া তৈরি করা হবে। এরপরই ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে তোলা হবে বিষয়গুলো।
অলি আহমদ ২০ দলীয় জোটের প্রধান সমন্বয়ক!
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার বিকালের দিকে নির্বাচনি কৌশল নির্ধারণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সন্ধ্যার পর ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে নির্বাচনি বার্তা দেবে দলটি। জোটের বৈঠকে নির্ধারণ করা হবে নতুন সমন্বয়ক, যে সমন্বয়ক ২০ দলীয় জোটের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে। ইতোমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ২০ দলীয় জোটের সম্ভাব্য প্রধান সমন্বয়ক হিসেবে এলডিপির সভাপতি কর্নেল অব. অলি আহমদ নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। গত ৮ নভেম্বর জোটের অসমাপ্ত বৈঠকে তিনি সভাপতিত্ব করেছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবরণের পর অলি আহমদ জোটে নিষ্ক্রিয় পড়ে পড়েন। তবে তার ফিরে আসাকে বিএনপি-জোট গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছে।
তফসিল নতুন করে ঘোষণার দাবি করতে পারে ঐক্যফ্রন্ট
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল একাধিক নেতার ভাষ্য, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট অংশ নেবে। এক্ষেত্রে নতুন করে তফসিল ঘোষণার দাবি জানানোর একটি সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই অনির্ধারিত কিছু বৈঠকে ঠিক করেছেন জোটটির নেতারা। আজকের বৈঠকে বিষয়টির চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে এবং নির্বাচনি কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হবে।
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক। আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী করণীয় কী হবে- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।’
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, ভুল পথে আর হাঁটছে না বিএনপি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোটগতভাবেই নির্বাচন করবে এবং নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগেই বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি হয়। এক্ষেত্রে নির্বাচনের বাইরে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া বা নির্বাচন বয়কট করা- এসব বিষয়কে আত্মঘাতি হিসেবে চিহ্নিত করছে বিএনপি। একইভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক। গত সপ্তাহেই ঐক্যফ্রন্টের নেতা, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘নির্বাচন ব্যাহত হয় এমন কোনও কর্মসূচি দেবে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জোটগত নির্বাচনের ক্ষেত্রে গণফোরাম বা ড. কামাল হোসেন কী সিদ্ধান্ত নেবেন, এ বিষয়টি এখনও পরিষ্কার হয়নি বলে জানান কয়েকজন নেতা। আজকের বৈঠকে বিষয়টি পরিষ্কার হবে, এমনটি আশা করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা জানান, আজকের বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয় প্রাধান্য পাবে। একটি হচ্ছে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার উপায়, দ্বিতীয়ত, আসনবণ্টনের কাজ এগিয়ে রাখতে সব দলকেই সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরির পরামর্শ বা কমিটি গঠন। তৃতীয়ত, নির্বাচন জোটগতভাবে করা হলে কৌশল কী হবে তা নির্ধারণ।
সোমবার কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হবে
আবারও দেশের চলমান ইস্যু নিয়ে ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকদের ব্রিফ করবে বিএনপি। তবে এটা দলীয়ভাবে নাকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে হবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ের সূত্রগুলো বলছে, গত ১ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বর ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সংলাপের বিষয়বস্তু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া প্রতিশ্রুতির বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে উত্থাপন করা হবে। কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ের বিষয়টি বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। গুলশানের বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ ব্রিফ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র বলছে, দু দফা সংলাপে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে যেসব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার, নতুন মামলা না করা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টির ওপর জোর দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণসহ কিছু কাগজপত্র কূটনীতিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আজকেও বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল রাজশাহীতে জনসভার আগে-পরে, ঢাকাসহ সারাদেশে গ্রেফতার চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা যে মাঠপর্যায়ে অকার্যকর, এ বিষয়টি বিএনপি কূটনীতিকদের জানাবে।
জানতে চাইলে বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা নিয়মিত কূটনীতিকদের ব্রিফ করি। আগামী সোমবারও ব্রিফ করবো। চলমান রাজনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে কথা বলবো।’
